শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
দৈনিক আজকের সংবাদ পত্রিকার সংবাদ পড়তে এখন থেকে আমাদের নতুন ওয়েবসাইট www.dailyajkersangbad.com ভিজিট করুন। টাংগাইল বন বিভাগের দোখলা সদর বন বীটে সুফল প্রকল্পে হরিলুট আগ্রাবাদ ফরেস্ট কলোনী বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলেন মোজাম্মেল হক শাহ চৌধুরী ফৌজদারহাট বিট কাম চেক স্টেশন এর নির্মানাধীন অফিসের চলমান কাজ পরিদর্শন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে: শেখ সেলিম সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র চলছে সীমাহীন অনিয়ম এলজিইডির কুমিল্লা জেলা প্রকল্পের পিডি শরীফ হোসেনের অনিয়ম যুবলীগে পদ পেতে উপঢৌকন দিতে হবে না: পরশ নির্বাচন যুদ্ধক্ষেত্র নয়, পেশি শক্তির মানসিকতা পরিহার করতে হবে: সিইসি

নীলরং প্রজাপতি 

নিউজ ডেক্স:
  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১
  • ৬৫৬ পাঠক পড়েছে

নীলরং প্রজাপতি 

                                                     আমজাদ হোসেইন

এত আনমনা হয়ে কখনো কোন তরুণকে আমি সিগারেট খেতে দেখিনি ।উদাস মনে মাথা ঝুঁকিয়ে সে কিছুক্ষণ পর পর আঙ্গুল ছোঁয়াচ্ছে ঠোঁটে । আমাদের ক্যাম্পাসটি নুতন । প্রায় বৃক্ষ শুন্য । ক্ষাণিকটা দূরে পুকুরপাড়ে ঝাপরা কিছু ছাতিম গাছের চারা আছে । প্রখর রোদে তারা গোল গোল ছায়া দেয় । দুপুরবেলা একই সময়ে রোজ একলা সেই ছায়ায় ছেলেটি এসে কিছুক্ষণ বসে, আনমনা হয়ে সিগারেট টানে। হাতের সিগারেট শেষ হয়, তারপরও সে ওঠেনা । অনকক্ষণ বসে থাকে। কী ভাবে আল্লাহ জানে । আমি দৃশ্যটি ল্যাব’এর বারান্দা থেকে খেয়াল করি রোজ । অবশেষে যখন ছেলেটি উঠে দাঁড়ায় তখন তাকে মনেহয়, সে যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত, ক্লান্ত, অবসন্ন একজন সৈনিক । যখন স্হিরহয়ে মাথা উঁচুকরে হাঁটতে শুরু করে সে, তখন মনেহয় হেরে যাওয়া যুদ্ধে — জেতার জন্যে মনেমনে আবার কৌশলী পরিকল্পনা করছে সে, নুতনকরে শ্বাস নিচ্ছে । আমি দেখে মুগ্ধ হই । ছেলেটি সম্পর্কে আমি খোঁজ-খবর নেই । সে শেষবর্ষ ফার্মেসীর ছাত্র । নাম আবীর আবদুল্লাহ মীর । ছাত্র হিসেবে সে খুব তুখোর নয় । পড়ালেখায় মন নেই ।স্টইলিষ্ট ছেলেদের মতো নেশা-টেশা বা প্রেম-ট্রেম কিছু করেনা । ছাত্র রাজনীতি অপছন্দ তার । তা’সত্বেও তাকে বিশেষ একটা ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িয়ে থাকতেই হয় । ছাত্রদের জন্যে এটা এখন একটা সার্ভাইভাল ইস্যু ।

