ঝালকাঠির নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্মরণ করে আঁতকে উঠছেন অনেকেই। বেঁচে ফেরা এক নারীর হৃদয়বিদারক বর্ণনা শুনলে শিউরে উঠবে যে কেউ।
অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া এক নারীর হৃদয়বিদারক বর্ণনা
আগুনের সঙ্গে ধোঁয়ায় লঞ্চ আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এতে সবাই দিশেহারা হয়ে পড়েন। লঞ্চের ভেতরে থাকা যাত্রীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। যে যেভাবে পেরেছেন আত্মরক্ষার চেষ্টা চালিয়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই স্বজনদের রেখে নদীতে ঝাঁপ দেন। কয়েকজনকে শরীরে আগুন নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
কিন্তু এক নারী তার সাঁতার না জানা ১৩ বছর বয়সী ছেলেকে রেখে ঝাঁপ দিতে চাননি। এই নরক থেকে বেঁচে ফেরার আশা অনেকটা হারিয়েই ফেলেছিলেন তিনি। বলেন, ছেলে সাঁতার জানে না। সবাই নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছিল। ছেলে না বাঁচলে আমি বেঁচে কী করব?
মধ্য বয়সী ওই নারী বলেন, আগুন যখন এখানে আসে, তখন আমি ঘুমেছিলাম। আমার ছেলেকে ঘুম থেকে উঠাইছি। ওরে টাইন্না এইখান থেকে ওইখানে নিছি।
বরগুনার ওই যাত্রী বলেন, আমরা দোয়া কালাম পড়ে রেডি হইছি, বাচ্চারে কোলে নিছি, আর কোনোদিন দেখা হবে না। আমার ছেলে অমারে ধইরে বসছে চুমু দিয়া, বলে ‘আম্মু, তোমারে ছাড়া বাঁচব না’।
তবে শেষ পর্যন্ত আরও অনেকের মতো নদীতে ঝাঁপ দেন ওই নারী এবং তার ছেলে। তিনি বলেন, আস্তে আস্তে স্রোতে ভাসতে ভাসতে লঞ্চ পারে যখন আসছে, যখন দেখলাম যে গাছ দেখা যায়, ছেলেরে বললাম যে বাবা, তুমি পানির নিচ দিয়া হাঁটবা। হাইট্টা দেখবা গাছ পাইলে গাছ ধইরা উরপে উইঠ্ঠা যাইতে পারবা। ও লাফ দিছে, আমি বোরকা ছিড়ড়া ঝাঁপ দিছি। আমি মনে হয় ৫ ফুট না কয়ফুট গেছি জানি না, হঠাৎ কইরা ভাইসা উঠছি, সাঁতার দিয়া ছেলেরে ধরছি।
তিনি আরও জানান, লঞ্চে তার লাগেজ ছিল। কাপড়চোপড়ের সঙ্গে আইডি কার্ড ছিল, আর ছিল ৬৫ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতের অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় এই দুই যাত্রী প্রাণে বেঁচে গেলেও বাঁচতে পারেননি অনেকেই। এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। লঞ্চে প্রায় ৩০০ থেকে সাড়ে তিনশ যাত্রী ছিল। বহু হতাহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দগ্ধও হয়েছেন অনেকে। নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে কোস্টগার্ডের সদস্যরা।