শুক্রবার এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনে (আসেম) অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের ১৪তম সভা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান।
এ বছর এই সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ। এতে এশিয়া-ইউরোপের অর্থমন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেছেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী প্রতিপালনের জন্য চলমান ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষ্যে আমরা এই সভাটি অনেক আড়ম্বরপূর্ণভাবে আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে সভাটি ভাচূর্য়ালি আয়োজন করতে হয়েছে।
‘আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি একটি বৈষম্যহীন, সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমি তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আমি অত্যন্ত খুশি যে, এ সংকটময় সময়ে আপনারা বিনম্র চিত্তে এবং সহমর্মিতা প্রদর্শনপূর্বক এ সভায় যোগদান করেছেন। অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে এশীয় ও ইউরোপীয় জাতিসমূহের জন্য আসেম হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম। অংশীদার দেশগুলোর জন্য গুরুত্ব বহন করে এমন অভিন্ন অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে চতুর্দশ আসেমে আলোচনা করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষের আয় কমেছে। চাকুরি হারানোর সম্মুখীন হয়েছেন অনেকে। দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। অনেক দেশেই টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের সুচকগুলোর অর্জন ও কষ্টার্জিত সমৃদ্ধি এখন হুমকির মুখে। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এ মহামারির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আর্থ-সামাজিক সূচকেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা “ভিশন-২০৪১” গ্রহণ করেছি। এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে ছিল।
তবে করোনার বিস্তাররোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এবং অর্থনৈতিক পূনরুদ্ধারে বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পরও করোনা আমাদের অগ্রযাত্রার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন খাতকে সহায়তা করার জন্য ১৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার সমতুল্য ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশের সমান। কয়েক মাসব্যাপী মহামারির প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। রপ্তানি, প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বশেষ পরিস্থিতিতে বুঝা যায়, অর্থনীতি এখন টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে পুনরায় ফিরে আসছে।
বিশ্বের অন্যান্য অর্থমন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বহুমুখী বৈশ্বিক সমস্যা তৈরি করেছে। বৈশ্বিকভাবেই এর সমাধান করা দরকার। এই সংকট মোকাবিলায় একটি সু-সমন্বিত রোডম্যাপ প্রয়োজন। রাজস্ব প্রণোদনা, কনসেশনাল আর্থিক সহায়তা এবং ঋণের মাত্রা কমানোর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ এলডিসি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বেইল আউটের হাত থেকে রক্ষা করতে জি-৭, জি-২০, ওইসিডি দেশগুলো, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোকে অবশ্যই উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতিশ্রুত অপূরণকৃত কোটামুক্ত বাজার সুবিধা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে।
আমরা আশা করি, বিশ্ব শীগগিরই কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন পেতে চলেছে। বিশ্বের সব দেশের জন্য বিশেষত: এলডিসি এবং উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। উন্নত দেশগুলো, এমডিবি এবং আইএফআইএসসমূহ এ ক্ষেত্রে উদার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। বিচ্ছিন্নতা নয়, বরং সহযোগিতা যেকোনো সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে। এই কঠিন সময়ে সমৃদ্ধির পথে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।