বাংলাদেশেরও কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিও’র প্রধান ওকোঞ্জ আইউইলা। তিনি জানান, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও টিকা উৎপাদনে সক্ষম। গত সপ্তাহে ডব্লিউটিও’র সাধারণ পরিষদের বৈঠকে দেয়া বক্তব্যে তিনি করোনার টিকাসহ অন্যান্য সব প্রযুক্তির মেধাস্বত্ব বাতিলের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশের যে সক্ষমতা আছে, সেটি কয়েক মাসের মধ্যে পরিবর্তন করে টিকা তৈরির উপযোগী করা সম্ভব।
রোববার ঢাকা ও জেনেভার কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য জনেভায় গত ৫-৬ মে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার জেনারেল কাউন্সিলের বৈঠকে কোভিড পরিস্থিতিতে টিকা ও অন্যান্য মেডিকেল সামগ্রীর মেধাস্বত্ব বাতিলের ওপরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। বৈঠকে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত না হলেও এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে সম্মতি দিয়েছে কাউন্সিল।
এ বিষয়ে শনিবার ঢাকা ও জেনেভার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সব প্রযুক্তির মেধাস্বত্ব বাতিলের প্রস্তাব বাংলাদেশ সমর্থন করে। ঢাকা আশা করে, মেধাস্বত্ব বাতিল করার মাধ্যমে বর্তমানে যে সংকট চলছে, সেটির উত্তরণের পথে সহায়ক হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বর্তমানে মেধাস্বত্ব সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু সেটি শুধু ওষুধের জন্য, অন্য কোনো মেডিকেল সামগ্রীর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের যদি ফর্মুলা, কাঁচামাল ও উৎপাদন প্রক্রিয়া জানানো হয়, তবে আমরা বিনা অর্থে ও বিনা বাধায় সেটি উৎপাদন করতে পারবো। কিন্তু সমস্যা হবে টিকা তৈরি করার পর যে বোতলে এটি সংরক্ষণ করা হবে, সেটির যদি প্যাটেন্ট নেয়া থাকে, তবে তার জন্য অর্থ দিতে হবে। অর্থাৎ শুধু ওষুধ বানানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এই সুবিধা ভোগ করে।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণে এবং স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো যাতে টিকাসহ এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সব মেডিকেল সামগ্রী তৈরি করতে পারে, তার জন্য মেধাস্বত্ব বাতিলের প্রস্তাবটি নিয়ে সমমনা অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ বলে তিনি জানান।
এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপনে গত এক বছর ধরে সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ কাজ করছে জানিয়ে সরকারের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য দামে এবং সঠিক সময়ে টিকা এবং অন্যান্য পণ্য যেন সব স্বল্পোন্নত দেশগুলো পায়।
এ বিষয়ে গত বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় একটি রেজুলেশন নেয়া আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরপরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না।
মেধাস্বত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের অবস্থান নমনীয় হলেও জার্মানি, সুইডেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান এর বিরোধী।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে, যুক্তরাষ্ট্র মেধাস্বত্ব রহিতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া ও চীনের অবস্থান এর পক্ষে।
উল্লেখ্য, যেসব দেশ এখন পর্যন্ত কার্যকর টিকা আবিষ্কার করতে পেরেছে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের কোম্পানি রয়েছে।
মেধাস্বত্ব বাতিলের প্রস্তাব গৃহীত হলে বাংলাদেশ টিকা তৈরির পাশাপাশি অন্যান্য যেকোনো মেডিকেল সামগ্রী কোনো রয়্যালটি দেয়া ছাড়াই বানাতে পারবে।
সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ওষুধ ছাড়াও হাজার ধরনের সামগ্রী বানানো হয়, যার পেটেন্ট রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ হলেও এই প্যাটেন্টসম্পন্ন মেডিকেল সামগ্রী তৈরি করতে গেলে অর্থ খরচ করতে হবে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোকে।
তিনি বলেন, যদি একটি প্যাকেজের অধীনে টিকা উৎপাদনসহ অন্যান্য সব ধরনের মেডিকেল সামগ্রী উৎপাদনের সুবিধা পাওয়া যায়, তবে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনুযায়ী যেকোনো পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব এবং সেগুলো রফতানিও করা সম্ভব কোনো বাধা ছাড়াই। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী স্বল্পমূল্যে এবং দ্রুততম সময়ে করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছানো সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিশেষজ্ঞরা।