চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতির পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৬ সালের আজকের এই দিনে মারা যান তিনি।
দিতি ১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে গায়িকা হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। সেই লক্ষ্যে তিনি গানেরও চর্চা করতেন। জাতীয় শিশু একাডেমি থেকে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় তিনি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে বিএ পাস করেন এই নায়িকা।
বিটিভিতে গান করার সুবাদে তিনি অভিনেতা আল মনসুরের নজরে আসেন এবং মনসুর তাঁকে ‘লাইলি মজনু’ নাটকে অভিনয়ের সুযোগ দেন। এতে দিতির বিপরীতে অভিনয় করেন মানস বন্দ্যোপাধ্যায়। নাটকটি জনপ্রিয়তা লাভ করলেও পরিবার দিতিকে অভিনয় করতে বাধা দেয়। কিছুদিন বিরতির পর তিনি ‘ইমিটেশন’ শিরোনামে একটি নাটকে অভিনয় করেন। এটি প্রযোজনা করেন ফখরুল আরেফীন।
১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’র মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে দিতির সম্পৃক্ততা ঘটে। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। কিন্তু সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আমিই ওস্তাদ’। সিনেমাটি পরিচালনা করেন আজমল হুদা মিঠু।
১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রী’ সিনেমাতে দিতি জনপ্রিয় অভিনেতা আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে অভিনয় করে দিতি প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
দিতি অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে—‘স্বামী-স্ত্রী’, ‘হীরামতি’, ‘দুই জীবন’, ‘ভাই বন্ধু’, ‘উসিলা’, ‘স্বর্গ-নরক’, ‘নিয়তির খেলা’, ‘সাজানো বাগান’, ‘বীরঙ্গনা সখিনা’, ‘আপন ঘর’, ‘সৎমানুষ’, ‘লেডি ইন্সপেক্টর’, ‘খুনের বদলা’, ‘আজকের হাঙ্গামা’, ‘স্ত্রীর পাওনা’, ‘শ্বশুর বাড়ি’, ‘চাকর’, ‘সুখের ঘরে দুখের আগুন’, ‘বেপরোয়া’, ‘লক্ষ্মীর সংসার’, ‘ভয়ংকর সাতদিন’, ‘পাপী শত্রু’, ‘আজকের সন্ত্রাসী’, ‘দূর্জয়’, ‘স্নেহের প্রতিদান’, ‘শেষ উপহার’, চরম আঘাত’, ‘অপরাধী’, ‘কালিয়া’, ‘কাল সকালে’, ‘বিন্দুর ছেলে’, ‘চার সতিনের ঘর,’ ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত,’ ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা,’ ‘মেঘের কোলে রোদ,’ ‘প্রিয়তমেষু,’ ‘মাটির ঠিকানা,’ ‘হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ,’ ‘দ্যা স্পীড,’ ‘তবুও ভালোবাসি’ প্রভৃতি।
‘স্বামী-স্ত্রী’ সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য দিতি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
অভিনেতা সোহেল চৌধুরীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন দিতি। ১৯৮৭ সালে জন্ম হয় দিতি-সোহেল দম্পতির প্রথম সন্তান লামিয়া চৌধুরীর। ১৯৮৯ সালে এ দম্পতির ছেলে দীপ্ত চৌধুরীর জন্ম হয়। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে দিতি ও সোহেল চৌধুরীর বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন সোহেল চৌধুরী।
সোহেল চৌধুরী মারা যাওয়ার পর চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিয়ে করেন তিনি। তবে সে সংসার বেশিদিন টেকেনি। কাঞ্চনের সঙ্গেও তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন দিতি। নির্মাণ করেছেন নাটক। এ ছাড়া রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন। অভিনয়ের বাইরে মাঝেমধ্যে গান গাইতেও দেখা গেছে তাঁকে। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একক গানের অ্যালবামও। বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেলও হন তিনি।