করোনাকালীন সময়ে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, করোনা ঝুঁকি ভাতা দেওয়া, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা ও ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ সরকারের প্রতি ৯ দফা আহ্বান জানিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যপরিষদ (স্কপ)।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এসব আহ্বান জানানো হয়।
তাদের অন্যান্য আহ্বানগুলো হলো- করোনা আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসার দায়িত্ব মালিক ও সরকারকে বহন করা এবং কর্মহীন শ্রমিকদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা; বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ সব শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া এবং নিহতদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; মালিকানা নির্বিশেষে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা; শ্রম আইনের অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল, সংগঠন করার স্বাধীনতা, দরকষাকষি করার স্বাধীনতা এবং বাধাহীন ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা; শ্রমিকদের বাসস্থান ও রেশনের ব্যবস্থা করা; নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আউট সোর্সিংয়ের নামে শ্রমিক শোষণ বন্ধ করা; শ্রমিকদের ওপর সব ধরনের জুলুম নির্যাতনসহ কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধ করা এবং বন্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রীয় পাটকল ও চিনিকলের সব শ্রমিকের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনা মহামারিতে শ্রমজীবীদের জীবন দুর্বিষহ হলেও বৃহৎ পুঁজিপতিদের মুনাফা বেড়েই চলেছে। আমাদের দেশের পরিস্থিতিও ভিন্ন কিছু নয়। লকডাউনে শ্রমিক কাজ ও আয় হারালেও মালিকরা পেয়েছেন বিপুল সহায়তা। গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের হাজার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শ্রমিক-জনগণের প্রতি যে দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল তা কার্যকরভাবে পালিত না হওয়ায় করোনা শ্রমজীবীদেরকে মহাদুর্ভোগে ফেলেছে।
তারা বলেন, একদিকে উৎপাদন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনের কথা বলে শ্রমিকদের কাজ করিয়েছে, অন্যদিকে কারখানা বন্ধ, ছাঁটাই, লে-অফ, চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘটেছে। অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমে নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছে, জীবন ও রক্ত ঝরেছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলোকে যুক্ত না করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের কর্মসূচির ফলে এসব প্রণোদনা করোনার প্রথম ধাক্কায় যেমন কার্যকর হয়নি এবারও তা শ্রমজীবী মানুষদের কতটুকু রক্ষা করবে এই প্রশ্ন সর্বত্রই জাগছে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন স্কপের যুগ্ম-সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরি, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল আহসান, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আজিজুন নাহার, সাধারণ সম্পাদক শাকিল আক্তার চৌধুরী, জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি মাশিকুর রহমান, ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামিম আরা প্রমুখ।