আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ চারজন নিখোঁজের ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ চারজন ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে রংপুরে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। রংপুর মহানগর পুলিশের সঙ্গে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশও এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।’
রংপুর থেকে ফেরার পথে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় গত ১০ জুন বৃহস্পতিবার ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নিখোঁজ হয়েছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তাঁর সঙ্গে নিখোঁজ হন গাড়ির চালকসহ আরও দুজন।
স্বামীকে উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে আবু ত্ব-হার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রধানমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাঁর আবেদন, ‘আমার স্বামীকে উদ্ধার করে দিন।’
সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘আমার স্বামী সম্পূর্ণ নির্দোষ। তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তারপরেও যদি তিনি রাষ্ট্রের কোনো আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে থাকেন কিংবা কোনো অপরাধে যুক্ত থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনে তাঁর বিচার হোক। আইন অনুযায়ী বিচারে তাঁর যে শাস্তি হয় আমরা মাথা পেতে মেনে নেব।’
ত্ব-হার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে স্ত্রী বলেন, ‘চারজন মানুষকে গাড়িসহ নিয়ে যাওয়া কারও ব্যক্তিগত বিষয় হতে পারে না। রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পথে বিকেল ৪টার দিকে তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয়। দুটি মোটরসাইকেল তাঁদের অনুসরণ করছিল। তিনি (ত্ব-হা) বলছিলেন, দোয়া করো যেন কিছু না হয়। এর ২০ থেকে ২৪ মিনিট পর ফোন করে জানান, বাইকগুলো চলে গেছে।
‘ঘটনার দিন বিকেল ৩টার দিকে বগুড়ার একটি প্রোগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন ত্ব-হা, তাঁর দুই সহযোগী ও প্রাইভেটকারচালক আমির। উদ্দেশ্য ছিল প্রোগ্রাম শেষে তিনি ঢাকায় আমার কাছে আসবেন। কিন্তু বিকেল ৪টার দিকে আমি তাঁকে ফোন করে বলি রাতে বাসায় ফিরে কী খাবা, কী রান্না করব? এর জবাবে তিনি (ত্ব-হা) বলেন, আমাদের প্রাইভেটকারের পেছনে দুটি বাইক ফলো করছে। আমার জন্য দোয়া করো, আমি যেন ঠিকভাবে বাসায় পৌঁছাতে পারি। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি নিজেই আমাকে ফোন করে বলেন, বাইক দুটি আর দেখা যাচ্ছে না। তুমি রান্না করো, আমরা চারজন বাসায় এসে ভাত খাব।’
সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘ত্ব-হার সঙ্গে যখনই কথা হয়, তখনই তিনি লোকেশনসহ আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে স্ক্রিনশট পাঠান। ওইদিনও একাধিকবার আমাকে লোকেশন পাঠিয়েছেন। দিবাগত রাত ২টার দিকে সর্বশেষ আমি তাঁকে ফোন করি। কিন্তু তিনি ঘুমানোর কারণে আমার ফোন রিসিভ করতে পারেননি। ঘুম ভাঙার পরে দিবাগত রাত ২টা ৩৭ মিনিটে একটা ম্যাপ শেয়ার করেন। তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। এরপর তাঁর মেসেজ দেখে ঘুম থেকে উঠে খাবারের ব্যবস্থা করতে যাই। তাঁর ম্যাপে দেখাচ্ছিল বাসায় পৌঁছাতে ১৮ মিনিট লাগবে। এরপর অপেক্ষা করতে করতে দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাঁর নম্বরে ফোন করি। কিন্তু তখন থেকেই তাঁর মোবাইল বন্ধ পাই। এরপর প্রাইভেটকারচালক আমিরের নম্বরে ফোন করি। তাঁর মোবাইলও বন্ধ পাই। তখন আমার সন্দেহ হয়। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে ভোর ৫টা বেজে যায়।’
সাবিকুন্নাহার আরও বলেন, ‘আমার স্বামী জিও পলিটিক্স নিয়ে কথা বলতেন। তাঁর নিখোঁজের বিষয়টি ইন্টারন্যাশনাল গোয়েন্দাদের হতে পারে। বিশ্বের সব মুসলিম আল-আকসা মসজিদকে ভালোবাসে। তিনিও তাঁর ভালোবাসার জায়গা থেকে ফিলিস্তিন ও মসজিদুল আকসা নিয়ে বক্তব্য দিতেন।’
সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘আমি হাতজোড় করে বলব আপনাদের কাছে, আমার এই নিউজটা, আপনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছে দিন। আমি হাতজোড় করে বলব, আমি আপনাদের বোন, আমি উনাকে (ত্ব-হা) অনেক ভালোবাসি। আমি আপনাদের বোন, জাস্ট আমি উনাকে ফিরে পেতে চাই। আপনারা সবাই আমাকে একটু হেল্প করবেন।’
ছেলেকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ত্ব-হার মা আজেদা বেগম। তিনি বলেন, ‘আজকে পাঁচদিন হয়ে গেল তাঁর কোনো খোঁজ-খবর পাচ্ছি না। আমরা থানায় জিডি করেছি। প্রাইভেটকারে যাচ্ছিল। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন ছিল, ড্রাইভার ছিল। তাঁদেরও ফোন সুইচ অফ পাচ্ছি। তাঁদেরও কোনো সন্ধান নাই। আমি আমার ছেলের সন্ধান চাই।’
এদিকে গাজীপুরে এক অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, ত্ব-হার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেছেন, ‘ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা আদনানের কথা আমরা শুনেছি। আমরা দেখব এটা কোথায় কী অবস্থায় আছে। আমরা অবশ্যই তার ক্লু উদঘাটন করব।’
আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের সন্ধান চেয়ে রংপুরে মানববন্ধন করেছেন সিটির এলাকার সাধারণ মানুষ।