রাজধানীর তিন হাসপাতাল ঘুরে কোথাও চিকিৎসা না পেয়ে দুই নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক।
খোদ রাজধানীতেই যদি এমন ঘটনা ঘটে, তা হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা পেতে কতটা ভোগান্তির শিকার হতে হয়, তা সহজেই অনুমেয়।
নির্মম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে যমজ সন্তানের লাশ নিয়ে হতভাগ্য পিতা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। জানা যায়, সোমবার সকালে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি যমজ সন্তান প্রসব করেন।
পরে মা ও দুই নবজাতককে পরপর তিনটি হাসপাতালে নেওয়া হলেও কোথাও যথাযথ চিকিৎসা পাননি তারা। দুই নবজাতকের বাবা জানিয়েছেন, সন্তানদের বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু হাসপাতালগুলোর অবহেলার কারণে সন্তানদের বাঁচাতে পারেননি।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই দেশের স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থার চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এক সময় গুরুতর অসুস্থ রোগীদেরও অনেক হাসপাতালে ভর্তি না নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তখন করোনায় আক্রান্তদের নির্ধারিত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার খবর বারবার এসেছে গণমাধ্যমে।
করোনা ছাড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হতে এসেছিলেন, তাদের কাছে চাওয়া হয়েছিল ‘কোভিড-১৯ নেই’ মর্মে প্রত্যয়নপত্র। ওই অবস্থায় অনেক রোগী এ হাসপাতাল সে-হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তখন অবস্থা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল যে, বিভিন্ন রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ডায়াগনসিসও করা যাচ্ছিল না।
চিকিৎসাসেবার এ অবস্থায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল মানুষ। খোদ প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের এ ধরনের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। দেখা যাচ্ছে, রোগীদের প্রতি অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং কোনো কোনো চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ বারবার এলেও এ ক্ষেত্রে অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি।
চিকিৎসাসেবা পাওয়া মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। এ অধিকার থেকে রোগীদের বঞ্চিত করা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। উল্লেখ্য, অনৈতিক ব্যবসা করার অভিযোগও উঠেছে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এ পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না। একটি দেশের স্বাস্থ্য খাত এভাবে চলতে পারে না। সময়মতো চিকিৎসার অভাবে অনেক রোগী প্রাণ হারাতে পারেন।
চিকিৎসা একটি মহৎ পেশা বলে স্বীকৃত। এমন নজিরও রয়েছে যে, নিজের জীবন বিপন্ন করে অনেক চিকিৎসক রোগীর সেবা দিয়েছেন।
আমরা মনে করি, সরকারি-বেসরকারি কোনো চিকিৎসক বা হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগীর চিকিৎসা বা তাকে ভর্তি না করানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অথবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা-সব রোগের চিকিৎসার ব্যাপারে তারা দায়িত্বশীল হবেন।