আবীরের ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা গেলনা । কেউ কেউ বললো, রাগী । চটকরে রেগে যায় । আবার ভুলেও যায় চটকরে । বাড়ি শহরের কাচারীপাড়ায় । দিনমানে বেশ কয়েকটা টিউশনি করতে হয় তাকে । সতীর্থরা এর বেশি জানেনা । সিদ্ধান্ত নিলাম আবীরের সাথে আমি কথা বলবো । জানা দরকার, ওর বেঁচে থাকা, সমস্যা আর স্বপ্নের কথা । এই বয়সে এত কী চিন্তা ওর ! আমার চারপাশে, চোখের সামনে যে জীবন সে জীবন ভালোবাসাহীন জীবন ।বিত্ত বাসনার জীবন। সবাই কেবল আড়ম্বরপূর্ণ বিলাসী জীবন চায় । যেমন করেই হোক, সম্পদের অহংকার উপভোগ করতে চায় । আমার বাবা এ ডি এম । এডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিষ্ট্রেট, শাহাদৎ হোসেন । খুব ভালো মানুষ । আম্মুর চাপে এখন অসৎ হয়ে গেছেন । বাবাকে প্রেসারে রাখার ক্ষমতা আমার মায়ের অসাধারণ । এই ক্ষমতা জন্মসূত্রে পাওয়া । তিনি প্রাক্তন স্বরাস্ট্র মন্ত্রীর কন্যা । বাবাকে ছাত্র অবস্হাত্থেকে লালন-পালন করেছিলেন আমার নানুভাই । আমরা তিন বোন । শশী, শ্যামা আর আমি ছোট — সিমি । বায়ো-কেমিস্ট্রি দ্বিতীয় বর্ষের  ছাত্রী । শশী বড় । অপসরী । কুমিল্লা ভিক্টরিয়া কলেজে সেকেন্ড ইয়ার অনার্সে পড়ার সময় কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে রায়হান কটন মিলস’এর মালিকের প্রায় ব-কলম ছেলের হাত ধরে চলে গেল । বাবা খোঁজ-খবর কিছু করতে চেয়েছিলেন, আম্মু বললেন, না । আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কেউ আমার সামনে কখনো ওর নাম উচ্চারণ করবেনা । আমি জানি, শশী আপার অর্থের অভাব নেই । গহনাগাটি দিয়ে আপার শরীর মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যার জন্যে রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকরা শুধু সেই মানুষটা এখন আর তার নেই । সে বদ, আপা বুঝতে পারে নাই । অভ্যস্ত ভ্রোমর এখন হরেক রকম বাগানে ঘোরে, নিত্যনতুন ফুলে বসে, মধু খেয়ে চলে আসে । ননদ-জা’এর সংসারে ছোট ছোট দুটি শিশু- চ্চাকে কোলে করে বসে থেকে লোকটার এসব অপকীর্তি চেয়ে দেখা ছাড়া আপার এখন আর কিচ্ছু করার নেই । এখন কিছু বললেই হয়তো লোকটা বলবে, মাগি, এখনই তুই বাইর হ । বাপের বাড়ি চলে যা । অঢেল বিত্তের সংসারে উপায়হীনদের কপালে অপমানটাও হয়তো বিত্তের মতই সহজ । মেজ বোন শ্যামার কথা একটু বলি । আমরা পিঠেপিঠি । ও একটু কালো গোছের । কিন্তু ওর শেফ ভাল । শাড়িপরা শ্যামাকে দেখলে আমার ওমর আলীর কবিতার কথা মনেহয়, ‘এদেশের শ্যামল রঙ রমণীদের সুনাম শুনেছি ।’ দারুন ব্রিলিয়ান্ট শ্যামা । সবে ঢাকা ভার্সিটীর ল’তে ভর্তি হয়েছে । পাঙ্খা । রোকেয়া হলে থাকে ।তুরী মেরে উড়েচলা জীবন তার । আর আমরা — পরিবার ; বেইলী রোডে এস ডি ও কোয়ার্টারে থাকি ।

শ্যামা কিছুটা অসুস্হ হয়ে বাসায় এসেছে দু’দিন । এরই মধ্যে খবর হয়ে গেল, শ্যামা প্রেগন্যান্ট । বাবা ভেঙে পড়লেন ।আম্মু শিকারি বকের মতো শক্তহয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন চুপচাপ, নিটাল মেরে গেলেন । কারুর সঙ্গেই কথা বলছেন না ।  দুপুরবেলা বাবার ভ্যাবদামারা মুখের উপর হঠাৎ বজ্র ভেঙে দিলেন আম্মু, তোমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা উদযাপন শেষ হইছে তো ? এবার ছেলেটাকে আ্যরেষ্ট করে আমার কাছে নিয়ে আসার ব্যবস্হা করেন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব । নইলে আগুন জ্বলবে বাসায়, আমি এই সিফাত আরা মুন্না বলে দিলাম ।স্যান্ডেলে ফটফট শব্দতুলে ঘরে চলে গেলেন আম্মু । আব্বু থমকে গেলেন । কী যে এক অস্বস্তিকর অবস্হার সৃষ্টি হলো বাসায় ! শ্যামা মাঝে মাঝে ওয়াসরুমে ঢুকে ওয়াক ওয়াক করছে । শুয়ে বসে ঝিমুচ্ছে, কিছু খাচ্ছেনা-দাচ্ছেনা, সারাক্ষণ কান্না-কাটি করছে ; বলতে গেলে চব্বিশ ঘন্টাই বিরতিহীন ভাবে মোবাইলটিপে যাচ্ছে আর গুষ্ঠিশুদ্ধ আমরা সবাই শুনছি, এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভম হচ্ছেনা …এদিকে আম্মু ধনুকভাঙা পণ করে বাবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে, তার সামনে ওই নচ্ছার ছেলেটাকে হাজির করে দিতে হ । ঘেন্নাকরে শ্যামার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেনা আম্মু । বাসায় সবচাইতে বড় সমস্যা হয়েছে, রান্না-বান্না বন্ধ হয়ে গেছে । অনিবার্য কারণে বুয়াকে ছুটি দেওয়া হয়েছে । আমি মিনমিন করে একবার আম্মুকে রান্নার কথা বলতে গিয়ে একটা বিরাট ঝাড়ি খেলাম, মরগে। মরতে পারিসনে সব ?

