ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের সব অর্জন দলটি ধ্বংস করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সোমবার বিকালে এক আলোচনা সভায় ফখরুল এসব কথা বলেন। রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে (কাজী বশির মিলনায়তন) বিএনপির উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ কীভাবে স্বাধীনতাবিরোধী এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় এবং বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এরা আওয়ামী লীগ আজকে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কারণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা।’
খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা বলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালে তিনি (খালেদা জিয়া) সেদিন তার দুই শিশুর হাত ধরে আজকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্বারা গ্রেপ্তার হয়ে তিনি ক্যান্টমেন্টের কারাগারে বন্দি ছিলেন ১৬ ডিসেম্বব পর্যন্ত। আজকে আপনারা তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছেন। এখন তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।’
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দেখুন এই ৫০ বছরে এরা (সরকার) দাবি করে যে, বাংলাদেশে উন্নয়নের না কি বন্যা বইয়ে দিয়েছে। এই ৫০ বছরে আজকে গরির আরও গরিব হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের সহায়তাপুষ্ট, মদদপুষ্ট কিছু বড়লোক আরও ধনী হয়েছে। কী হয়েছে? আজকে আমাদের দেশের কৃষকেরা তারা তাদের পণ্যের দাম পাচ্ছে না, শ্রমিকেরা তাদের শ্রমের ন্যায্য পাওনা মজুরি পাচ্ছে না। আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে, শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে, আমাদের অর্থনীতি সত্যিকার অর্থে একটা পরনির্ভরশীল অর্থনীতিতে পরিণত করেছে।’ এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্য হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, ‘আজকে সময় নেই। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি, ব্যক্তি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় যে শক্তি আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাদেরকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সরকার একটি দানবীয় সরকার। আজকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশের একটি সংস্থার কর্মকর্তার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার খবর। আজকে সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে তিনি কোথাও জায়গা পাচ্ছেন না, তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এসব কাদের জন্য হচ্ছে? আজকে যারা ক্ষমতায় জোর করে দখল করে আছে তাদের জন্য, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের জন্য।’
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস,গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আমিনুল হক, যুব দলের সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের হাসান শহিদুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব প্রমূখ বক্তব্য দেন।