শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থদের আন্দোলন এখন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গড়িয়েছে। এই আন্দোলনও তিন দিনে গড়িয়েছে। সোমবার রাতে পুলিশ ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা করেছে। আজ মঙ্গলবার সিলেটের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এসবে টলাতে পারেনি শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থান। তারা উপার্যের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজ দুপুর ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা। শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল থেকে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন তারা। আজ এসব স্বাক্ষরসংবলিত চিঠি ডাকযোগে রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠানো হবে। একই সঙ্গে তাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।
এদিকে আজ দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে যান সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লগের নেতারা। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানান। নেতাদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা কমিটির সহসভাপতি আশফাক আহমদ, মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আসছে জানিয়ে নেতারা বলেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের প্রথম যেসব দাবি ছিল তা মেনে নিয়েছে, তাই সবার উচিত ঘরে ফিরে যাওয়া। নেতাদের বক্তব্যের সময় শিক্ষার্থীরা ভিসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। নেতারা বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ ওয়াকিবহাল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রতিনিধি পাঠিয়ে আহত শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিয়েছেন।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্লোগানের মধ্যে বেলা দেড়টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে উপাচার্যের বাসভবনে যান। এর কয়েক মিনিট পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে দিতে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যান। সেখানে গিয়ে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এদিকে সোমবার রাত আটটার শাবিপ্রবির অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে জালালাবাদ থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও পুলিশকে হত্যার উদ্দেশে মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, এ মামলায় কারও নাম নেই। তাই শিক্ষার্থীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে না। সেদিন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের অস্ত্র-গুলি গেছে, পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছেন, এগুলোর জাস্টিফিকেশন আছে। সে কারণেই মামলাটি করতে হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটে। গত রবিবার বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশের কর্তব্যকাজে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু খালেদ মামুন মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামানকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের (লিজা) বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে হলের কয়েক শ ছাত্রী আন্দোলনের সূচনা করেন। এই দাবিতে গত রবিবার উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে সন্ধ্যায় পুলিশ ক্যাম্পাসে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা ও সাউন্ড বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দায়ী করে তার পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।