প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তিসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। অন্য দাবিগুলো হচ্ছে— রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ; হেনস্তাকারী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তি প্রদান এবং সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত ‘অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি চাই ও স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটে শাস্তি চাই’ শীর্ষক এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়।
মানববন্ধনে ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, রোজিনা ইসলাম অপরাধ করেননি। তার বিরুদ্ধে আজকে যারা বেআইনিভাবে মামলা দিয়েছেন এবং গ্রেফতার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো এবং তাদের বিচারের দাবিতে আমরা আজকে সমবেত হয়েছি। রোজিনার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে, তিনি তথ্য বা গোপন নথি চুরি করেছিলেন। কোন তথ্যের কথা বলা হচ্ছে ? তিনি তো সেখানে টাকা-পয়সা চুরি করতে যাননি, সেখানে কম্পিউটার চুরি করতে যাননি। তাদের কথা যদি আমি মেনে নিই, তাহলে তিনি তথ্য চুরি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই তথ্য তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, সে তথ্য জনগণের। কর্মকর্তারা জনগণের যে তথ্য গোপন করে রেখেছিলেন সেটি নিয়ে জনগণকে উপহার দেওয়ার জন্য রোজিনা গিয়েছিলেন। যখন প্রধানমন্ত্রী অবাধ তথ্য অধিকার আইন জাতীয় সংসদে ২০০৯ সালে পাস করেছিলেন, তারপরে এই অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট অবাধ তথ্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি থাকতে পারে না। তাই আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তিনি ওই আইনটি পাস করেছিলেন। এর আগে কোনো সরকার অবাধ তথ্য অধিকার আইন পাস করেনি।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র রোজিনার মুক্তি নয়, সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য, সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নিরঙ্কুশ করার জন্য সাংবাদিক সংগঠনগুলো শনিবার বাস্তবসম্মত গ্রহণযোগ্য কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, আমাদের সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, রোজিনা ইসলামের এই ঘটনায় অতিরিক্ত সচিব মূল অভিযুক্ত। তিনি নিজে রোজিনাকে হেনস্তা করেছেন, তার গায়ে আঘাত করেছেন। অতিরিক্ত সচিবের তদন্ত করার জন্য যুগ্মসচিব দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি একটি হাস্যকর ঘটনা।
তিনি আরও বলেন, সচিবালয়ের মতো একটি জায়গায় পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। রোজিনা ইসলামকে ছেড়ে দিলেও তিনি পালিয়ে যেতে পারতেন না। তাহলে একটি ঘরে কেন তাকে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হলো? সচিবালয়ে যে রিপোর্টাররা কাজ করেন তাদের একটি সংগঠন রয়েছে। তারা সচিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সম্ভব হয়নি। সচিব এমন কোনো লাট-বাহাদুর হননি।
সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের যখন যেটা লাগবে তখন সেই ফাইল, ফাইলের পাতা নিজে ছিঁড়ে দিয়ে দেন। এই ফাইলের পাতাগুলো আপনারা না দিলে কোত্থেকে আসে? এমনকি যেখানে আপনার স্বার্থ আছে সেই ফাইলের পাতা আপনি সাংবাদিকের বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসেন। আপনারাই সর্বপ্রথম অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেন এবং এর জন্য দায়ী হবেন আপনারাই। আর আপনারা অনেক বড় ফাইলের কথা বলছেন। এপিএসের রুমে আপনারা সিক্রেট ফাইল রেখে ঘোরাফেরা করেন, আপনারও তো ওই পদের উপযুক্তই নয়। আপনাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনার জন্য একটা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। তাতে সচিব বা রোজিনা, যেই অপরাধী হোক না কেন অবশ্যই শাস্তি মাথা পেতে নেব। কিন্তু তদন্ত কমিটি খুঁজতে হবে নিরপেক্ষ, স্বাধীন, প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত এবং সেখানে অবশ্যই সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, আমরা বেশি কিছু চাই না। আমরা রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি চাই, মামলা প্রত্যাহার চাই হেনস্তাকারীদের শাস্তি এবং এই ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি চাই। যাতে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ থাকবে।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু প্রমুখ।