র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি, বরং রক্ষা করে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, যেটা গণমাধ্যমে এসেছে র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেছে বা বিভিন্ন বিষয় যেটা এসেছে। আমি বলবো, র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি, বরং র্যাব মানবাধিকার রক্ষা করে চলেছে। মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের ৯ হাজার সদস্যের যে ফোর্স। এই ফোর্সের এখনো পর্যন্ত লে. কর্নেল আজাদসহ ২৮ জন জীবন দিয়েছেন। মানবাধিকার রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে আমাদের ১ হাজারের বেশি সদস্যের অঙ্গহানি হয়েছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের ২ হাজার অধিক সদস্য আহত হয়েছে। আমার মনে হয়, বিশ্বে এমন কোনো ফোর্স নেই যে ফোর্সের সদস্য সংখ্যা ৯ হাজার, যারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে, মানবাধিকার রক্ষার্থে যে আত্মত্যাগ আর কোনো বাহিনী দিয়েছে কি না আমার সন্দেহ রয়েছে।
তিনি বলেন, এলিট ফোর্স র্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কিছু লিগ্যাল ম্যানডেটের ভিত্তিতে জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাসবাদ দমনে র্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। র্যাবের আভিযানিক সাফল্যের কারণে আজ জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ, উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চলে চরমপন্থী ছিল সেটা কিন্তু শূন্যের কোটায় চলে এসেছে। র্যাবের কার্যক্রমের জন্য সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে। আমরা দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের তৃতীয় বর্ষ পালন করেছি। বিশ্বের খুব কম দেশে এমন নজির রয়েছে যে সন্দরবনের মতো এত বিস্তৃত বনাঞ্চল দস্যুমুক্ত হয়েছে। এখানে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে, সুন্দরবনে ৩৬টি দস্যুবাহিনীর ৩২৬ জন আত্মসমর্পন করেছেন। তাদের পুনর্বাসনে র্যাব যে মানবিকতা দেখিয়েছে, তাদের আমরা ঘর দিয়েছি, গরু দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তাদের সুস্থ জীবনের ফিরে আসার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আমরা করেছি।
বাঁশখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় যারা জলদস্যু ছিল তারাও সুস্থ জীবনের ফিরে এসেছেন। তাদেরও পুনর্বাসনে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলাদেশে জঙ্গিরাও অনেকে সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছেন। বিশ্বে খুব কম আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে, যারা এইভাবে মানবিকতা দেখিয়েছে। আমরা মানবাধিকার লুণ্ঠন করি না, আমরা মানবাধিকার রক্ষা করে চলেছি। র্যাব একটি এলিট ফোর্স যেখানে বিভিন্ন বাহিনী চৌকস অফিসার নির্বাচন করে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের এই বাহিনীতে আনা হয়। এই বাহিনীর নিজস্ব যে আইন, বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে অত্যন্ত কঠোরভাবে তা পালন করা হয়, বলেন খন্দকার আল মঈন।
তিনি আরও বলেন, এখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। র্যাবই প্রথম ডোপ টেস্টের মাধ্যমে দেখেছে, আমাদের বাহিনীর মধ্যে কেউ মাদকাসক্ত রয়েছে কি না। পরবর্তীতে সরকারি বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। করোনা মহামারিকালে যেখানে সন্তান বাবাকে ফেলে রেখে চলে গেছে, করোনা আক্রান্ত সন্তানকেও বাবা ফেলে রেখে চলে গেছে। র্যাব হেলিকপ্টার দিয়ে ঢাকায় এনে এসব রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। অভিযানের পাশাপাশি জনসচেতনামূলক অনেক কর্মকাণ্ড আমরা করেছি। মানুষের অধিকার আদায়ে র্যাব সব সময় জীবন দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও জীবন দিয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাব কাজ করে যাবে।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তা গণমাধ্যমের মাধ্যমে এসেছে। অবশ্যই অফিসিয়ালি আমরা এই বিষয়ে চিঠি পাব। অফিসিয়ালি ডকুমেন্টগুলো পেলে নিরীক্ষা করে যেসব উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, সেগুলো আমরা নেব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সময় আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়ে থাকে, আমরা মনে করি একটি দেশের সুস্থ নাগরিক হিসেবে প্রতিটি সদস্যের আত্মরক্ষার যে অধিকার তা দেশের আইন দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় গুলি বিনিময়ের যে ঘটনা ঘটে। অভিযানে আমরা যখন প্রতিরোধের শিকার হয়েছি, তখনই আমরা গুলি চালিয়েছি। আমাদের যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা হয়, সেটা নিরপেক্ষ নির্বাহী তদন্তের মাধ্যমে সেটা যথাযথ যাচাই-বাছাই করা হয় যে এই গুলি বিনিময় যথাযথ ছিল কি না। মানুষ ভুল করতেই পারে, যদি যথাযথ না হয়, র্যাবে চাকরি করে যারা আইন ভঙ্গ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।