পবিত্র ঈদুল আজহার যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ১৫৮টি দুর্ঘটনায় ২০৭ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় ৩৮৯ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
সোমবার প্রতিবেদনের তথ্য জানায় সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে বলা হয় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ৭৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮৭ জন। যা মোট নিহতের ৪২.০২ শতাংশ।
এই সময়ে ৪টি নৌ দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। ২টি রেলপথ দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দুর্ঘটনা নিহতের মধ্যে রয়েছে- মোটরসাইকেল চালক ও, আরোহী ৮৭ জন, বাসযাত্রী ১২ জন, ট্রাক-পিকআপযাত্রী আটজন, মাইক্রোবাস-প্রইভেটকারযাত্রী ১৩ জন, থ্রি-হুইলারযাত্রী (সিএনজি-ইজিবাইক-অটোরিকশা) ৩১ জন, নসিমন-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়িযাত্রী ১০, বাইসাইকেল আরোহী তিনজন আছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৫৯টি জাতীয় মহাসড়কে, ৬৬টি আঞ্চলিক সড়কে, ১৪টি গ্রামীণ সড়কে এবং ১৯টি শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনাসমূহের ৪৬টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৫৪টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৪২টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া এবং ১৬টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করার কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি জানায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোর ৬টায় ৯৬ শতাংশ, সকালে ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ, দুপুরে ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ, বিকেলে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং রাতে ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৩৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ৪৮ জন। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। ৪টি দুর্ঘটনায় নিহত চারজন। একক জেলা হিসেবে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৫টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। এখানে ১টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ হতাহত হয়নি।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহের মধ্যে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা এবং মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন জানায়।
এছাড়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো ও জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতাকে দায়ী করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২০ সালে ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৪ দিনে ১৮৭টি দুর্ঘটনায় ২২৯ জন নিহত হয়েছিল। এবারের ঈদুল আজহার আগে-পরে ১১ দিনে নিহত হয়েছেন ২০৭ জন। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছে ১৮.৮১ জন। এই হিসেবে প্রাণহানি বেড়েছে ১৫.০৪ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ১৬৯ জন, অর্থাৎ ৮১.৬৪ শতাংশ।
করোনার অতিমারিতে মানুষের যাতায়াত অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। তারপরেও দুর্ঘটনার এই হার উদ্বেগজনক। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে সড়ক পরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনার কারণে। এই পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন আইনের বাধাহীন বাস্তবায়ন অতীব জরুরি বলে জানায় সংগঠনটি।