পাঁচ মাদকসেবীকে আটকের পর তাদের হাজির করা হয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতে। খবর পেয়ে সেখানেই তাদের ছাড়াতে গিয়েছিলেন পৌরসভার এক কাউন্সিলর এবং এক যুবলীগ নেতা। তখন পাঁচ মাদকসেবী চম্পট দেন। পরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে আনে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পাঁচ মাদকসেবী, পৌর কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতাকে দণ্ড দিয়েছেন।
সোমবার রাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে। দণ্ডপ্রাপ্ত কাউন্সিলরের নাম শহীদুল ইসলাম (৪৫)। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। পৌর এলাকার রামনগর মহল্লায় তার বাড়ি। আর যুবলীগ নেতার নাম গোলাম কাউসার মাসুম (৩৮)। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাদের দুজনকে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য পাঁচ মাদকসেবী হলেন- রামনগর মহল্লার হুমায়ুন কবীরের ছেলে মো. সাদ্দাম (২০), মনিরুল ইসলামের ছেলে মো. সাব্বির (২০), আলম আলীর ছেলে মো. সজিব (২০), চাঁইপাড়া মহল্লার দুরুল হুদার ছেলে মো. রিফাত (২১) এবং বুজরুক রাজারামপুর মহল্লার মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে রমজান আলী (২০)। তাদের প্রত্যেককে তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম এ আদেশ দেন। এর আগে সন্ধ্যায় পাঁচ মাদকসেবীকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুন নাহারের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছিল। সেখানেই তাদের ছাড়াতে যান কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা। এ সময় সেখান থেকেই পালিয়ে যান পাঁচ মাদকসেবী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিকালে গাঁজা ও ফেনসিডিল সেবনের সময় পাঁচ মাদকসেবীকে আটক করে জেলা মাদকদ্র্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা ইউনিটের একটি দল। এরপর তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে পৌর কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা তাদের ছাড়াতে যান। তারা এদের ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহারকে চাপ দিচ্ছিলেন। এই সুযোগে পাঁচজন পালিয়ে যায়। এ নিয়ে হুলস্থুল পড়ে যায়। আসামিরা পালিয়ে যাওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দুইজনকে আটকে রাখেন। পরে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে আনে। এরপর ইউএনও’র ভ্রাম্যমাণ আদালত সাতজনকেই সাজা দেন।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন ইউএনও জানে আলম। তিনি বলেন, পাঁচজনকে মাদক সেবনের সময় আটক করা হয়েছিল। কিন্তু কাউন্সিলর শহিদুল ও যুবলীগ নেতা মাসুম তাদের ছাড়াতে এসে পালিয়ে যেতে বলেন। এ কারণে তারা পালিয়ে যায়। তাই সবাইকেই কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, পাঁচ আসামি পালিয়ে গিয়েছিল। আমরা খবর পেয়ে আসামি উদ্ধার করে দিয়েছি। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা হলে রাতেই সাতজনকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
যুবলীগ নেতার কারাদণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাঁচজনকে যখন ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয় তখন কাউন্সিলর শহীদুল ও যুবলীগ নেতা মাসুম উপজেলা পরিষদ চত্বরেই ছিলেন। তারা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে বলেন, এরা সবাই কলেজে পড়ে; তাদের ছেড়ে দেয়া যায় কিনা। এ সময় পাঁচজন ১০ মিনিটের জন্য একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে ডাকা হলে তারা চলে আসে। এ রকম একটি ঘটনার জন্য কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতাকেও সাজা দেয়া হয়েছে।