মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। সে আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সরকারি খাস জমি নিবন্ধন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ খাজনা খারিজ ব্যাতিত ভূমি নিবন্ধন করছে অহরহ। ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দুর্র্নীতিবাজ সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। তার রয়েছে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত প্রচুর ধন সম্পদ।
সরেজিমনে অনুসন্ধনে জানা যায়, দেশের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ এ সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইসলাম ২০০৯ সালে মুজিবনগর সরকারের ভূয়া সনদ দাখিল করে সাব-রেজিস্ট্রার পদে গত ০৩/০৯/২০০৯ইং তারিখে কুমিল্লার গুনবতি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদান করেন। সেখানে যোগদান করেই নানা অপকর্ম করে দুহাতে কামিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তারপর বদলী হন গাজিপুরের কাপাসিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। সেখানে বনের জমি ব্যক্তিমালিকানায় দলিল রেজিস্ট্রি করে হয়ে জান টাকার কুমির। গাজীপুরের শত শত একর বনভূমি মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানীর নামে দলিল রেজিস্ট্রি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে চলে যান তিনি। দুদকে মামলাও হয় একাধিক তার বিরুদ্ধে। তিনি দুদকের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে দুদকের মামলা মাথায় নিয়ে বদলী হন দেশের লোভনীয় স্টেশন চট্টগ্রামের পটিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। পটিয়ায় যোগদান করেই সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইসলাম শুরু করেন নানা ফন্দি ফিকিরের দুর্নীতি। দলিল মূল্যের ১% অগ্রিম গ্রহণ ব্যতিত দলিল করেন না তিনি। সেরেস্তা ফি’র নামেও আদায় করেন দলিল প্রতি ২ হাজার টাকা। হেবার ঘোষনা দলিলে প্রতি শতাংশে ৩শ টাকা, বিনিময় দলিলে প্রতি শতাংশে ৫শ টাকা, হাইভেল্যুর নামে আদায় করেন ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। নকল প্রতি সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইসলাম নেন ১৫শ টাকা। পটিয়ার অফিস সহকারী বদিউল আলম ঘুষখোর এ সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইসলামের সব ঘুষ-দুর্নীতির টাকা আদায় করে থাকেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা রেজিস্ট্রারের অনুমতি ব্যতিত বহু দলিল কমিশনে রেজিস্ট্রি করে থাকেন তিনি। ডিআর এর নামেও বিভিন্ন খাত থেকে আদায় করে থাকেন প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা। দলিলের কমিশনে যেয়ে পটিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন মোর্শেদ দাতা-গ্রহিতাদের ভয়ভীতি দেখিয়েও মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকে। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলেই দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ রাখার অভিযোগ রয়েছে পিয়ন মোর্শেদের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুলের বিরুদ্ধে তারা ২টি মামলা দায়ের করেছে। ওদিকে জাহিদুল ইসলাম অবৈধভাবে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত অর্থ কামিয়ে হয়েছেন রাজধানী ঢাকায় একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও মার্কেটের মালিক। তিনি গোপালগঞ্জে গত ৩১/০৩/২০১৪ইং তারিখে ১৮০৮নং দলিল মূলে ৭১ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন যার দলিল মূল্য ১ কোটি ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। তিনি থাকেন, ইউরেকা রুবি গার্ডেন-১, ২২২/১, কাজী হাউজ, মালিবাগ, ঢাকা, এপার্টমেন্ট নং বি-২ তে। যার দলিল মূল্য ৮৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। ক্রয় করেছেন ২৮/০৪/২০১৪ইং তারিখে। দুর্নীতি দমন কমিশন তার অভিযোগ তদন্ত করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৭, তাং- ০৪/০৭/২০১৮ইং। এছাড়া এইচএসসি পাশ হওয়া সত্বেও বিকম পাশের ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরী নেয়ার অভিযোগে ডিএমপির শাহাবাগ থানায় একই দিনে মামলা নং- ১২ ধারা ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/ পেনাল কোড দায়ের হয়। বাদী হন দুদকের ফরিদপুর অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক ফরহাদ হোসেন। দুর্ণীতিবাজ সাব-রেজিস্টার জাহিদ দুদকের মামলা দুটির তদন্তকারী কর্মকর্তাকে চার্জসীট দিতে বিলম্ব করতে মাসিক মোটা অংকের টাকা নজরানা দেয়া অব্যাহত রাখারও অভিযোগ রয়েছে। ফলে মামলা দুটি দায়েরের পর দীর্ঘ আড়াই বছর সময়কাল অতিবাহিত হলেও প্রমানিত অভিযোগ থাকা সত্বেও চার্জসীট না হওয়ায় তিনি থেকে যাচ্ছেন ধরাছোয়ার বাইরে।