নির্বাচন কমিশন গঠন করতে সরকারকে আইন প্রণয়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন ৫২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে “আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে” নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও, গত ৫০ বছরে কোনও সরকারই এমন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।’
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে আশা করা হয়, সঠিক ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয় একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করবে। নাগরিক হিসেবে মতামত প্রদানের মাধ্যমে আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে পারি।
অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার ছাড়াও বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, এম হাফিজউদ্দিন খান, আকবর আলী খান, রাশেদা কে চৌধুরী, বিচারপতি আবদুল মতিন, এম সাখাওয়াত হোসেন, ড. হামিদা হোসেন, সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আলী ইমাম মজুমদার, আবু আলম শহীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ, দেবপ্রিয় ভট্টচার্য, খুশী কবির, অধ্যাপক পারভীন হাসান, ড. ইফতেখারুজ্জামান, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, ড. আহসান মনসুর, জেড. আই খান পান্না, শাহদীন মালিক, শিরিন হক, সালমা আলী, মুনিরা খান, শাহীন আনাম, ফারাহ কবির ও অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন প্রমুখ।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, গত দুটি নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে দুটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। এডহক ভিত্তিতে সৃষ্ট ওই দুটি অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে গঠিত রকিবউদ্দিন কমিশন ও নূরুল হুদা কমিশন তাদের চরম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের মাধ্যমে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের উপর ব্যাপক অনাস্থা এবং সুষ্টু নির্বাচনের ব্যাপারে তীব্র শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমান নূরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হবে, তাই নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের উদ্যোগ এখনই শুরু করতে হবে, বলে দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে। তাতে ওই ৫২ বিশিষ্ট নাগরিক অনুরোধ জানান- নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করতে পারেন- সে ব্যাপারে সংস্কার পদক্ষেপের কথা এখন থেকেই ভাবতে হবে।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, প্রস্তাবিত আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনারদের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারিত করতে ও একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের বিধান রাখতে হবে। গঠিত অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব হবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আইনে বিধৃত যোগ্যতার মানদন্ডের আলোকে কিছু সৎ, নির্দলীয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের একটি প্যানেল নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা।
এতে আরও বলা হয়, স্বচ্ছতার অংশ হিসেবে কোন কোন ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য অনুসন্ধান কমিটি প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করছে তাদের নাম প্রকাশ ও গণ শুনানির আয়োজন করা এবং কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের জন্য সে সব নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে তার একটি প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিধান আইনে রাখার দাবি জানান তারা।