স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে ডেঙ্গু নির্মূল করতে হবে। জনসম্পৃক্ততাই ডেঙ্গু মোকাবিলার উত্তম উপায়। জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সহজ হবে না।
বুধবার রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের নগরভবনে আয়োজিত ‘সুস্থতার জন্য সামাজিক আন্দোলন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রী, মেয়র, কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে ঢাকাকে মশামুক্ত করে জনজীবনে স্বস্তি এনে দেয়া সম্ভব নয়। জনগণের অংশগ্রহণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যেমন সিটি কর্পোরেশনের মৌলিক দায়িত্ব, তেমনি নাগরিকদেরও নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব অবহেলা না করে পালন করতে হবে।
মন্ত্রী জানান, এডিস মশা কিভাবে ও কোথায় জন্ম নেয়, এসব বিষয়ে নগরবাসীকে বিভিন্নভাবে সচেতন করা হয়েছে। মানুষ যদি সচেতন হয়ে এই বিষয়গুলোতে নজর দেয়, তাহলে এডিস মশা একেবারে নির্মূল করা সম্ভব না হলেও নিয়ন্ত্রণ করে সহনীয়পর্যায়ে আনা অসম্ভব নয়।
নির্মাণাধীন বাসাবাড়িতে এডিস মশার প্রজনন বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাসাবাড়ির ছাদে, বেজমেন্টে অথবা ফুলের টবে জমানো স্বচ্ছ পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে বা ফেলে দিতে না পারলে সেখানে লার্ভিসাইড অথবা কেরোসিন তেল ঢেলে বা স্প্রে করে নগরবাসীকে এডিস মশার লার্ভা নষ্ট করতে হবে।
বিশ্বের অনেক দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রয়েছে এবং প্রতিবছর প্রায় একশো থেকে চার শো মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় জানিয়ে মন্ত্রী সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের ডেঙ্গুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর মশার প্রভাব বেশি একথা সত্য। কিন্তু আমরা কেউ বসে নেই, সবাই সর্বাত্মকভাবে যার যার অবস্থান থেকে নিরলসভাবে কাজ করছি।
তিনি বলেন, গত বছর শুধু জলবায়ুর প্রভাবে ডেঙ্গু কম ছিল বলে অনেকে বলে থাকেন কিন্তু একথা সত্য নয়। মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, নগরবাসী সবার সমন্বিত উদ্যোগ ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে। এবারও আমরা সফল হবো। পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ যারা ডেঙ্গু মোকাবিলায় সফল হয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েও কাজ করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সেখানে প্রচুর এডিসের লার্ভা প্রজনন হচ্ছে। এছাড়া, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজ উদ্যোগে এসব স্থাপনায় মশক নিধন অভিযান চালাতে হবে। তবে মশা মারতে গিয়ে এমন কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না যার জন্য পরিবেশ ও মানুষের ক্ষতি হয়। সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিভিল এভিয়েশন ও রেলওয়েসহ অন্যান্য সরকারি আবাসন ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে অথবা নিজেদের মশা নিধনের উদ্যোগ নিতে বলেন মন্ত্রী।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরের যত খাল-জলাশয় রয়েছে সেগুলোকে সংস্কার করে একটির সঙ্গে অন্যটির সংযোগ দিয়ে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট চালু এবং দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তুললে ঢাকা শহরকে ভেনিসের মতো আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তোলা সম্ভব।
এসময়, এডিস মশা নিধনে একটি ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী সারা দেশে কাজ শুরু হবে বলেও সভায় জানান মন্ত্রী।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় মন্ত্রণালয় ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কাউন্সিলর, নগর পরিকল্পনাবিদ, বিভিন্ন সোসাইটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সামাজিক সংগঠনের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।