স্টাফ রিপোর্টার : মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি কমিয়ে বাজারমূল্যের ১০ শতাংশের নিচে নামানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ হয়ে প্রস্তাবটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিবন্ধন ফি মোটরসাইকেলের বাজারমূল্যের ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা যায় কি না সে বিষয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিআরটিএ প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সেখানে অনুমোদনের পর তা কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।’
বিআরটিএর প্রস্তাব অনুযায়ী, ১০০ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি মোট দামের ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ১০০ সিসির বেশি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি মোট মূল্যের ৪ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে। মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের ক্ষমতা এবং গড় বাজারমূল্যের ওপর ভিত্তি করে এই ফি ধরা হয়েছে। ১০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেলের গড় বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। ১০০ সিসির বেশি মোটর সাইকেলের গড় বাজারমূল্য ধরা হয়েছে দুই লাখ টাকা।
বতর্মানে ১০০ সিসির মোটরসাইকেলের মূল নিবন্ধন ফি ৪ হাজার ২০০ টাকা। এর সঙ্গে সড়ক করসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে দুই বছর মেয়াদের জন্য ১০ হাজার ৫৮৯ টাকা দিতে হয়। আর ১০০ সিসির বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেলের জন্য মূল নিবন্ধন ফি ৫ হাজার ৬০০ টাকা। অন্যান্য খরচ ১৩ হাজার ৫৯০ টাকা। বিআরটিএর প্রস্তাব অনুযায়ী, ১০০ সিসির নিচে মোটরসাইকেলের মূল নিবন্ধন ফি ৪ হাজার ২০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা এবং ১০০ সিসির বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেলের মূল নিবন্ধন ফি ৫ হাজার ৬০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার হাজার টাকা করা হবে। সড়ক কর, পরিদর্শন ফি এবং নম্বর প্লেট, ডিআরসি, সম্পূরক কর কমিয়ে ১০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল ৭ হাজার ৫২৯ টাকা এবং ১০০ সিসির বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেলের জন্য নিবন্ধন ফি ৯ হাজার ৮৫২ টাকা করার প্রস্তাব করেছে বিআরটিএ। সে হিসাবে ১০০ সিসির মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ১০০ সিসির ওপরে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ কমছে।
গত ১৫ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আশপাশের দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি বেশি। নিবন্ধন ফি কমাতে বাংলাদেশ মোটরসাইকেল ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন দাবি জানিয়ে আসছিল। এ ছাড়া জাপান দূতাবাস থেকেও এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।’ গত ১৬ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের সভাপতিত্বে ‘বাংলাদেশ-জাপান যৌথ সরকারি-বেসরকারি অর্থনৈতিক সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি বাজারমূল্যের ১০ শতাংশের মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিআরটিএকে মতামত দিতে বলা হয়। বিআরটিএ প্রস্তাবে বলেছে, বিভিন্ন মোটরযানের বিদ্যমান নিবন্ধন ফি সবশেষ ২০১৪ সালে এবং সড়ক কর সবশেষ ২০০৮ সালে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এটি পুনর্নির্ধারণ করা হয়নি।
বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বেলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএমএ) সভাপতি হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘একটা মোটরসাইকেলের মোট দামের তুলনায় নিবন্ধন খরচ বেশি। কিন্তু প্রাইভেটকারের নিবন্ধন খরচ মোটরসাইকেলের তুলনায় অনেক কম। এ কারণে নিবন্ধন ফি গড়ে ৪ হাজার টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছিলেন তারা।’ তিনি আরও বলেন, ‘মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি ১৪ শতাংশের মতো, প্রাইভেটকারের জন্য দিতে হয় প্রায় ৩ শতাংশ। আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এটা মোটরসাইকেল ব্যবহাকারীদের প্রতি অবিচার। মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরা প্রাইভেটকার ব্যবহারকারীদের চেয়ে আর্থিকভাবে পিছিয়ে আছেন। কিন্তু তাদের ওপরেই নিবন্ধন ফি’র বোঝা চাপানো হয়েছে। এ কারণেই আমরা ফি কমানোর দাবি করেছি।’
প্রত্যাশা অনুযায়ী না হলেও মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি কমানোর প্রস্তাবকে স্বাগত জানান রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘আমরা যে রকম চেয়েছিলাম সে ধরনের হয়নি, কিন্তু যাই হোক, যেটুকুই কমায় তাতে অখুশি হওয়ার কিছু নাই।’