এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নিয়ে সাধারণ গ্রাহকের একাউন্ট খোলা হয়। সেসব একাউন্টের বিপরীতে এটিএম কার্ড নিয়ে রেখে দেওয়া হয় নিজেদের কাছে। পরে ওই এটিএম কার্ডে ২০ হাজার টাকা জমা করা হয়। ওই টাকা এটিএম বুথ থেকে উঠানোর সময় সার্ভার হ্যাং করে, লেনদেন আনসাকসেসফুল দেখিয়ে ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয় দ্বিগুন টাকা। এভাবে অভিনব কৌশলে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান।
এ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার এন্ড সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিট। তবে, এ চক্রের মূলহোতা ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এডিসি ডিভিশন ঢাকার সিনিয়র অফিসার মীর মো. শাহারুজ্জান ওরফে রণি বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন।
এসময় তিনি বলেন, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দায়ের করা একটি মামলার তদন্তে নেমে এ চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো- সায়মা আক্তার, আল-আমিন বাবু, মেহেদি হাসান ওরফে মামুন ও আসাদুজ্জামান আসাদ। এ চক্রের মূলহোতা ব্যাংকটির আইটি বিভাগের কর্মকর্তা রনি পলাতক রয়েছে। এছাড়া অন্য সদস্যকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
টাকা আত্মসাতের কৌশল সম্পর্কে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তার আসাদ বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নেয়। পরে সাধারণ গ্রাহকের একাউন্ট খুলে দিয়ে সেই একাউন্টের বিপরীতে এটিএম কার্ড নেয়। ওই এটিএম কার্ড বাবুর কাছে বিক্রি করে। মূলহোতা রনির সহযোগী বাবু। পরে ওই এটিএম কার্ডে ১০-২০ হাজার টাকা জমা করা হয়। এরপর টাকা উঠানোর জন্য এটিএম বুথে যাওয়া হয়। বুথে প্রবেশ করার আগে বাবু ফোন দেয় রনিকে। তখনই প্রধান অফিস থেকে সার্ভার স্থগিত করে দেয় বাবু। পরে এটিএম বুথে ২০ হাজার টাকা বের করা হয়। কিন্তু এটিএম বুথে সাকসেসফুল লেনদেনে আনসাকসেসফুল দেখায়। ওই ২০ হাজার টাকা নেয়ার পর একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিছে কিন্তু টাকা বের হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়। পরে সফটওয়্যারে টাকা বের হওয়ার প্রমান না পাওয়ায় অভিযোগের ভিত্তিতে আবারো ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এভাবে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় দেশের বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে। কিন্তু একটি এটিএম কার্ড একবারের বেশি ব্যবহার করা হতো না। পরে অডিটে বিষয়টি ধরা পড়লে গত বছরের নভেম্বরে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার তদন্তে পুরো কৌশল বেড়িয়ে আসে।
আত্মসাতের টাকা কি করা হয়েছে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান আরও বলেন, রনির স্ত্রীর একাউন্টে কিছু টাকা রাখা আছে, বাকি টাকা কোথায়, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সহসভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে দুইবার এ ধরনের প্রতারণা করা হয়। সবচেয়ে বেশি করা হয়েছে ২০১৯ সালে। ব্যাংকির অডিটে বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে মামলা দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তা রনি কবে শেষ অফিস করেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২ মাস আগে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান রনি। এরপর আর তার কোনো খোঁজ জানি না।