বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের দোহাজারী রেঞ্জে চলছে হরিলুট

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ৬ মার্চ, ২০২২
  • ৬২৬ পাঠক পড়েছে

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের দোহাজারী রেঞ্জে চলছে হরিলুট
বৃক্ষশূন্য হতে চলছে বৈতরণী লালুটিয়া, ধোপাছড়ি ও সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্ট \দেখার কেউ নেই

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের দোহাজারী রেঞ্জে চলছে হরিলুট। খোদ ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসারের তত্ত্বাবধানে এই রেঞ্জের ৪টি বীটের রিজার্ভ ফরেস্ট দিবারাত্রি উজাড় হলেও দেখার কেউ নেই। ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার ও দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃষ্টিকারী ফরেস্টার শিকদার আতিকুর রহমানের দোর্দান্ত অর্থলিপ্সতার কারণে সংরক্ষিত বন নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায় এই রেঞ্জের অধীনস্থ বৈতরণী, লালুটিয়া, ধোপাছড়ি ও সাঙ্গু বীট সমূহের আওতাধীন রিজার্ভ ফরেস্ট সমূহ থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে গাছ কাটা হচ্ছে। এভাবে বৃক্ষনিধন অব্যাহত থাকলে অচিরেই ঐ ৪টি সংরক্ষিত বনাঞ্চল বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিদিনই এই রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকা থেকে কয়েকটি ট্রাক সেগুন কাঠ ভর্তি করে পাচার হচ্ছে। বিনিময় ফরেস্টার সিকদার আতিকুর রহমান হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা পড়ছে বৈতরণী বীটের রিজার্ভে। এই বীটে তার ঘনিষ্ঠজন ফরেস্ট গার্ড মহসিনকে পোস্টিং করিয়ে ২টা বীটের দায়িতে তাকে নিয়োজিত রেখে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়াও বান্দরবান থেকে সাঙ্গু নদী পথে আসা চোরাই কাঠ ও বাশ চেকের নামে ও মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করে কাঠ, বাশ পাচারে সক্রিয় সহযোগিতা করারও অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া দোহাজারী রেঞ্জের আওতাধীন সুফল বাগান তৈরিতেও ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। মোট বরাদ্দকৃত টাকার ৩৫% ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পার্সেন্টেজের নামে কেটে রেখে বাকি ৬৫% টাকা বীট অফিসারদের দেয়ায় তারা ও নিয়ম মোতাবেক বাগান করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও সংশ্লিষ্ট বীট অফিসার সুত্রে অভিযোগ।

সুফল বাগানে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে ৬ ফুট অন্তর গাছ লাগানোর কথা থাকলেও ১২ থেকে ১৪ ফুট অন্তর গাছ লাগানো হয়েছে। বাগানে জৈব সার, রাসায়নিক সার ও খুটি লাগানোর কথা থাকলেও কোন সারই সেখানে দেয়া হয়নি। এমনকি কোনো খুটি ও লাগানো হয়নি। বাগানের সম্মুখভাগের বাগান কিছুটা নিয়মমাফিক হলেও ভেতরে ব্যাপক অনিয়ম। কারণ হিসেবে জানা যায়, উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গেলে সম্মুখ ভাগের বাগান দেখেই চলে আসেন। ভেতরে ঢোকেন না। সুফল প্রকল্পের এহেন পুকুর চুরির বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তে প্রমাণিত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে ফরেস্টার আতিকুর রহমান এই রেঞ্জে যোগদানের পর কয়েক কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করে বনজ সম্পদ উজাড়, পাচারসহ সুফল প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছেন। এই সকল অবৈধ উপার্জনের বেশিরভাগ টাকায় তিনি এস এ পরিবহনের কেরানি হাটস্থ শাখার মাধ্যমে বাড়িতে পাঠিয়েছেন। তিনি এই রেঞ্জে যোগদানের পর থেকে এস এ পরিবহনে তিনি পাঠানো টাকার তালিকা পর্যালোচনায় প্রমাণিত হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে। দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এই ফরেস্টার ইতোপূর্বে বান্দরবান বিভাগে চাকরি করা কালীনও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন। বড়দোয়ার কর্মরত থাকাকালীন গাছ পাচারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। কয়েক দফা তদন্ত হয়। তারপরও রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বন বিভাগের সর্বনিম্ন পর্যায়ের এই কর্মকর্তা দীর্ঘ চাকুরী জীবনে অবৈধ উপার্জিত অর্থ দিয়ে রাজধানী ঢাকায় ৩টি ফ্ল্যাট, ধামরাইয়ে স্বজনদের নামে ৭৩ বিঘা জমি ক্রয়সহ তাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১১ টি এ্যকাউন্টে মোটা অংকের টাকা এফডিআর করেছেন বলেও তার এক নিকটাত্মীয় জানিয়েছেন। এতদ্বপ্রসঙ্গে তার সাথে আলাপকালে তিনি জানান আমি যা করি দক্ষিণের ডিএফও জানেন। এস এ পরিবহন আমার পাঠানো টাকার বিবরণ আপনাদের দিয়ে অন্যায় করেছে। পর্যবেক্ষণ মহলের মতে সংরক্ষিত এই ৪টি বনাঞ্চলের অবশিষ্ট বনজ সম্পদ রক্ষার্থে অবিলম্বে এই কর্মকর্তাকে অপসারণ করা প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580