করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আগামী সোমবার (২৮ জুন) থেকে পরবর্তী সাত দিন সারাদেশে কঠোর লকডাউন জারি থাকবে।
শুক্রবার তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, লকডাউনে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী যান ব্যতীত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে শুধু যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবেন না। গণমাধ্যম লকডাউনের আওতা বহির্ভূত থাকবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আদেশ দিয়ে শনিবার (২৬ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আগামী এক সপ্তাহের জন্য আমরা কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) দেব, প্রয়োজন হলে আমরা সেটি আরও বাড়াব। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আগামীকাল প্রজ্ঞাপন দেওয়া হবে। আমাদের তথ্য অফিসার সেটি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এটি যাতে কঠোরভাবে প্রতিপালন হয়, সেজন্য বেশ কড়াকড়ি থাকবে। পুলিশ এবং বিজিবি থাকবে। এক সপ্তাহের জন্য সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থাকার সম্ভাবনা আছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানুষ অপ্রয়োজনে বাইরে আসবে না। তবে বাজেটের যে বিষয়টি আছে, এ সংক্রান্ত যে কার্যক্রমগুলো আছে, এনবিআর এবং ব্যাংক সম্পর্কিত যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। তাছাড়া সবই বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, জরুরি পরিষেবা ব্যতীত সবই বন্ধ থাকবে। আমরা কড়া বিধিনিষেধ দিতে চাই।
এর আগে, ২৪ জুন কোভিড-১৯ কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’- এর সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, দেশে কোভিড-১৯ রোগের ভারতীয় ডেল্টা ধরনের সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এর প্রকোপ অনেক বেড়েছে। এ প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ, পঞ্চাশটির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। এটি প্রতিরোধে খণ্ড খণ্ডভাবে নেওয়া কর্মসূচির উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অন্যান্য দেশ, বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা হলো, কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া এর বিস্তৃতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের মতামত অনুযায়ী, যেসব স্থানে পূর্ণ ‘শাটডাউন’ প্রয়োগ করা হয়েছে সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকাতে এবং জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধে কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করছে। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (২৫ জুন) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল দেশ। এদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৬ জনের। একদিনে সর্বাধিক ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনায়; ঢাকায় মারা গেছেন ২৫ জন।
২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৮৬৯ জন। মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮০৪ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল দেশে করোনায় সর্বাধিক ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার আগের দিন ১৮ এপ্রিল ১০২ জন মারা যান। এছাড়া ১৬, ১৭ ও ২৫ এপ্রিল ১০১ জন করে মারা যান।