পটুয়াখালী জেলায় বসবাসরত রাখাইন জনগোষ্ঠীর জবরদখল হওয়া ভূমি, উপাসনালয় ও শ্মশান পুণরুদ্ধার ও প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। রাখাইন জনপদ সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফিরে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
আজ বৃহষ্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, এএলআরডি’র প্রজেক্ট ম্যানেজার আজিম হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমূখ।
লিখিত বক্তব্যে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সারা দেশে আদিবাসীরা নানাভাবে শোষণ, বঞ্চনা, ভূমি উচ্ছেদ ও শঙ্কার মধ্যে দিন পার করছে, এটা আমরা জানি, কিন্তু পটুয়াখালী অঞ্চলের রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর অবস্থা যারপরনাই শোচনীয়। রাখাইনরা প্রথম এ এলাকায় কুয়া খনন করেছিল, তাই নাম হয়েছে কুয়াকাটা। অধিকাংশ রাখাইন আদিবাসী আজ দেশান্তরি, বিপন্ন; কেবল সংখ্যালঘু নয় বরং তারা সংখ্যাশূন্য হতে চলেছেন।
তিনি আরো বলেন, যেখানে কয়েক দশক আগেও লক্ষাধিক রাখাইনের পদচারণে মুখরিত ছিল, সেখানে তাদের সংখ্যা বর্তমানে মাত্র আড়াই হাজারে নেমে এসেছে। ১৯৪৮ সালে পটুয়াখালীতে ১৪৪টি ও বরগুনায় ৯৩টি রাখাইনপাড়া ছিল, বর্তমানে সেখানে যথাক্রমে ২৬টি ও ১৩টি পাড়া টিকে আছে। এর মধ্যে সর্বশেষ যে রাখাইন পাড়াটি এ বছর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সেটি হলো ছয়আনি পাড়া। পায়রা বন্দরের জন্য অধিগ্রহণের কবলে পড়ে পাড়াটি বিলুপ্ত হয়েছে।
আদিবাসী রাখাইনদের সকল উৎসব ছিল ভূমি কেন্দ্রিক দাবী করে তিনি বলেন, রাখাইন দের জমি, পুকুর, শ্মশানসহ সবকিছু দখল হয়ে যাচ্ছে বলেই নিজভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন তারা। জালিয়াতির মাধ্যমে জমি জবরদখল, রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও স্বার্থান্বেষী দালাল চক্রের দৌড়াত্ম এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তার কারণে তারা তাদের ভূমি হারাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাখাইনদের সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে তার ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে এই অঞ্চলে রাখাইনদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমরা দেখতে চাই আর যেন একটি রাখাইন পাড়াও নিশ্চিহ্ন না হয়। একই সঙ্গে আমরা চাই উচ্ছেদ হওয়া রাখাইন পরিবারগুলোকে যথাযথভাবে তাদের জীবনধারা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থানে পুণর্বাসন নিশ্চিত করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে বেদখলকৃত বৌদ্ধ বিহারের জমি ও রির্জাভ পুকুর বেদখলমুক্ত করা, রাখাইন ভাষা রক্ষার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে অবিলম্বে রাখাইন ভাষায় শিশু শিক্ষা কার্যক্রম শুরু এবং বিদ্যালয় সমূহে রাখাইন শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ধর্মীয় শিক্ষার সুয়োগ দেওয়া, রাখাইন সংস্কৃতি রক্ষা, বিকাশ ও চর্চার লক্ষ্যে রাখাইন কালচারাল একাডেমিকে সক্রিয় করাসহ ১৩ দফা দাবি ও তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।