শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দৈনিক আজকের সংবাদ পত্রিকার সংবাদ পড়তে এখন থেকে আমাদের নতুন ওয়েবসাইট www.dailyajkersangbad.com ভিজিট করুন। টাংগাইল বন বিভাগের দোখলা সদর বন বীটে সুফল প্রকল্পে হরিলুট আগ্রাবাদ ফরেস্ট কলোনী বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলেন মোজাম্মেল হক শাহ চৌধুরী ফৌজদারহাট বিট কাম চেক স্টেশন এর নির্মানাধীন অফিসের চলমান কাজ পরিদর্শন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে: শেখ সেলিম সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র চলছে সীমাহীন অনিয়ম এলজিইডির কুমিল্লা জেলা প্রকল্পের পিডি শরীফ হোসেনের অনিয়ম যুবলীগে পদ পেতে উপঢৌকন দিতে হবে না: পরশ নির্বাচন যুদ্ধক্ষেত্র নয়, পেশি শক্তির মানসিকতা পরিহার করতে হবে: সিইসি

চিনি শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজন

নিউজ ডেক্স:
  • প্রকাশিত সময় : শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০২০
  • ৭৩১ পাঠক পড়েছে

মিষ্টির প্যাকেট সামনে রেখে আমাদের অপেক্ষা করার ধৈর্য থাকে না। কখন সে প্যাকেট খুলে মিষ্টি খাবো। মায়ের পেটের শিশুও পারে না মিষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে। কারণ শিশু মায়ের জরায়ুতে থাকে একধরনের তরল পদার্থে ঘেরা অবস্থায়। এ তরল পানি শিশু মাঝে মাঝে ঢোক গিলে খায়। গবেষকরা দেখেন, ইনজেকশনের মাধ্যমে জরায়ুতে একটু স্যাকারিন ঢুকিয়ে দিলে শিশুর এ ঢোক গেলা অনেক বেড়ে যায়। অতএব চিনি-মিষ্টির টান যাবে কোথায়?.

তবে দোষটা শুধু মানবশিশুরই নয়। প্রাণিজগতে এটা মোটামুটি সাধারণ ব্যাপার। গবেষকরা ইঁদুরের সামনে একটি পাত্রে চিনি গোলা পানি এবং আরেক পাত্রে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে দেখেছেন, যতক্ষণ চিনির পানি থাকে; ততক্ষণ সে অন্যটার দিকে কোনো মনোযোগ দেয় না। অতএব সবার ক্ষেত্রেই চিনির প্রতি আকর্ষণটা বেশি। তবে আমাদের অনেকের কাছে এখনো অস্পষ্ট অতি সত্য যে কথা, তা হলো- বেশি চিনি খাওয়া অনেক দুর্ভোগ বয়ে আনতে পারে।

একথা কে না জানেন, চিনি একটা শর্করা জাতীয় খাবার। এর নানান প্রকারভেদ রয়েছে। এটা হলো সুক্রোজ যা আখ থেকে পাওয়া আমাদের অতি পরিচিত চিনি। তাছাড়া রয়েছে দুধের চিনি ল্যাকটোজ, ফলের চিনি ফ্রুকটোজ, রক্তে থাকা চিনি গ্লুকোজ ইত্যাদি নাম।

তবে হ্যাঁ। শরীরের জন্য শর্করা জাতীয় খাবারের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে বৈকি! সেটা ঠিক। কিন্তু নানা রকম মিষ্টি জাতীয় খাবার অতি মাত্রায় খেয়ে থাকি, সেই শর্করার বড় অংশ চিনি থেকেই আমরা পেয়ে যাই। অথচ যদি এটা শস্য, ফল বা সবজি থেকে পাওয়া যায়।

তাহলে শর্করার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজদ্রব্য, আঁশ এবং পানি খাবারের সাথে আসতে পারে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, চিনিতে এর কিছুই নেই। রয়েছে শুধু ক্যালোরি অর্থাৎ শক্তি উৎপাদনের উপাদান।

আসলে খাবারের মধ্যে সরাসরি সুক্রোজ চিনি থাকার কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই। এর কাজ অন্য খাবারগুলোই ভালো করতে পারে। শক্তি উৎপাদনের জন্য আমাদের শরীর ভাত-রুটি প্রভৃতি খাবারকে চিনিতে পরিণত করিয়ে নিতে পারে। তাছাড়া ফল-মূলের মধ্যে চিনি তো রয়েছেই। একটি কথা প্রায়ই বলা হয়, চিনি হলো ইনস্ট্যান্ট এনার্জি অর্থাৎ তাৎক্ষণিক শক্তির উপায়। কথাটিকে ভুল বোঝার অবকাশ যথেষ্ট রয়েছে। খালি পেটে বেশি চিনি খেলে আধ ঘণ্টার মধ্যেই রক্তে প্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। চাই সে ডায়াবেটিস রোগী হোক আর না হোক।

