এলজিইডি’র নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়)’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিগত ১১/১০/২০২০ তারিখে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তি সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান, তিনি চাকুরী জীবনে সরকারী প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় নানান অনিয়ম ও দূর্নীতি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
তিনি সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় ঠিকাদারদের সাথে আতাত করে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া নিম্নমানের কাজ করিয়ে ঘুষ গ্রহণ করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে যে ৩/৪ টি জেলায় কর্মরত ছিলেন, সবখানে ঘুপচি ্েটন্ডার করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। অফিস মেরামত ও অফিস খরচের টাকা ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে আত্মসাৎ, গাড়ী, রোড রোলার, ট্রাক, হট কিক্স প্লান্টসহ অন্যান্য যান্ত্রিক সামগ্রী মেরামত দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন, ঐসব যন্ত্রপাতি ভাড়ার সব টাকা ট্রেজারিতে জমা না দিয়ে কম ভাড়া দেখিয়ে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেছেন, যা তদন্ত করলে তার অনিয়ম, দূর্নীতি প্রমাণিত হবে।
প্রকল্প পরিচালক হওয়ার পর তার দূর্নীতি আরও বেড়ে যায়। প্রায় ৩৪৬৫ কোটি টাকায় গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ২য় পর্যায়ে, ৯৫০ কোটি টাকার বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলায় বাস্তবায়নাধীন পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ১২ কোটি টাকার ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাম সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প, ৭টি কোটি টাকার পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও জিয়ানগর উপজেলাধীন জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় দূর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণ প্রকল্প, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও জিয়ানগর উপজেলায় স্যানিটারী ল্যাট্রিন ও বিশুদ্ধ পানি সরবাহ প্রকল্প, ১০ কোটি টাকার পিরোজপুর জেলার সাইক্লোন প্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন সহনীয় গ্রামীণ প্রকল্পের পিডি ছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে ছোট ছোট প্রকল্পগুলো শেষ হয়েছে, কিন্তু ঐসব প্রকল্পগুলোর কাজের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না বলে সূত্রে জানা যায়। গোপন টেন্ডার করে তুয়া কার্যাদেশ দিয়ে প্রায় ৭০ ভাগ টাকা কাজী মিজানুর রহমান আত্মসাৎ করেছেন।
এখন চলমান গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ২য় পর্যায়ে, বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার বাস্তবায়নাধীন পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প দুটি চলমান। বড় বড় এই দুটি প্রকল্পের শুরু থেকে জনবল নিয়োগ, প্রকল্পের কেনাকাটা, আনুষাঙ্গিক খরচে ব্যাপক অনিয়ম করেছে তিনি। জনবল নিয়োগে প্রায় ২ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছে। প্রকল্পের কেনাকাটা পণ্যের মূল্য বহুগুণ বাড়িয়ে, প্রয়োজনের তুলনায় বেশী পণ্য ক্রয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, যা তদন্ত করলে প্রমাণ পাওয়া যাবে। আনুষাঙ্গিক খাতে বরাদ্দের ২৫ ভাগ টাকার পণ্য কিনেছে। বাকী টাকা ভুয়া বিল ভাউচার, অতিরিক্ত মূল্য ও প্রয়োজনের বেশী পণ্য ক্রয় দেখিয়ে ৭০-৭৫ ভাগ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ২য় পর্যায়ের মেয়রদের সাথে যোগসাজসে প্রায় শতাধিক ঘুপচি টেন্ডার করেছেন।
এভাবেই রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন কাজী মিজানুর রহমান। অভিযোগকারীর অভিযোগ আজও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে নাই, অদৃশ্যর কারনে। অপর আরেকটি কাজী মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে ৯ নং সিংগাশোলপুর ইউনিয়নবাসীর পক্ষে তন্ময় মল্লিক ও মনোজ বিশ্বাস স্বাক্ষরিত অভিযোগে চেয়ারম্যান দূর্নীতি দমন কমিশনকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায় যশোর জেলার নড়াইল উপজেলায় শৈলপুর গ্রামে মুদির দোকানের কর্মচারী ছিলেন এই মিজানুর রহমানের বাবা। চাকুরী সুবাদে কয়েক বছরের ব্যবধানে উক্ত এলাকায় নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এছাড়া হিন্দু সংখ্যা লঘুদের কাছ থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কালো টাকার প্রভাবে তার ছোট ভাই কাজী মাহবুবুর রহমান কে দিয়ে হিন্দু সংখ্যা লঘুদের কাছ থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অল্পমূল্যে বাড়ী ও জমি ক্রয় করে তাদেরকে ভারতে পাঠিয়ে দিয়ে থাকেন।
এছাড়াও তার ভাই কাজী মাহবুবুর রহমানের অত্যাচারে দিশেহারা এলাকাবাসী। সংখ্যা লঘু নির্মল রায় হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া রাজু বিশ^াসকে মেরে পা ভেঙ্গে আহত করে বিধান রায়ের দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে তার ভাই ও তার বাহিনীসহ। বর্তমানে উক্ত মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন আছেন। সিংগাশোলপুর ইউনিয়নবাসীর একটিই প্রশ্ন তার পিতা ছিলেন সামন্য মুদির দোকানের কর্মচারী তখনকার সময় তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। ছেলের চাকরীর সুবাদে অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে এত সম্পদ কোথায় পেলেন। কাজী মিজান ও তার ভাইয়ের অত্যাচারে এলাকাবাসী নিরুপায় হয়ে বিগত ২৬/১২/২০১৯ তারিখ চেয়ারম্যান দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকে অভিযোগ করলেও আজও পর্যন্ত কাজী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না হওয়াতে হতাশায় পড়ে গেছেন অত্র এলাকাবাসী। যা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করলে অবৈধ সম্পদ ও থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে বলে মনে করেন অত্র তার এলাকাবাসী। উক্ত অভিযোগের সত্যতা জানার জন্য কাজী মিজানুর রহমানের ফোন দিয়ে জানতে চাইলে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবী করেন। এছাড়া তার ভাইয়ের হত্যা মামলা বিষয়ে চানতে চাইলে মিথ্যা বলে দাবী করেন। তার পিতা মুদির দোকানের কর্মচারী ছিলেন বিষয়টি জানতে চাইলে উক্ত বিষয়টি এড়িয়ে যান কাজী মিজানুর রহমান।