বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

বাণিজ্য মেলা টার্গেট করে জাল টাকা তৈরি করছিল চক্রটি

নিউজ ডেক্স:
  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৬৫ পাঠক পড়েছে

চক্রটির সদস্যরা ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠানে জাল নোট বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহার করত। বর্তমানে বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তারা তৈরির পরিকল্পনা করে। এজন্য তারা রাজধানীর পল্লবীতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে জাল টাকা তৈরি শুরু করে। কিন্তু বিপুল জাল টাকাগুলো বাজারে ছাড়ার আগেই চক্রটির মূলহোতাগণ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তাররা হলেন, চক্রের মূলহোতা মো. ছগির হোসেন, তার সহযোগী মোছা. সেলিনা আক্তার পাখি ও মো. রুহুল আমিন।

সোমবার (৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট, ৫টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর, ৩টি প্রিন্টার, ১টি হ্যান্ড এয়ারড্রয়ারসহ জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৮ নভেম্বর র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্য মানের জাল নোটসহ জাল নোট তৈরি ও বিক্রয়কারী চক্রের সক্রিয় ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রটির মূলহোতা ও অন্যান্য সহযোগীদের সম্পর্কে জানা যায়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল মিরপুর পল্লবী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ জাল নোট তৈরি চক্রের মূল হোতাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায় যে, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জাল নোট তৈরি করে বিভিন্ন লোকদের কাছে স্বল্প মূল্যে জাল নোট বিক্রি করে আসছে। এ চক্রটির মূলহোতা মো. ছগির হোসেন এবং অন্যান্যরা তার সহযোগী। গ্রেপ্তারকৃতরা আরো জানায় যে, তারা বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই জাল নোটের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। এই চক্রের সঙ্গে ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছে।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে একটি হোটেল বয়ের কাজ নেয়। পরবর্তীকে ভ্যানে ফেরি করে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রয় করত। গার্মেন্টস পণ্য বিক্রয়ের সময় আসামি ছগিরের সঙ্গে ইদ্রিস নামক একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইদ্রিস এর মাধ্যমে তার জাল নোট তৈরির হাতেখড়ি হয়। প্রথমে সে জাল নোট বিক্রি ও পরবর্তীতে সে জাল নোট তৈরীর বিষয় রপ্ত করে। ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। ১ বছর জেল খেটে পুনরায় সে ২০১৮ সাল হতে জাল নোট তৈরি শুরু করে। তৈরীকৃত জাল নোটগুলো তার চক্রে থাকা অন্যান্য সহাযোগী গ্রেপ্তারকৃত রুহুল আমিন, সেলিনা ও অন্যান্য ৭/৮ জনের মাধ্যমে বিক্রয় করে।

এ চক্রের মূলহোতা ছগির নিজেই স্থানীয় বাজার হতে জাল নোট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি ক্রয় করে তার ভাড়া বাসায় গোপনে বিশেষ কৌশলে এ-৪ সাইজের ০২ টি টিস্যু পেপার একসাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রঙ্গিন প্রিন্টারে ডিজাইনকৃত টাকা তৈরি করত। সে স্থানীয় বাজার থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দোকান হতে এসব জাল নোট তৈরির সরঞ্জামাদি ক্রয় করত। সে নিজেই প্রিন্টিং ও কাটিং করত। প্রিন্টিং এর কাজে অন্যান্যদের সম্পৃক্ত করা হতো না। জাল নোট তৈরির পর সে তার অন্যান্য সহযোগীদের’কে মোবাইলে কল করে তার কাছ থেকে জাল নোট নিয়ে যেতে বলত।

প্রতি ১ লাখ জাল নোট ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। তার সহযোগীরা মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ ও বিক্রি করত। টার্গেট বা চাহিদা অনুযায়ী ছগির প্রতি মাসে তার সহযোগীদেরকে বোনাসও দিত। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, করোনাকালীন মাঝে মাঝে ছগির নিজেও এ জাল নোট স্থানীয় বাজারে ব্যবহার করত; কয়েকবার সে সাধারণ জনগণের হাতে ধরাও পরেছিল বলে সে জানায়। আসামিরা সাধারণত কোন মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠানে তারা জাল নোট বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহার করত। বর্তমানে বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তারা তৈরির পরিকল্পনা করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে গ্রেপ্তারকৃত ছগির জাল নোট প্রিন্টিং এর সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয়ে ফেলত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যাতে তাকে ধরতে না পারে সে জন্য গ্রেপ্তারকৃত ছগির ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করত।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সেলিনা আক্তারের স্বামীও জাল নোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং বর্তমানে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেলে আছে। সেলিনা ঢাকা জেলার কামরাঙ্গীর চরে একটি বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করত। স্বামীর মাধ্যমে এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সে নিজেও এ চক্রে জড়িয়ে জাল নোট ব্যবসা শুরু করে।

গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামি রুহুল আমিন মূলত এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের অন্যতম সহযোগী। রুহুল আমীনের মাধ্যমে ছগিরের অন্যান্য সহযোগীদের পরিচয় হয়। রুহুল আমিন জাল নোট তৈরি ও বিক্রয়ের মামলায় ইতোপূর্বে ২০১৭ সালে জেলে ছিল এবং বর্তমানে তার নামে মামলা চলমান রয়েছে।

 

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580