১২৩ রানের ছোট লক্ষ্য। তাড়া করতে নেমে জয়ের নাগাল তো দূরের কথা, টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিন্ম ইনিংসের লজ্জা পেল অস্ট্রেলিয়া। সফরকারীদের উড়িয়ে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ।
সোমবার পাঁচ ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৬০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়ায় নেমে মাত্র ৬২ রানেই গুঁটিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টি এটাই তাঁদের সর্বনিন্ম স্কোর। টি-টোয়েন্টিতে এর আগের সর্বনিন্ম ছিল ৭৯ রান। সেটা ছিল ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৬ বছর পর এবার বাংলাদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিন্ম স্কোরের লজ্জা পেল অসিরা।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১২২ রান করে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ২৩ রান করেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। উইকেট আগের তুলনায় কিছুটা স্পোর্টিং হলেও ব্যাট হাতে সেভাবে সাফল্য পায়নি স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। ১২০ বলের খেলায় ৬১টি ডট বল ছিল বাংলাদেশের। রানের গতি ভালো ছিল শুধু প্রথম তিন ওভারেই। শেষ চার ওভারে ২৪ বলে ১৭টিই ছিল ডট।
স্লো উইকেটে রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় সফরকারীরা। দ্বিতীয় ওভারেই আগের ম্যাচে ঝড় তোলা ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ানকে ফেরান নাসুম। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে নাসুমের প্রথম বলটি দেখেশুনে পুল করার চেষ্টা করেন ক্রিস্টিয়ান। কিন্তু স্কিড করে বল আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। বোল্ড হয়ে ফিরেন যান অসি তারকা। ৩ বলে ৩ রান করেন ক্রিস্টিয়ান।
পরে আবার বল হাতে এসে আরেক ভয়ংকর ব্যাটসম্যান মিচেল মার্শকেও আউট করেন নাসুম। বাঁহাতি স্পিনারের বল স্লগ করতে চেয়েছিলেন মার্শ। টাইমিং ঠিক রাখতে পারেননি। জোরালো আবেদন তোলেন নাসুম। আবেদনে সাড়া দিতে দেরি করেননি আম্পায়ার। পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারিয়ে ৩১ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া।
অষ্টম ওভারে নিজের প্রথম স্পেল করতে আসেন সাকিব আল হাসান। এসেই তুলে নেন ম্যাথু ওয়েডের উইকেট। অসি অধিনায়ককে বোল্ড করে ফিরিয়ে দিলেন তিনি। ২২ বলে ২২ রান করেন উইকেটকিপার এই ব্যাটসম্যান।
সাকিবের পর এক ওভারেই একে একে দুই উইকেট নেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজে প্রথম খেলা সাইফউদ্দিন। প্রথমে ফেরালেন অ্যালেক্স ক্যারিকে, একই ওভারে আউট করেন হেনরিকেসকে।
সাইফউদ্দিনের জোড়া আঘাতের পর বল হাতে এসে নিজের দ্বিতীয় শিকার তুলে নেন সাকিব। আউট করেন অ্যাশটন টানারকে। দ্বিতীয় শিকার নিয়েই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০তম উইকেট নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বাংলাদেশি বোলারদের দাপটে বেশিদূর যেতে পারেনি অসিরা। ৬২ থেমে যায় অসিদের ইনিংস।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুটা দারুণ করে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গত চার ম্যাচে ওপেনিংয়ে খুব একটা সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। প্রতি ম্যাচেই হতাশ করেছেন সৌম্য-নাঈমের ওপেনিং জুটি। তাই শেষ ম্যাচে ওপেনিংয়ে পরিবর্তন আনে টিম ম্যানেজমেন্ট। সৌম্য সরকারের বদলে ওপেনিংয়ে সুযোগ দেওয়া হয় মেহেদী হাসানকে। ম্যানেজম্যান্টের আস্থা কিছুটা হলেও রেখেছেন তরুণ এই অলরাউন্ডার। নাঈমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ভালো সুযোগ এনে দিয়েছেন তিনি।