এর ফলে শরীরে ইনসুলিন নামক জিনিস এসে রক্ত থেকে বাড়তি গ্লুকোজ বের করে নেয়। কিছুটা হজম করে, জ্বালিয়ে দেয় আর অবশিষ্ট চিনি মজুদ করার গুদামে পাঠিয়ে দেয়। শরীরে চিনি মজুদ করার ব্যবস্থা হলো গ্লাইকোজেন হিসেবে অথবা চর্বির মধ্যে ট্রাইগ্লিসারাইড হিসেবে। শরীর পরিশ্রান্ত হলে প্রথম প্রথম চিনির গুদাম থেকে মজুদের তলব হয় অর্থাৎ গ্লাইকোজেনের টান পড়ে। এতে না কুলালে চর্বি থেকে ফ্যাটি এসিডের টান পড়ে। পরিশ্রমের সময় মাংসপেশীতে বাড়তি শক্তির প্রয়োজন বলেই মজুদের এই তলব।

পরিশ্রমের সময় ছাড়াও চায়ে চিনি খেলে তা স্রেফ দেহে চিনি মজুদের পরিমাণ বাড়ায় মাত্র। শক্তি তৈরির কাজে লাগে না। দীর্ঘ পরিশ্রমে মাঝে মাঝে অল্প অল্প চিনির দলা বা চকোলেট খেলে শুধু তা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে মাংসপেশীর শক্তি জোগাতে পারে মাত্র। আর কে না জানে, বেশি চিনি খাওয়ার ভোগান্তি অনেক।

যেমন চিনিকে বেশি চেনার অভ্যাস বা মিষ্টিমুখের অভ্যাসের সাথে বেঢপ মোটা হয়ে পড়ার সম্পর্কটাও বড় বেশি। মোটা অবশ্য যেকোনো রকমের শর্করা খাবার বেশি খেলেই হতে পারে। তবুও চিনিতে ওটার ভয় বেশি। কারণ চিনিতে অল্প খাবারেই অনেক ক্যালোরি থাকে। পেট ভরায়, যা টের পাওয়ার অনেক আগেই প্রয়োজনের বেশি ক্যালোরি খাওয়া হয়ে যায়। আধা কিলো আপেল থেকে যে ক্যালোরি পাওয়া যায়, তা ছোট একটা মিষ্টি লজেন্স থেকেই পাওয়া যায়।

আর হ্যাঁ। মনে রাখা চাই, যখন-তখন মিষ্টি জিনিস খাওয়া নিঃসন্দেহে দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। দাঁতে লেগে থাকা চিনিকে মুখের ব্যাকটেরিয়া একধরনের অ্যাসিডে পরিণত করে। এ অ্যাসিড দাঁতের রক্ষাকারী আবরণ নষ্ট করে দাঁতের ও মাড়ির নানা অসুখ হওয়ার সুযোগ করে দেয়। এ ব্যাপারে অবশ্য কতখানি মিষ্টি খেলেন সেটা বড় কথা নয়, দাঁতের ওপর মিষ্টি কতক্ষণ থাকছে সেটাই বড় কথা। এজন্যই শিশুদের চুইংগাম, লজেন্স বেশি ক্ষতিকর। তবে এদিক থেকে নিরাপদ ব্যবস্থাও রয়েছে। যতবার চিনি খাওয়া হবে; ততবার দাঁত মেজে কুলি করে ফেলা দরকার।

তবে সবাই জানেন, চিনি খাওয়া, মুটিয়ে যাওয়া এসবের সঙ্গে সম্পর্কিত সবচেয়ে ভীতিপ্রদ রোগের নাম ডায়াবেটিস। কারণ, রক্তের বাড়তি চিনি সরিয়ে নেবার দায়িত্ব হলো ইনসুলিনের। প্লীহা থেকে এটা তৈরি হয়। ডায়াবেটিস হলে এটা ঠিকমতো তৈরি হতে পারে না বলে রক্তের বাড়তি চিনি সরাতে পারে না। তাই ডায়াবেটিস রোগী বেশি চিনি খেলে রক্তের গ্লুকোজ বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায়। বেশি চিনি খাওয়া যেহেতু মুটিয়ে পড়তে যথেষ্ট সাহায্য করে। তাই চিনিকে প্রকারান্তরে ডায়াবেটিস সৃষ্টির জন্য দায়ী করা হয়।

হৃদরোগের সঙ্গে বেশি চিনি খাবার সম্পর্কের কথাও অনেকে বলে থাকেন। তবে একথাটা সবাই মানেন না। চিনির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত না হলেও চিনি যে নীরব ঘাতক, দাগী আসামী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সে তুলনায় চিনি উপকার এমন কিছুই করে না। তাই সরাসরি চিনির প্রয়োজন খুব একটা দরকার পড়ে না। মানুষ অন্যান্য সাধারণ খাবার থেকে আরও ভালোভাবে, নিরাপদভাবে পেতে পারে চিনির চেয়ে উন্নত পুষ্টিগুণ।

লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580