চাকরিতে নিয়োগ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ সবক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট (মাদক গ্রহণ সংক্রান্ত পরীক্ষা) সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার (১২ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সবক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট হবে। সব সরকারি চাকরির নিয়োগে, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক। সেজন্য আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মোজাম্মেল হক বলেন, ডোপ টেস্টের জন্য খুব দ্রুতই আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘এ দেশে কিছু বিদেশি নাগরিক আছে, যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে সেইফ হোম বা ডিটেনশনের মধ্যে রেখে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য অর্থ বরাদ্দে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি।’
অনেক সময় পার্সেলের মাধ্যমে অবৈধ জিনিস প্রাচার হয় জানিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি বলেন, সেজন্য আগে পোস্ট অফিসে এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। এ রকম তথ্য পাওয়া গেছে যে, পোস্ট অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে মাঝখানে গিয়ে হয়তো আবার সেটা চেঞ্জ হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, পার্সেল কে পাঠাচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে নাম থাকতো না। এখন শুধু নাম থাকলে হবে না, আইডি কার্ড বা পরিচয়পত্রের পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকতে হবে। একজন তো ভুয়া নামও ব্যবহার করতে পারে। আমি হয়তো ভুল ঠিকানা দিয়েও পাঠাতে পারি। সেজন্য আইডি কার্ড অনুসারে পার্সেল পাঠাতে হবে এবং তার উপস্থিত থাকতে হবে। ‘বিদেশ থেকে আসা পার্সেল আগে জিপিওতে স্ক্যানিং হতো। এখন এয়ারপোর্টে সেই প্যাকেটগুলো স্ক্যানিং হবে। এই ব্যবস্থার জন্য বলা হয়েছে।’
দেশের বাইরে বাংলাদেশি যারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয় তাদের বিষয়ে দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, আমেরিকা সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করে মনে করেছি, সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণে বা কিছু ভুল তথ্যের কারণে, ইউটিউব বা ওই সমস্ত মিডিয়াতে যেসব তথ্যবলী অহরহ প্রচারিত হয়, সেগুলো যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে, যাচাই-বাছাই না করে উনারা এ মন্তব্য করেছেন।
‘আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি, সঠিক তথ্যগুলো যেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, সেগুলো আমেরিকা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া, যাতে তাদের এ ভুল ধারণা ভেঙে দেয় এবং সেগুলো তারা সংশোধন করেন। আমাদের পক্ষ থেকে সেই অনুরোধ আমরা রেখেছি।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আরও বলেন, মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবনকারীদের বিষয়ে আইন সহজ থাকে। সহজে তারা জামিন পেয়ে যায়। সেজন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, যাদেরকে ধরা হয়, দেখা যায় দুদিন পরেই তারা সব জামিন পেয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের আইনে কিছু দুর্বলতা আছে। ভবিষ্যতে সে দুর্বলতাগুলোর সুযোগ নিয়ে আইনে জামিনের যে অধিকার, সেটার যাতে অপপ্রয়োগ না হয় এবং আইনের যে ত্রুটি আছে, সেগুলো দূর করার জন্য আইন কীভাবে সংশোধন করা যায়, সে ব্যাপারেও আমরা কথা বলেছি, সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, দুইটা জিনিসে আমরা অনেক সময় কনফিউজড হয়ে যাই। একটা হলো- অ্যালকোহল বা মদ জাতীয় জিনিস। আরেকটা হলো- ড্রাগ। যেটা মানুষের জীবনী শক্তি নিঃশেষ করে দেয়। এ দুইটাকে আলাদা করে ড্রাগের জন্য যে কঠোর আইন আছে, সেগুলো যাতে আমলে আসে, কারণ অ্যালকোহল আর ড্রাগ এক জিনিস নয়।
সচেতনতার জন্য ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে মাদকবিরোধী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি বলেন, যারা মাদক থেকে ফিরে আসে এমন মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের জন্য ভবিষ্যতে একটা বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া ধরা পড়া বা আটক হওয়া মাদকদ্রব্য ধ্বংস করার রেকর্ড স্বচ্ছভাবে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী।