সাতদিনের বিধিনিষেধের মধ্যেই গণপরিবহনের পর আজ খুলেছে শপিংমল। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা থাকবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবাইকে বেচাকেনা করতে হবে।
খুলে দেওয়ার প্রথম দিনে শুক্রবার বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, দোকান খুললেও ক্রেতাদের উপস্থিতি নেই। সকাল ৯টায় শপিংমলগুলো খুললেও দোকানিরা অলস সময় পার করছেন। কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাচ্ছেন না তারা।
শুক্রবার সকাল ৯টার পর হল্যান্ড সেন্টার শপিং কমপ্লেক্স, বিটিআই প্রিমিয়ার প্লাজা, সুবাস্তুসহ বেশ কয়েকটি শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, দোকান খুললেও ক্রেতার উপস্থিতি নেই।
এ বিষয়ে হল্যান্ড সেন্টার শপিং কমপ্লেক্সের কাপড়ের দোকানি আবুল বাশার বলেন, সরকারের নির্দেশনায় এতদিন মার্কেট বন্ধ ছিল। গতকাল (বৃহস্পতিবার) যখন মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত জানানো হলো খুব ভালো লাগছিল। কিন্তু আজ দোকান খোলার পর কোনো ক্রেতা পাচ্ছি না। মানুষের এখন কেনাকাটার আগ্রহ নেই। মাঝখান থেকে লসে পড়েছি আমরা। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, মালামাল পাইকারি কেনা সব মিলিয়ে আমরাই অসহায় অবস্থায় আছি। করোনা আমাদের ধ্বংস করে দিল।
আরেক দোকানি হাশেম আলী বলেন, দোকান খুলেছি ঠিকই কিন্তু কাস্টমারের আনাগোনা, বেচা-বিক্রি এখনও শুরু হয়নি। এই মার্কেটের কোনো দোকানিই এখনও বনি (প্রথম বিক্রি) করতে পারেনি। দোকান এতদিন বন্ধ ছিল কিন্তু আমাদের তো দোকানের ভাড়া, কর্মচারীর বেতন ঠিকই দিতে হয়েছে। এখন এসে ব্যবসা করার কোনো উপায় দেখছি না। সামনে ঈদ আর ঈদেই পুরো বছরের ব্যবসা করে দোকানিরা। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে ব্যবসা করা সম্ভব হবে না। করোনাকালে মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটাই করে না। যে কারণে আজ সকালে দোকান খুললেও কোনো কাস্টমার নেই। মাঝখান থেকে আমরা দোকানি, ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা বিপদে পড়ে আছি। পারছি না ব্যবসা ছাড়তে, না পারছি নতুন মালামাল কিনে ব্যবসা বাড়াতে। আল্লাহ জানে সামনে আমাদের জন্য আর কেমন বিপদ অপেক্ষা করছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অনেক ব্যবসায়ী ধ্বংস হয়ে যাবে।
হল্যান্ড সেন্টার শপিং কমপ্লেক্সের প্রবেশ পথে কথা হয় এক বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে নাঈম আহমেদের সঙ্গে। তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বাচ্চার জন্য জামা কিনতে। জানতে চাইলে নাঈম বলেন, এই কয়দিন শপিংমলগুলো বন্ধ ছিল, আজ খুলেছে জেনে এসেছি। বাচ্চার জন্য জামা কাপড় কেনা জরুরি ছিল। তাই কিনতে এসেছি বাধ্য হয়ে। খুব প্রয়োজন ছাড়া এখন কেউ শপিং করতে আসে না। যে কারণে আজ খুলে দেওয়া হলেও শপিংমল ফাঁকা। মানুষ নিজেকে এবং পরিবারকে নিরাপদে রাখতে চায়, তাই এখন শপিংয়ে আসতে চাইছে না বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে আজ থেকে শপিংমলগুলো খুলে দেওয়ায় সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এ সময়সীমা মেনে শপিংমল ও দোকানপাট খোলা যাবে। শিগগিরই সরকারের তরফ থেকে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়ে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।
‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা এবং ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম সংক্রান্ত’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়, ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল মেয়াদে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও চিঠিতে সতর্ক করা হয়।
এর আগে ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এতে গণপরিবহন, শপিংমল, দোকানপাট, বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় দিনে শর্ত সাপেক্ষে ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন সেবা চালু করে দেয় সরকার। এরপর শুক্রবার থেকে খুলে দেওয়া হলো শপিংমলগুলো।