দেশের ৮০ ভাগ মানুষ টিকা পাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘করোনার টিকা আসতে শুরু হয়েছে। আর কোনো সমস্যা হবে না। আরও টিকা আসবে এবং দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে।’
শনিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত থেকে করোনা টিকা কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে করোনা বেড়ে যাওয়ায় তারা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে কিছুদিন সমস্যা হয়েছিলো। এখন আর সসস্য নেই। চিন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা এসে গেছে আরও টিকা আসবে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার রাতে এবং শনিবার সকালে মর্ডানা ও সিনোফার্মের টিকা আসার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যেখানে যেখানে টিকা পাওয়া যাচ্ছে সেখানে যোগাযোগ করা হয়েছে। আরও কেনা হবে। চিন, রাশিয়া, জাপানা, যুক্তরাষ্ট্র সব জায়গায় যোগাযোগ রক্ষা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ৮০ ভাগ মানুষের টিকার আওতায় আনবো। বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমরা অনেক টাকা দিয়ে টিকা কিনছি। কিন্তু জনগণের স্বার্থে বিনামূল্যে টিকা দিচ্ছি। আমরা সব কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার দেই গ্রামের মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে লকডাউন দেওয়া হয়েছে আপনাদের প্রতি আহ্বান- অন্তত নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন। নিজে সুরক্ষিত থাকুন, অন্যকে সুরক্ষিত রাখুন। সবাই এটা মেনে চললে আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো। টিকা আসা শুরু হয়েছে সমস্যা হবে না।’
সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্কুল বন্ধ, এজন্য একটু ক্ষতি হচ্ছে। টিকা দেওয়ার পরে আমরা সব স্কুল খুলে দেবো। এর আগে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখনই সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ল! আর তার ধাক্কা এসে পড়লো আমাদের মাঝে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তো শিশুদেরও করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। লেখাপড়া শিখবে, কিন্তু এটার জন্য জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবো কি না তা একটু বিবেচনা করবেন। বলার জন্য বলতে পারেন, কিন্তু এটাও একটু চিন্তা করবেন, ছেলেমেয়েদের মৃত্যুর মুখে দেবেন কি না?’
নিজের নাতিরা ও ছেলে মেয়েরা বিদেশে পড়াশোনা করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে আমরা দেখেছি। সবই অনলাইন। একটু খুললো আবার মহামারি ছড়িয়ে পড়লো, সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ। আবার ঘরে বসে কাটাচ্ছে। হ্যাঁ, তারা অপশনও দিচ্ছে। যারা ঘরে বসে পড়বে তারা পড়ছে। যারা যাচ্ছে স্কুলে যাচ্ছে। আবার যখন করোনা বেশি ছড়ায় সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করছে।’ শুধু বাংলাদেশ কেন এখন সারা বিশ্বে এই অবস্থা। সেটা সবাইকে ভাবতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি এমন একটি দল, যে দল সৃষ্টি করেছে একজন সামরিক জান্তা। ১৫ আগস্ট জতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার যে পরিকল্পনা হয়, তার মূলশক্তি ছিল এই জিয়াউর রহমান। খুনি কর্নেল রশিদ এবং ফারুক বিবিসিকে দেওয়া তাদের ইন্টারভিউতে এটি স্পষ্ট রয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদের সঙ্গে না থাকলে কোনদিনও এই ষড়যন্ত্র করতে পারত না। কারণ জিয়াউর রহমান ছিল উপ সেনা প্রধান।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর স্বাধীনতার পর বেগম জিয়াকে ঘরে নিতে চাননি। কারণ তার আরেকটি ঘটনা আছে সেটা আমি জানি। ওই সময় জিয়াউর রহমান ছিল কুমিল্লায়। তখন তাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং উপসেনাপ্রধান করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাকে উপ সেনাপ্রধান করেন। ওই সময় তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর থেকে মেজর জেনারেল করেন বঙ্গবন্ধু। আর সেই জিয়াই ষড়যন্ত্র করে মোস্তাক, কর্নেল রশিদ ফারুককে নিয়ে। মোস্তাক যখন অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে জিয়াউর রহমানকে করে সেনাপ্রধান। সেই মোস্তাককে হটিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। জিয়া ছিল একদিকে সেনাপ্রধান, আরেকদিকে ছিল দেশের রাষ্ট্রপতি। এর আগে আইয়ুব খান এই একই দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিল।’
বিএনপি গঠনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আবার রাজনীতীবিদ হন। উর্দি পরে ক্ষমতায় এসে পরে রাজনীতিতে নাম লেখান। সেখান থেকে পরে রাজনৈতিক দল গঠন করে। সেই দলই হলো বিএনপি। এই হলো তাদের রাজনীতি, এই হলো তাদের গণতন্ত্র।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিরাতে কারফিউ, ১৯৮১ সালে যখন বাংলাদেশে আসি তখনই কারফিউ। ৭৫ সাল থেকে ৮১ সাল পর্যন্ত কারফিউ দিয়েছিল বিএনপি। জিয়াউর রহমান দিয়েছিল কারফিউ গণতন্ত্র। অনেকগুলো দল গঠনের সুযোগ দিয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু সেখানে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ ছিল না। আর নির্বাচনের ফলাফল আগে থেকেই নির্দিষ্ট থাকতো। ৭৮ সালে হ্যাঁ-না ভোট, ৭৯ সালে নির্বাচন সবই ছিল খেলা।’ – (সমকাল )