মহাকালের খাতা থেকে ঝরে যাচ্ছে আরো একটি বছর। আজ বাংলা ১৪২৭ সনের চৈত্র মাসের শেষ দিন। বাংলার চিরায়ত উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি। অতীতের সব গ্লানি, রোগ-শোক, ব্যর্থতা থেকে মুক্তির প্রত্যাশা নিয়ে বুধবার (১৪ এপ্রিল) বরণ করে নেওয়া হবে বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ সনকে। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ বলে বিদায়ী আহ্বান জানানো হবে। তবে করোনা মহামারি গেল বছরের মতো এবারও চৈত্র সংক্রান্তি আর বর্ষবরণের সব উৎসবে থাবা বসিয়েছে। অনাবিল সুখ, শান্তি, সচ্ছলতা কামনায় এবার যোগ হয়েছে করোনামুক্তির জন্য প্রার্থনা।
বছরের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তিতে বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয় বহুবিধ লোকাচার। দান, স্নান, ব্রতসহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক আচার-অনুষ্ঠান পালনের রীতি চলে আসছে আবহমানকাল থেকে। চৈত্রের দহন খরতাপ গ্রীষ্মকালে আরো তীব্রতর হয়। সেই সঙ্গে থাকে ঝড়ঝাপটার দাপট। এসব দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে সূর্যকে স্তবস্তুতি করে তুষ্ট রাখাই ছিল চৈত্রসংক্রান্তির লোকাচারের মূল ভাবনা।
চৈত্র সংক্রান্তির দিনটিতে গৃহস্থের ক্ষতি হবে বলে বাড়ি থেকে কাউকে বিদায় করা হয় না। পরম্পরা মেনে পালিত হয় গাজন, নীলপুজো ইত্যাদি। এ ছাড়া সংক্রান্তির প্রধান আয়োজন চড়ক। কয়েক দিন আগে থেকেই চড়কগাছ নিয়ে ভক্তের দল গ্রামে গ্রামে ঘুরে কীর্তন ও শীবের গীত গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে। এই দলে একজন শিব ও একজন গৌরীর সাজে সজ্জিত থাকেন। পরে সংক্রান্তির দিনে চড়ক ঘোরানোর আয়োজন করা হয়।
গ্রীষ্মকালে উদরাময়, চর্মরোগের প্রকোপ বেড়ে যায়, তাই নিরামিষ ও তেতো খাওয়ার চল রয়েছে এদিনে। এক সময় সাত রকমের তেতো শাকের বিভিন্ন পদ রান্না হতো। মেয়ে-জামাইকে নাইওর আনা, নতুন পোশাক-আশাক উপহার দেওয়ার রীতিও চালু ছিল গ্রামাঞ্চলে। এসব লৌকিক আচার অনুষ্ঠানের বাইরে গ্রামাঞ্চলে ঘরদোর লেপা-পোছা আর গরু-বাছুরের গা ধুইয়ে দেওয়া হয়। তবে দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে এসব আচার-রীতিনীতি উঠে গেছে।
অনেক অঞ্চলে চৈত্রসংক্রান্তির মেলা চালু আছে। ঐতিহ্যবাহী কারুপণ্য, খাজা-গজা প্রভৃতির সমারোহ ঘটে গ্রামীণ মেলাগুলোতে। এক দিন থেকে এসব মেলা চলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত। এসব মেলাকে কেন্দ্র করেই মুখর হয়ে ওঠে চৈত্রসংক্রান্তির উৎসব। শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও নববর্ষ পালন করা হয় নানা উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে। নাচ, গান, মেলা, নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে উৎসব মুখ হয়ে ওঠে শহরও।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো চৈত্র সংক্রান্তির সব আয়োজন বাতিল করেছে। কেননা, পয়লা বৈশাখসহ সবধরনের সমাগমের ওপর সরকারি ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে সারাদেশে সাত দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মানার কঠোর বিধিনিষেধ আরো দুইদিন বর্ধিত করে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান করা হয় । এই অবস্থায় চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছেনা। থাকবে না উৎসবের আমেজ।