নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জনসাধারণের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেল চারটায় রাজধানীর রামপুরা ব্রীজ এলাকায় আন্দোলনের ১১ দফা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের নয়। আমরা সর্বস্তরের জনগণকে এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে চাই। পাশাপাশি যতদিন দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হচ্ছে ততোদিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমরা জনসাধারণের মধ্যে ১১ দফার লিফলেট বিতরণ করছি। আমরা সর্বস্তরের জনগণের কাছে যাবো এবং আমাদের মতামত তুলে ধরছি। জনসাধারণের মতামতও নিচ্ছি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের নয়। আমরা সর্বস্তরের সবাইকে আমরা এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে চাই।
লিফলেটে উল্লেখিত শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি
১. সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাইম ও মাইনুদ্দিনের হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
২. সারাদেশে সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস সরকারি প্রজ্ঞাপন নিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসি বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
৩. গণপরিবহনে ছাত্র-ছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. সব রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করা সহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক ফুট এক বাস এবং দৈনিক আয় সব পরিবহন মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।
৭. শ্রমিকদের নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তির ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকেট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ছয় ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে দুজন চালক ও জন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মান করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. যাত্রী-পরিবহন শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
১০. ট্রাক, ময়লার গাড়ি সহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত সময় নির্ধারিত করে নিতে হবে।
১১. মাদকাসক্তি নিরসনে গোটা সমাজ জুড়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ভোগ টেস্ট ও কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
আগামী কর্মসূচি
শনিবার ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক ও অভিভাবক সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।