ঘূর্ণিঝড় আইলা, ইয়াস, বৃষ্টি, ঝড়ো বাতাস, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খড়া এবং জলোচ্ছ্বাস দেশের কোন এলাকায় হতে পারে এর আগাম বার্তা দিতে পারে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর আগাম প্রস্তুতি নিতে পারেন মানুষ। কিন্তু ভূমিকম্পের ব্যাপারে আগাম সতর্কবার্তা খুব একটা জানা যায় না। সেজন্য মানুষ ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে যেমন পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারেন না, অন্যদিকে মানুষের মনে আতঙ্ক দেখা দেয়। ইতোমধ্যে সিলেটে শনিবার (২৯ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চারবার ভূমিকম্প হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বড় ভূমিকম্প নিয়ে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বড় ভূমিকম্পের আগে ও পরে ছোট ছোট ভূমিকম্প হতে পারে। সিলেট ভূমিকম্পের অধিক ঝূঁকিপূর্ণ এলাকাভুক্ত বিধায় বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে ছোট ছোট একাধিক ভূমিকম্প হওয়ার কয়েক ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হওয়ায় আপাতত বড় ধরনের কিছু হওয়ার শঙ্কা নেই।
সিলেটে ভূমিকম্পের বিষয়ে আবহাওয়া অফিস জানায়, একদিনে চারবার ছোট ছোট ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের উৎসস্থল দেশের বাইরে।
ভূমিকম্পের নিয়ে সিলেট এলাকার বাসিন্দা লিয়াকত সিকদার বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যখন ভূমিকম্প অনুভূত হয় তখন মানুষের মনে তেমন আতঙ্ক ছিল না। কিন্তু ফের ১১টার দিকে ভূমিকম্প হয় তখন ভয়ের মধ্যে ছিলেন মানুষ। ধাপে ধাপে কয়েক দফায় ভূমিকম্প হওয়ায় নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার জন্য মানুষ এদিক-সেদিক ছুঁটাছুটি করতে থাকেন। সিলেটের বাসিন্দারা এখনও ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
ভূমিকম্পের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, সিলেটে ছোট ছোট যে ভূমিকম্পের অনুভূতি হয়েছে এর উৎসস্থল দেশের বাইরে মেঘালয়ের ডাউকির দিকে। এর কম্পন অনুভব করছে সিলেট। শঙ্কার কিছু নেই। মৃদু ভূমিকম্প বা ছোট ভূমিকম্প হয়, বড় ভূমিকম্প হওয়ার আগে আগে।
তিনি বলেন, আমার ধারণা ছোট ছোট ভূমিকম্প হলে, তার কিছুক্ষণ পর বড় ভূমিকম্প হয়। কিন্তু সিলেটে সেটি হয়নি। সুতরাং এখানে ভয়ের কিছু নেই। বড় ভূমিকম্প এখনই হচ্ছে না।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ভূমিকম্প এলাকা হিসেবে পুরো দেশকে তিনটা জোনে ভাগ করা হয়েছে তা হল- অধিক ঝূঁকিপূর্ণ, মধ্যম ঝূঁকিপূণ এবং কম ঝূঁকিপূর্ণ। সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল অধিক ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে পড়েছে। তাই এই দুই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাস নেই এবং ১২০ থেকে ১২২ বছর পূর্বে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল, তাই এর সম্ভাবনা উড়িয়ে যায় না। সুতরাং বড় ভূমিকম্প হতেই পারে।
সিলেটের ভুমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মেট্রোলজিস্ট মমিনুল ইসলাম জানান, সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে যে ভূমিকম্প হয়েছে রিখটার স্কেলে সেটা ছিল ৩ দশমিক শূন্য। দ্বিতীয় ঝাঁকুনি ১০টা ৫০ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে হয়েছে, রিখটার স্কেলের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। তৃতীয়টা ১১টা ২৯ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে ২ দশমিক ৮ মাত্রায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। চতুর্থটি ২টার দিকে যে ভূকম্পন অনুভূত হয়, সেটার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক শূন্য। চারটির উৎপত্তিস্থলই ঢাকা থেকে প্রায় ১৯৬ কিমি উত্তর পূর্বে।
মমিনুল ইসলাম বলেন, সিলেটে এমন ভূমিকম্প আর কখনও হয়নি। সিলেট অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশে। ডাউকি ফল্টের কারণে সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। যে কারণে জৈন্তাপুর সীমান্তের দিকেই এর উৎপত্তিস্থল।