দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণসহ বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিলেও অজ্ঞাত কারনে এসব অভিযেগের কোন তদন্ত হয় না। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের ক্ষুধার্ত মানুষ বাঁচাতে গঠন করেন ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর। কালক্রমে কয়েক বার অধিদপ্তরের নাম পরিবর্তন হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে আঃলীগ সরকারের আমলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কে একত্রিত করে গঠন করা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
এই দপ্তরের উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো বন্যাপ্রবণ ও নদী ভাঙ্গন এলাকায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ,ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগে অনুসন্ধান, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও জরুরী যোগাযোগের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ,উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ , জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, ১৫ মিঃ দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু/কালভার্ট নির্মাণ” প্রকল্প, গ্রামীণ রাস্তায় ১৫ মিঃ দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু/কালভার্ট নির্মাণ” প্রকল্প, গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসই করণের লক্ষ্যে হেরিং বোন এন্ড (এইচবিবি) করণ, মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প,আরবান রেজিলেয়েন্স প্রকল্প ও Disaster Risk Management Enhancement Project। এর প্রায় প্রতিটি প্রকল্প নিয়েই রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।
প্রকল্পের পাশাপাশি অধিদপ্তরটিতে নতুন সংযোজন হয়েছিল নিয়োগ বাণিজ্য, যা খোদ ডিজির বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা কাঠামোতে মাত্র একজন কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহকারী দিয়ে চালানো হচ্ছে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প ও মানবিক সহায়তা কর্মসূচি।জনবল সংকটের দোহায় দিয়ে শত শত শূন্য পদে নিয়োগ আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায় ডিজি আতিকুল হকের। সরকারের এজেন্ডা তথা মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিবর্তে নিয়োগ ও ট্রেনিংয়ে অতি উৎসাহী হয়ে উঠেন। দেড় বছরে চার দফা নিয়োগ কার্যক্রম হাতে নেন।
প্রথম দফায় ১০০ জন অফিস সহকারী কাম টাইপিস্ট নিয়োগ দেন,পরবর্তী দফায় তৃতীয় শ্রেণির আরও ১১০ জন কর্মচারী নিয়োগ দেন। এই নিয়োগে ব্যাপক দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাড়াহুড়া করে রাতের আঁধারে এ নিয়োগ প্রদান করা হয়। এ কাজে ডিজি আতিক কে সহযোগিতা করেন উপ পরিচালক হাবিব উল্লাহ বাহার। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, অফিস সহকারী নিয়োগের প্রশ্নপত্র প্রনয়ণ করা হয় পরীক্ষার আগের মধ্য রাতে, এবং দায়িত্বে ছিলেন ডিজি আতিক ও ডিডি বাহার।
ডিজি আতিক তার বিশস্ত কয়েকজনের মাধ্যমে প্রনীত প্রশ্নপত্র ভার্চুয়ালি জনপ্রতি দশ থেকে বার লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রেরণ করেন। নিয়োগ পরীক্ষায় ৭৫ নম্বরের মধ্যে কয়েকজন ৭০,৭২ নম্বর পাওয়ার পরেই প্রশ্নবিদ্ধ হয় প্রক্রিয়াটি। আগেভাগে প্রশ্নপত্র না পেলে তা কিছুতেই পাওয়া সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ডিজি আতিক তার একজন বিশস্ত প্রকৌশলীর মাধ্যমে মধ্যরাতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিক্রি করেছেন বলে জানা যায়। নিয়োগ পাওয়াদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে উপরোক্ত প্রকৌশলীর এলাকার এবং আত্মীয় স্বজনই আছে ১৭ জন।
এবিষয়ে ঐসময়ে বারবার অভিয়োগ করলেও তা আমলে নেননি ডিজি আতিক। এরপর ডিজি আতিক নিয়োগ দেন ব্রীজ কালভার্ট প্রকল্পে কার্য সহকারী। আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগের কথা থাকলেও ডিজি আতিক আইনের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মতো নিয়োগ কার্যক্রম করেন। একাই দেন প্রায় ৪৫ জন প্রার্থী। এর মধ্যে তার ডিজি আতিকের আত্মীয় স্বজন গ্রামের লোকেরসংখ্যাই বেশি। তিনি আরেক টি প্রকল্পে ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট না থাকা সত্বেও উপসহকারী প্রকৌশলী পদে চাকরী প্রদান করেন। উপ সহকারী প্রকৌশলী পদে চাকরির যোগ্যতা হিসেবে নিয়োগ বিঞ্জপ্তিতে ডিপ্লোমা পাশের কথা উল্লেখ থাকলেও উক্ত নারী প্রকৌশলীর এ ধরনের সার্টিফিকেট নেই অথচ ডিজি আইন লংঘন করে এ নিয়োগ প্রদান করেন। এতে এ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
প্রকল্পের তৎকালীন পিডি তাকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হোন বলে জানা যায়। নিয়োগে দূর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ডিজি আতিক অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নিতাই চন্দ্র দে’র সহায়তায় ট্রেনিংয়ের নামে লাখ লাখ টাকা অবৈধ ভাবে আয়ের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হলেও সকল প্রশিক্ষণে অধিকাংশ ক্লাসের বক্তা তিনি নিজেই। প্রশিক্ষণের বিষয়ের উপর তিনি কোন ক্লাসও নেন না বা কোন আলোচনাও হয় না। তিনি সকল ক্লাসেই আগের কর্মস্থলের গল্প এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মিথ্যাচার কাহিনি বর্ননা করেন। ট্রেনিং ক্লাসের নামে এযাবত প্রায় ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন আতিকুল হক।
ডিজি আতিকের যোগদানের পরেই অধিদপ্তরটি অসহায় দরিদ্র দের বিতরনের জন্য কম্বল ক্রয় করতে প্রথমবারের মতো ব্যর্থ হয়। শীত কালে সারাদেশে অসহায় দরিদ্র পীড়িত জনগনের জন্য সরকার শীত বস্ত্র হিসেবে কম্বল ও চাদর বিতরণ করে থাকে। কিন্তু ডিজি আতিক যোগদানের পর গত ২০২০ এবং ২০২১ সালে বার বার টেন্ডার আহ্বান করেও কম্বল কেনা হয়নি। মূলত সরকারকে বিব্রত করতেই আতিক কম্বল কিনতে অনাগ্রহ ছিলেন। কম্বল কেনার নাটক করে শেষে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে তাড়াহুড়ো করে শেষ সময়ে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ফলে অধিকাংশ জেলার উপজেলা প্রশাসন সঠিক সময়ে কম্বল কিনতে পারেনি।
এতে অসহায় দুঃস্থ মানুষ প্রয়োজনের সময় শীতের কম্বল পায়নি। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও অদ্যবধি কোন তদন্তের হয়নি। আর সাম্প্রতিক সময়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে কোন ফাইল ঘুষ ছাড়া টেবিলে উঠে না বলে অভিযোগ করেন ঠিকাদার বাশার। তিনি আজকের সংবাদকে জানান,এখানে কাঠের টেবিলও ঘুষ খায়, এরাই উপড়ে ম্যানেজ করে চলে তাই এর আগেও অনেক নিউজ হয়েছে কোন কাজ হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে ডিজি আতিকুল হকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায় নি। আর নিতাই চন্দ্রের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।