বিধিনিষেধ না মেনে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়েই ঈদ যাত্রা শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর সব রাস্তায় ও বাস টার্মিনালগুলোতে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যাওয়া ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। চাপ বেড়েছে ফেরিঘাটগুলোতে। দূরপাল্লার বাস না চললেও নানান উপায়ে মানুষ ঘরে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, শুক্রবার এবং শনিবার সরকারি ছুটি। এরপর ১০ তারিখ শব ই কদরের ছুটি। ১১ এবং ১২ তারিখ অনেকই ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। আবার অনেকে ৯ তারিখ ছুটি কাটাবেন বলে স্থির করেছেন। এর ফলে একটানা কেউ পাবেন ৯ দিনের ছুটি, আবার কেউ পাবেন সাত দিনের ছুটি। ঈদের সময় সাধারণত এত লম্বা ছুটি পাওয়া যায় না। তাই দূরপাল্লার বাস চলাচল না করলেও সেদিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সবাই ঈদ সামনে রেখে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে পথে নেমেছেন।
সকাল থেকেই রাজধানীর গাবতলী এলাকায় মানুষের ভিড় শুরু হয়। সকাল ৯টার দিকে এই ভিড় ব্যাপক আকার ধারণ করে। নগরীতে গণপরিবহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করে বিভিন্ন স্থান থেকে পরিবার নিয়ে লোকজন গাবতলী এসে নামছেন। এরপর তারা পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হয়ে আমিন বাজারের দিকে চলে যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে আবার প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মিনি ট্রাক, সিএনজিসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে লোকজন ভেঙে ভেঙে সরাসরি পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছে যাচ্ছে। আবার অনেকে আমিনবাজার থেকে মানিকগঞ্জ এলাকায় প্রবেশ করার পরে লোকাল বাসে পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে পৌঁছে যাচ্ছে। এরপর ফেরি পার হয়ে ওপারে গিয়ে আবার তারা একইভাবে বিভিন্ন যানবাহন এবং জেলার ভেতরে চলাচলরত গণপরিবহনে গন্তব্যে ফিরছে।
ঝিনাইদহের যাত্রী শহিদুল ইসলাম সকালে গাবতলী এলাকায় পৌঁছে পাটুরিয়ায় যাওয়ার জন্য যানবাহন খুঁজছিলেন। কিন্তু আমিনবাজার বিরোধের সামনে পুলিশের চেকপোস্ট থাকায় কোনো বাস বা পিকআপভ্যানে যাত্রী নিয়ে ব্রিজ পার হতে দেয়া হচ্ছে না। ব্রিজ পার হয়ে আমিনবাজার পৌঁছে সেখান থেকেই গাড়ি ধরবেন। শহিদুল বলেন, সরকার কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দিলেও আমাদের পরিবার প্রয়োজন গ্রামের বাড়িতে থাকায় তাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্যই গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। কষ্ট হলেও যেতে হবে।
শহিদুলের মত শত শত মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে পায়ে হেঁটে আমিন বাজার ব্রিজ পার হয়ে ওপারে যাচ্ছেন।
রাজধানীর বাবুবাজার এলাকাতেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। লোকজন ব্রিজ পার হয়ে কেরানীগঞ্জের কদমতলী চৌরাস্তায় গিয়ে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। এখানেও ভোর থেকেই ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। এখানে ছোট যানবাহনের ভিড় বেড়েছে। এসব যানবাহন এই লোকজন ঘরে ফিরছে। ছোট যানবাহনগুলোই এখন গণপরিবহনে রূপ নিয়েছে।
সড়কে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ঢাকা-গাজীপুর সড়ক, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আজ সকাল থেকে ঘরমুখো মানুষ ও তাদের বহনকারী যানবাহনের চাপ ব্যাপকহারে বেড়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে দৌলোদিয়া- পাটুরিয়া, ও শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে ছোট যানবাহনের ভিড় বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধির কোনো ধরনের তোয়াক্কা না করেই লোকজন ঘরে ফিরছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই ফেরি ঘাটে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। মানুষ ও যানবাহনের চাপের কারণে আজ থেকে আরো দুটি ফেরি বাড়ানো হয়েছে। এতদিন এখানে চারটি ফেরির মাধ্যমে পণ্যবাহী ও জরুরি যানবাহন পারাপার করা হতো। মানুষের চাপের কারণে ফেরি পারাপারের সময় গাদাগাদি করে লোকজন অবস্থান নেয়। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি কারও কোনো খেয়াল নেই।
শিমুলিয়া ফেরিঘাটে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। এ কারণে এই ঘাটে স্পিড বোটে পদ্মা নদী পারাপার পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বড় যানবাহন না থাকলেও ফেরিগুলোতে ছোট যানবাহন এবং মানুষের ভিড় আজ সকাল থেকেই বেড়েছে। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে ফেরিগুলো চলাচলও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নজর এড়িয়ে কোনো কোনো জেলা থেকে কিছু আন্তঃজেলা রুটের বাস চলাচল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহসহ কয়েকটি জেলায় ভোরের দিকে এবং সন্ধ্যার পরে আন্তঃজেলা বাস চলাচল করছে। আবার নরসিংদী থেকেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাজীপুর, জামালপুর ও ও কুমিল্লা শহরের আন্তঃজেলা বাস চলাচল করছে বলে জানা গেছে।