ইনিংসের প্রথম ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে শুরু করেন নাঈম। এরপর মেহেদী উইকেটে এসে এক রান নেন, পরে হাঁকান বাউন্ডারি। এরপর হাতখুলে খেলেন দুজন। কিন্তু দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় ফিরে যান তরুণ এই ব্যাটসম্যান। স্পিনার টার্নারের বলে শট হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি। ১২ বলে মেহেদী থামেন ১৩ রানে। ৪২ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি।
পাওয়ার প্লেতে ওই একটি উইকেটই হারায় বাংলাদেশ। ছয় ওভারে এক উইকেট হারিয়ে আসে ৪৬ রান। এরপর বাজে শট খেলতে গিয়ে উইকেট উপহার দিয়ে আসেন নাঈম। ড্যান ক্রিস্টিয়ানের বলে রিভার্স হিটের চেষ্টায় পয়েন্টে সহজ ক্যাচ তুলে দেন নাঈম। বাঁহাতি এই ওপেনার একটি করে ছক্কা ও চারে ২৩ বলে করেন ২৩ রান।
পাওয়ার প্লের পর রানের গতি কমে যায় বাংলাদেশের। এর মধ্যে নাঈমের পর উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না সাকিব। দশম ওভারে লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পার বল লেগে ঘুরে খেলতে চেয়েছেন সাকিব। কিন্তু লেগ মিডল স্টাম্পের বল ব্যাটে লাগেনি। এলবির আবেদন তোলেন অসিরা। তাতে সাড়া দিতে দেরি করেননি আম্পায়ার। ২০ বলে ১১ রান করে ড্রেসিং রুমে ফিরেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
এরপর উইকেটে এসে হতাশ করেছেন মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য। অ্যাগারের বলে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এক বাউন্ডারিতে ১৪ বলে ১৯ রান করেন তিনি। অন্যদিকে পজিশন বদলেও সেই ব্যর্থই হলেন সৌম্য। চার নম্বরে ব্যাট করেও হতাশ করলেন তিনি। ক্রিস্টিয়নের বল বাউন্ডারি মারতে গিয়ে লং অফে টানারকে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ১৮ বলে ১৬ রানে ফেরেন সাজঘরে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে বারবার সুযোগ পাওয়া সৌম্য সিরিজে মোট ৪ ম্যাচে করেছেন ২৮ রান। গত তিন ম্যাচের দুইটিতে করেছেন ২ রান করে, একটিতে করেন শূন্য আরেকটিতে আউট হন এক রানে।
পরপর উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে দায়িত্ব নিতে পারেননি নুরুল হাসান সোহানও। নাথান এলিসের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। দ্রুত উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ১২২ রানে থামে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১২২/ ৮ (মেহেদী ১৩, নাঈম ২৩, সাকিব ১১, সৌম্য ১৬, মাহমুদউল্লাহ ১৯, নুরুল ৮, আফিফ ১০, মুস্তাফিজ ০, সাইফ ০ , সৈকত ৪; জাম্পা ৪-০-২৪-১, অ্যাগার ৪-০-২৮-১, টার্নার ২-০-১৬-১, ক্রিস্টিয়ান ৪-০-১৭-২, সোয়েপসন ২-০-১৪-২, এলিস ৪-০-১৬-২)।
অস্ট্রেলিয়া : ১৩.৪ ওভারে ৬২/১০(ক্রিস্টিয়ান ৩, ওয়েড ২২, মার্শ ৪, ক্যারি ৩, ম্যাকডারমোর্ট ১৭, হেনরিকেস ৩, টার্নার ১, অ্যাগার ২, এলিস ১, সোয়েপসন , জাম্পা ; মেহেদী ৩-০-২০-০, নাসুম ২-০-৮-২, মুস্তাফিজ, ১-০-৩-০, সাইফউদ্দিন ৩-০-১২-৩, সাকিব ৩.৪-১-৯-৪)।
ফল : ৬০ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
সিরিজ : ৪-১ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ।