বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের বাদ রাখতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ প্রত্যাখ্যানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি উঠেছে সংসদে। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মঙ্গলবার জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অনির্ধারিত আলোচনায় এ দাবি তুলেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই সুপারিশের প্রসঙ্গ টেনে শিরীন আখতার বলেন, আমি বিস্মিত, হতবাক, ব্যথিত— এমন বিষয় আমার সহকর্মীরা উত্থাপন করতে পেরেছেন। সংবিধানে বলা আছে— নারী-পুরুষে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। সেই দেশে যখন এ ঘটনা ঘটে, তখন আমরা স্তব্ধ হয়ে যাই। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা প্রশাসন। ডিসি বা ইউএনও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন। নারী কর্মকর্তাদের গার্ড অব অনারে উপস্থিত থাকার বিষয়ে আপত্তি তুলেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। রোববার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা ওঠার পর সরকারের কাছে সুপারিশ রাখা হয়েছে গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের বিকল্প খুঁজতে। সংসদীয় কমিটির এ সুপারিশের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নারী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠেছে সমালোচনা।
সংসদে শিরীন আখতার বলেন, সংসদীয় কমিটিতে যুক্তি এসেছে নারী যেহেতু জানাজায় অংশ নিতে পারে না, সে জন্য গার্ড অব অনারে নারী যাতে না থাকে সেই সুপারিশ এসেছে। জানাজা এবং গার্ড অব অনার এক নয়। আমি এ রকমও শুনেছি— এক জেলায় একজন স্মারকলিপি দিয়েছে কোনো হিন্দু যাতে মুসলমান মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান না জানায়। ‘যখন দেশজুড়ে মৌলবাদের আস্ফালন দেখা যাচ্ছে, তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কাছ থেকে এমন সুপারিশ এসেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি, যাতে এ রকম কলুষিত সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়।’ এর আগে জাসদ সভাপতি সাংসদ হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার সোমবার এক বিবৃতিতে সংসদীয় কমিটির সুপারিশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এ সুপারিশ সংবিধানবিরোধী, চরম নারীবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক।’