শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

অনলাইন সেমিনারে সংসদ সদস্যসহ নাগরিক প্রতিনিধিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১
  • ২৩৩ পাঠক পড়েছে

দূর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলের উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে

অনলাইন সেমিনারে সংসদ সদস্যসহ নাগরিক সংগঠন ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে একের পর এক দূর্যোগ আঘাত হানছে। ফলে সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। তাই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে সরকারের সকল উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়বে। এজন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।
আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সংস্থা কেএনএইচ জার্মানী ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ফেইথ ইন এ্যাকশন আয়োজিত এই সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। আলোচনায় অংশ নেন খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, খুলনার পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, কেএনএইচ জার্মানীর প্রতিনিধি মাটিলদা টিনা বৈদ্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, পার্লামেন্ট নিউজ সম্পাদক সাকিলা পারভীন, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ইমাম হাসান, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল, স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা, সচেতন সংস্থার সানজিদুল হাসান, সাংবাদিক আব্দুল আজিজ ও রিয়াদ হোসেন, উন্নয়ন কর্মী কামাল হোসেন, শ্যামনগরের হাফিজুর রহমান ও সুষমা হালদার, কয়রার শামীমা আক্তার প্রমূখ। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন ফেইথ ইন এ্যাকশনের নির্বাহী পরিচালক নৃপেন বৈদ্য।
আলোচনায় অংশ নিয়ে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই উন্নয়নের ঢেউ উপকূলীয় অঞ্চলেও পৌছেছে। কিন্তু ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে সেই উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়েছে। এর কারণ ষাটের দশকে নির্মিত উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। জলবায়ু পরিবর্তন, নদী ভরাটসহ নানান কারণে বর্তমানে দীর্ঘ দিনের পুরাতন এই বেড়িবাঁধ উপকূলের সুরক্ষা দিতে পারছে না। এখন পরিকল্পিতভাবে নতুন বাঁধ তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে স্থায়ী ড্রেজিং-এর ব্যবস্থা যেমন রাখতে হবে, পর্যায়ক্রমে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। আর উপকূলের সব ধরণের সমস্যা সংকট নিয়ে কাজ করার জন্য পৃথক একটি বোর্ড বা সংস্থা গঠন করা দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেমন অবিবার্য হয়ে উঠেছিলো, ঠিক তেমনি দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ এখন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, প্রতি বছর কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে এই অঞ্চল। এবছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সরাসরি আঘাত না করলেও উপকূলের বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। অসংখ্য মানুষ এলাকা ছাড়া হতে বাধ্য হচ্ছে। উপকূল অঞ্চল থেকে আদায় হওয়া রাজস্বের একটি অংশ উপকূলের জনপদ সুরক্ষায় ব্যয় করার আহ্বান জানান তিনি। উপকূলের ঝুঁকি মোকাবেলায় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে মাটিলদা টিনা বৈদ্য বলেন, বাঁধ ব্যবস্থাপনার অভাবে এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় অঞ্চল এখন ভয়াবহ সংকটের মুখে। এই সংকট মোকাবেলায় সস্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার মধ্যে গত বছর সুপার সাইক্লোন আম্ফান ও এবছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। অথচ টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি। শতাধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই চলতি ঝড়ো মৌসুমে চরম ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ওই অঞ্চলের জনগণ। সেমিনারে উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে পৃথক বোর্ড গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ঝুঁকিতে থাকা বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষনে স্থানীয় সরকার ও জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারসহ প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
উপকূলীয় জনগণের নিরাপদ খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। দূর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা নারী ও শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিতে হবে। লবণাক্ত ও খরা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন, লবন সহনশীল কৃষিকাজ ও বিকল্প জীবিকায়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। এসকল কাজের জন্য জাতীয় বাজেটে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580