বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

শীতলক্ষ্যায় ডুবে যাওয়া লঞ্চে নির্ধারিত মাস্টার ছিলেন না

আশীষ কুমার দে
  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১
  • ৪৪৯ পাঠক পড়েছে

নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে সার্ভেতে ব্যাপক অনিয়ম

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনার কারণ উদঘাটনে মাঠে নেমেছে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক ও নৌ অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এহতেসানুল হক ফকিরের নেতৃত্বে অপর দুই সদস্য অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আরা ও পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান মঙ্গলবার দুর্ঘটনাস্থল ও ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল সাবিত আল হাসান পরিদর্শন করেছেন। ৪ এপ্রিল রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মদনগঞ্জ এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছাকাছি এসকেএল-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায় বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। ওই দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৫ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসকেএল-৩ নামের জাহাজটি এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে ‘এমএল সাবিত আল হাসান’ ডুবে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র কার্গো জাহাজটিকে দায়ী করা হলেও যাত্রীবাহী লঞ্চটি আদৌ চলাচলের উপযোগী ছিল কি-না, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কার্গো জাহাজের ধাক্কায়ই লঞ্চটি ডুবে গেছে- এ তথ্য এখনো প্রমাণিত হয়নি। সোমবার দুপুরে লঞ্চটি তীরে ওঠানোর পর দেখা গেছে, এটি রীতিমতো লক্কড়-ঝক্কর নৌযান। সাদা চোখেই এর অবকাঠামোগত নানা ত্রুটি ধরা পড়ে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এমএল সাবিত আল হাসান লঞ্চটি চলাচলের অনুপযুক্ত ছিল। বার্ষিক সার্ভের (ফিটনেস পরীক্ষা) সময় এটিকে শুধুমাত্র দিনের বেলা চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, ১৯৮৩ সালে নির্মিত নৌযানটির অবকাঠামো কাঠের ছিল। ২০০৩ সালে এটিকে স্টিলে রূপান্তর করা হয়। এর নিবন্ধন নং এম-১০৩৮৩ এবং দৈর্ঘ্য ১৬ দশমিক ২ মিটার। যাত্রী ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ৬৮ জন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১০ জানয়ারি নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় থেকে সার্ভে করা লঞ্চটির চলাচলের অনুমতি (সার্ভের মেয়াদ) ছিল আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া লঞ্চটির মাস্টার (যিনি চালাচ্ছিলেন) হিসেবে জনৈক মো. জাকির হোসেনের কথা বলা হলেও তিনি লঞ্চে চাকরি করেন না। এমনকি সার্ভের সময়েও মাস্টার হিসেবে সেখানে তিনি কর্মরত ছিলেন না। এ সংক্রান্ত কাগজপত্রেও সই করেননি এবং তাঁর অজ্ঞাতে মাস্টারশিপ সনদের ফটোকপি ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো নৌযান সার্ভের সময় সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ারের সামনে মাস্টার ও ড্রাইভারের সশরীরে উপস্থিত বাধ্যতামূলক। এছাড়া সার্ভেয়ার নিজে তাঁদের সনদ ও সই যাচাই বাছাই করবেন। এ ক্ষেত্রে মাস্টার জাকির হোসেন যদি ওই লঞ্চে চাকরি না করেন তাহলে সার্ভে প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার গুরুতর অপরাধ করেছেন। একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছে, এ ধরনের কাজে নৌযানের মালিকপক্ষ ও শিপ সার্ভেয়ারের মধ্যে অলিখিত সমঝোতা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার মো. শাহরিয়ার হোসেন কয়েক মাস আগে পরিদর্শন ছাড়াই এমভি গোলাম রহমান (নিবন্ধন নং এম- ৭২৪১) নামের একটি কার্গো জাহাজের সার্ভে সনদ দিয়েছিলেন। অথচ জাহাজটি ২০১৮ সালে মেঘনায় দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে ডুবে যায় এবং পরবর্তী সময়ে মালিক জাহাজটি উত্তোলন করেননি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হলে জাহাজটির সার্ভে সনদ বাতিল করা হয়। তবে ভৌতিক জাহাজের সার্ভে দেয়া সত্ত্বেও অদৃশ্য কারণে অভিযুক্ত কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মনজুরুল কবীর বলেন, “আমরা ওই জাহাজটির (এমভি গোলাম রহমান) সার্ভে সনদ বাতিল করেছি।” অভিযুক্ত সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, “এখনো কোনো ব্যবস্থা নেইনি। যদি প্রয়োজন মনে করি তখন ব্যবস্থা নেবো।” জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার মো. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “লঞ্চটিতে জাকির হোসেন নামে কোনো মাস্টার ছিলেন না- এ তথ্য সঠিক নয়। সার্ভের জন্য লঞ্চমালিক নিজেই আমাদের এখানে আবেদন করেছেন এবং জাকিরের মাস্টারশিপ সনদ এখানে এন্ডোর্সমেন্ট করা আছে।” তিনি আরো বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে সার্ভের পর মালিকরা মাস্টার ও ড্রাইভার চেঞ্জ করেন। তখন আমাদের করার কিছু থাকে না।” জাকিরের সনদে ‘অনলি ফর নারায়ণগঞ্জ রিভার পোর্ট এরিয়া’ (নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না) লেখা আছে- যোগ করেন সার্ভেয়ার শাহরিয়ার হোসেন। উল্লেখ্য, ৪ এপ্রিলের দুর্ঘটনা তদন্তে এ পর্যন্ত তিনটি কমিটি গঠিত হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আব্দুছ ছাত্তার শেখকে আহ্বায়ক ও বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মো. রফিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে সাত সদস্যের কমিটি করেছে নৌ মন্ত্রণালয়। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরী ববির নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। আর নৌ পরিবহন অধিদপ্তর গঠন করেছে তিন সদস্যের কমিটি; যার আহ্বায়ক করা হয়েছে অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এহতেসামুল হক ফকিরকে।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580