স্টাফ রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের তুলনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাস্যকর কথা বলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার কী হাস্যকর, কী অদ্ভুত কথা এবং কী লজ্জার কথা বলেছেন। আমেরিকার নির্বাচন কমিশনের চেয়েও, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন উন্নত। কেন? তারা পাঁচদিনেও ফলাফল ঘোষণা করতে পারে না, সেটা এখানে (ইসি) পাঁচ মিনিটেই করতে পারে। এটা তো এজন্য পারবেন যে ফলাফল আগেই তৈরি থাকে। সুতরাং আপনারা তা ঘোষণা করে দেন।’
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে ‘নজীরবিহীন সন্ত্রাস ও ভোট জালিয়াতি করে সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা এবং বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে’ অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। আগামীকাল রোববারও একই দাবিতে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগর সদরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনের লাজ-লজ্জা বলতে কিছু নেই। হায়াটুকুও নেই। লজ্জা সরম থাকলে অনেক আগেই পদত্যাগ করে চলে যেত। তারা বর্তমান সরকারের ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করছে। জনগণ নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে এত সন্ত্রাস, এত কারচুপি, ভয়ভীতি প্রদর্শনের পরও ১৪ শতাংশের বেশি ভোট নির্বাচন কমিশন দেখাতে পারেনি।
শেখ হাসিনা সরকার থাকলে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সেই জন্যই সরকারকে বলব, পদত্যাগ করুন। অন্যথায় প্রত্যেকটি স্বৈরাচার ও কর্তৃত্ববাদী সরকার যেভাবে বিদায় নিয়েছে সেভাবে আপনাদেরও বিদায় নিতে হবে।’
সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ২৯ ডিসেম্বর রাতে, পরবর্র্তী সব নির্বাচন তারা লুট করে নিয়ে গেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর থেকে জনগণের আস্থা দিনে দিনে ক্রমেই হারিয়ে গিয়ে শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে- তা ভোটার উপস্থিতি দেখলেই বুঝতে পারা যায়। তিনি আরও বলেন, ‘এই সভা থেকে দাবি করছি, দলের যেসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিন। উপনির্বাচনে যে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে তা বানোয়াট-এই ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি শেখ হাসিনা সরকার থাকলে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না।’
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বিএনপি কোনো সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। এটি একটি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই প্রত্যেকটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে। অন্য কোনো উপায়ে সরকার পরিবর্তনের কথা চিন্তাও করি না, ভাবিও না।’
বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা-১৮ আসনের পরাজিত প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা আকরামুল হাসান মিন্টু, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ফখরুল ইসলাম রবিন ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, আশরাফুল আলম লিঙ্কন, হাফিজুর রহমান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।