আশীষ কুমার দে : রাজধানী ঢাকার ফুটপাথে পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচলে বড় বিড়ম্বনা মোটরসাইকেল। জনবহুল এ শহরে নিত্যদিনের যানজটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেল-যন্ত্রণা। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রতিও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। সড়কের আয়তনের তুলনায় অতিরিক্ত গাড়ি এবং দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকার যানজট সমস্যা দৃশ্যত স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এর পাশাপাশি সড়কে মেট্রোরেলসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সেবা সংস্থার কাজ চলমান থাকায় গত কয়েক বছর যানজট আরো বেড়ে গেছে। এসব সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেলের দৌরাত্ব্য। বিভিন্ন সূত্র মতে, ঢাকায় কয়েক বছর আগেও নিয়মিত চলাচলরত এই দ্বিচক্র যানের সংখ্যা ৫-৬ লাখ হলেও এ্যাপভিত্তিক যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কারণে সেই সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে ঢাকায় প্রায় ১০ লাখ মোটরসাইকেল চলাচল করে। এছাড়া মাত্রারিক্ত প্রাইভেট গাড়ি তো রয়েছেই। ফলে যানজট এড়াতে হাজার হাজার কর্মজীবী নিকটতম দূরত্বে পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করেন। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য নির্ধারিত ও প্রশস্ত ফুটপাত রয়েছে। কিন্তু পথচারীরা স্বাভাবিকভাবে ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছেন না। রাজধানীর প্রায় সকল ফুটপাত দিয়েই অবাধে মোটরসাইকেল চলাচল করে। মোটরবাইক চালকেরা যানজট এড়াতে কিংবা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে হরহামেশাই ফুটপাতের ওপর দিয়ে চলাচল করেন। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও তাদের তেমন একটা বাধা দেন না। এতে ফুটপাত ব্যবহারী পথচারীরা প্রতিনিয়ত দু:সহ যন্ত্রণা ভোগ করে থাকেন। অথচ প্রচলিত সড়ক আইন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিধিমালায় ফুটপাতে মোটরবাইক চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়া এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে। বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও বিচারপতি হাবিবুল গণি সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আলাদা দুটি রিটের শুনানি নিয়ে ২০১২ সালের ৫ মার্চ রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কয়েকটি রুলনিশিসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশে দেন। রাজধানীবাসীর স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কে এম জাবির ও আইনুন নাহার সিদ্দিকা রিট দুটি করেছিলেন। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম ও এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। এছাড়া আদালতের আহ্বানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী এ বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনার পর কিছুদিন পুলিশ তৎপর ছিল এবং ফুটপাতে মোটরসাইকেল দেখা যায়নি। কিন্তু বছর না ঘুরতেই আগের সেই বিশৃঙ্খল অবস্থা আবারো ফিরে আসে এবং যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া ২০১৮ সালে প্রণীত নতুন আইন ‘সড়ক পরিবহন আইন (সংশোধন) ২০১৮’-তেও ফুটপাতে চলন্ত মোটরসাইকেল ওঠালে জেল-জরিমাণার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। সড়ক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তখনকার তুলনার ঢাকায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা অন্তত তিনগুণ বেড়ে হয়েছে। এর ফলে ফুটপাতে মোটরবাইকের দৌরাত্ব্য বেড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন বলেন, বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। ট্রাফিক পুলিশ তুচ্ছ ঘটনায় পরিবহন শ্রমিকদের নামে মামলা দেয়, হয়রানি করে। কিন্তু বেপরোয়া ও আইন ভঙ্গকারী মোটরবাইকারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না, অভিযোগ করেন পরিবহন শ্রমিক নেতা হানিফ খোকন।