বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিজিবি এখন জল-আকাশ-স্থল সীমান্তে সুরক্ষা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। রবিবার সকালে বিজিবি দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিজিবি সদরদপ্তর পিলখানায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
স্বাধীনতার পরে বিজিবি পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০১০ সালে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড আইন-২০১০ পাস করি। কারণ ফেব্রুয়ারি মাসের ওই ঘটনার পরে আমাদের জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিলো। যে, বিডিআরকে নতুনভাবে নাম দিয়ে একটা আইন পাস করা।
বিজিবিকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার জন্য বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বিজিবিকে আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে৷ ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাহিনীর সদস্য ৯২ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। বিজিবির জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলায় আরেকটি ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ সৃজনের উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানান সীমাবদ্ধতা সত্বেও সীমান্তে চোরাচালান, মাদকপাচার, নারী-শিশু পাচার রোধে বিজিবি সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এটা প্রশংসনীয়। গত এক বছরে তাদের অভিযানে ৮৫০ কোটি টাকার মূল্যের মাদক এবং ৬০০ কোটি টাকার চোরাচালানি মালামাল আটক করা হয়েছে।
বিজিবির কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আপনারা দেশপ্রেম, সততা এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। একটি কথা মনে রাখতে হবে শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড শৃঙ্খলা বাহিনীর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। কখনো শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। তাতে নিজেদেরই ক্ষতি হবে। চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন। কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলা প্রতিটি শৃঙ্খলা বাহিনীর অবশ্যই কর্তব্য।
আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি ও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদেরকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা লক্ষ্যস্থির করেছি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হবে। আমরা এই ব-দ্বীপ উন্নয়নের জন্য ২১০০ পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতার ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত, সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা প্রত্যাশিত আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসাবে বিজিবি এগিয়ে যাবে তার অভিষ্ট লক্ষ্যে। বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।
বিজিবি একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনীর ২২৬ বছরের ইতিহাস রয়েছে। ১৭৯৫ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটিলিয়ান নামে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কালের পরিক্রমায় সুসংগঠিত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অর্জনে এবং অংশগ্রহণে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে যা বিজিবি বর্তমানে বা তৎকালীন ইতিআরের সঙ্গে জড়িত।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। এর সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তখন পিলখানায় পূর্বপ্রস্তুতি ছিলো। সেখানে ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তিনজন ওয়ারলেস সেট নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন জাতির পিতার নির্দেশে। যে মুহূর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে ইপিআরের ফাঁড়িতে পাঠান। তখন তাঁরা বাংলাদেশের সব পুলিশ স্টেশন এবং থানায় এই বার্তাটা পৌঁছে দেন। সেই বার্তাটা সংগ্রাম পরিষদ তথা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এভাবে আমাদের স্বাধীনতার বার্তাটা সমগ্র দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যায়। সেখানে আমাদের নেতারা প্রচার শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ দুপুর আড়াইটায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান সাহেব প্রথমে এই ঘোষণাটা পাঠ করেন। সেই সঙ্গে একের পর এক অন্যান্য নেতারাও পাঠ করতে থাকেন। তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ শুরু এবং স্বাধীনতা ঘোষণায় বিজিবির বিশাল অবদান রয়েছে। যা আমরা সবসময় স্মরণ করি।
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা ক্ষমতা গ্রহণের একমাসের মাথায় বিডিআরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। যদিও ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা তা সমাধান করি। কিন্তু সেই ঘটনায় তখনকার বিডিআরের ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭০ জন প্রাণ হারায়। এই ঘটনায় আমরা দ্রুততম সময়ে বিচারও সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। বিচার কার্য.. তারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং চলমান রয়েছে।