নানা বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো জামালপুর-৪ আসনের এমপি ডা. মুরাদ হাসানকে কানাডায় ঢুকতে দেয়নি দেশটির বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি। টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। কানাডার স্থানীয় বাংলা অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা গেছে। তবে ডা. মুরাদ এ মুহূর্তে কোথায় অবস্থান করছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। তাকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশের একটি বিমানে উঠিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি সূত্রের দাবি, মুরাদ হাসান বর্তমানে মন্ট্রিয়ালে অবস্থান করছেন। মন্ট্রিয়াল কানাডার কুইবেক প্রদেশের বৃহত্তম এবং উত্তর আমেরিকার নবম বৃহত্তম শহর।
মন্ট্রিয়াল প্যারিসের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর যেখানে ফরাসি প্রাথমিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখানে ৬৭.৯ শতাংশ লোক ফরাসিতে এবং ১৬.৫ শতাংশ ইংরেজিতে কথা বলে। তবে ডা. মুরাদের মন্ট্রিয়ালে অবস্থানের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি কানাডার সরকারি সূত্র। কানাডা বর্ডার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে কানাডা প্রতিনিধি রনি ইউসুফ বলেন, ডা. মুরাদ হাসান আমিরাতের একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরন্টো পিয়ারসন্স আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এসময় কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর তাকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হয়। প্রবাসী বাংলাদেশি গণমাধ্যমের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তিনি টরেন্টোতে ঢুকতে না পেরে মন্ট্রিয়ালে চলে গেছেন। এখন সেখানেই অবস্থান করছেন। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে তাকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। বিপুল সংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলেও তাকে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, নারীর প্রতি অশোভন ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও কয়েকটি অডিও ক্লিপ ফাঁসের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ডা. মুরাদ। কোণঠাসা হয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্ট করেন তিনি। গত পাঁচ দিন ধরে অগোচরে থাকা মুরাদকে এদিন রাত ৯টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ রজনীগন্ধায় দেখা যায়।
অবশেষে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২১ মিনিটে সফল হন মুরাদ। এমিরেটস এয়ারলাইনসের ইকে৮৫৮৫ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কানাডার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন তিনি।
বিমানবন্দরে বিতর্কিত এ সংসদ সদস্যকে অনেকটা নির্বিঘ্নেই ফ্লাইটে ওঠতে দেখা যায়। এসময় জিন্স প্যান্ট ও ব্লেজার পরা মুরাদের ডান হাতে ছিল মেরুন রঙের একটি হ্যান্ড লাগেজ, বাম হাতে ধরা ছিল পাসপোর্ট, কাঁধে ছিল একটি চামড়ার ব্যাগ। প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার নাতি ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে নিয়ে চরম আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তৎকালীন তথ্যপ্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও কটূক্তি করেন তিনি। তার ওই মন্তব্যের পর ঢাবি শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। এর মধ্যেই দেওয়ার মধ্যেই ডা. মুরাদ হাসানের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ঢাকাই সিনেমার নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে ফোনালাপের ওই অডিওতে মুরাদ হাসানকে অশ্লীল কথাবার্তা ও নায়িকাকে ধর্ষণের হুমকি দিতে শোনা যায়। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার। এরপর সোমবারই (৬ ডিসেম্বর) মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দেন মুরাদ।