সারারাত সবার প্রায় নির্ঘুম কেটে গেল । সকালে আমি এককাপ চা বানিয়ে দিয়েছিলাম, একটা টোষ্ট দিয়ে সেইটা খেয়ে আব্বু অফিসে চলে গেলেন । আমাকে ডেকে মাথা নিচু করে বললেন, আন্ডারএজ টর্চার এ্যাক্টে একটা ফাইল করবো কিনা খুব গভীরভাবে আমি চিন্তা করছি মা । তুই কি বলিস ? আমিও মাথা নিচু করে রইলাম । কিছু বললাম না । আমার শুধু মনে হলো, গু ছিটানোর দরকার কি । দরজায় দাঁডিয়ে বাবা নিজের সাথে কথা বললেন এবার, আচ্ছা দেখি, রমনা থানার ইনচার্জ ইকবালের সাথে কথা বলে দেখি ।যাবার আগে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি আবার আমাকে বললেন, শ্যামার কাছ থেকে ছেলেটার বায়োগ্রাফিক ইনফরমেশন নিয়ে দুপুরের মধ্যেই আমাকে টেক্সট করবি । লাগবে । আব্বুর এসব কথার মূল্য নেই । আম্মুর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া আব্বু কিছুই করবেনা । আর যেকোন বিষয়ের ভবিষ্যৎ দেখার জন্যে আম্মুর দূরবীনই যথেষ্ট । কাল দুপুর থেকে খাওয়া-দাওয়ার অবস্হা খারাপ । আম্মু মাঝে মাঝে রান্নাঘর থেকে হাফ-লাস করে পানি খেয়ে আবার রুমে ফিরে যাচ্ছে। আমি ক্ষিধেয় শেষ হয়ে যাচ্ছি । আরো খারাপ লাগছে বেচারী শ্যামার জন্যে ।অপরিণামদর্শিতার পরিণতি টোটালি যা হয় – তাই হয়েছে ওর, হচ্ছে । মরা মরা হয়ে গেছে শ্যামা ।

আমি ওর ঘরে গেলাম । ওকে দেখে চমকে উঠলাম, মরে গেছে নাকি ? এক পা’ ভাঁজ করে, চিৎহয়ে, হা-করে এমন ভাবে শুয়ে আছে ও, মনেহচ্ছে মরে গেছে । জানালা দিয়ে তীব্র রোদ এসে মুখে পড়েছে ; ভ্রুক্ষেপ নেই । বিছানায় উঠে গিয়ে জনালার পর্দা টেনে দিলাম, ওর কোলের কাছে গিয়ে বসে মাথা-মুখ নেড়ে দিতে দিতে ডাকলাম, শ্যামা , আপু , আপু … ও নড়া-চড়া করলো না । চোখ মেলে তাকিয়ে বলল, পানি । পানি খাবো । পানি নিয়ে এসে দিলাম । ঘাড় উঁচু করে ঢকঢক করে পানি খেয়ে আবার চোখ বুঁজলো । আমি চুলে হাত বুলিয়ে বললাম, কিছু খাবি, ভাত খা – নিয়ে এসে দেই ? শ্যামা চোখ খুলে আমার ডানহাতখানা মুঠোয় পুরে কাতরস্বরে বললো, শুকনো মরিচের ঝাল দিয়ে আলু ভর্তা করে আমাকে একগাল ভাত খেতে দিবি দিদি ? আমার চোখদুটো জলে ছলছল করে উঠছিল, তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালাম । ‘আনছি’ বলে আমি ঘর থেকে বেরহয়ে এলাম । কিন্তু ভাত কোথায় — এই দুইদিন এ বাসায় তো চুলোই জ্বলেনি ! এর আগে দু’একদিন সখের বশে রান্না-বান্না করেছি । কিন্তু ক্ষিধেয় কষ্ট পেয়ে ক্ষুধা নিবারণের জন্যে রান্না করা এই প্রথম । আলুভর্তা আর ডিমভাজি, এই তুচ্ছ রান্না করতে গিয়ে কেন যেন আমার মন অনেক খারাপ হলো । ডাল রান্না করতে চেয়েছিলাম । দু:সময়ে সেটা অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাসী মনেহলো।

শ্যামা বললো ডিম দুর্গন্ধ । আলুভর্তা দিয়ে স্রেফ দুইগাল ভাত মুখে দিয়ে ওয়াক ওযাক করতে করতে ও চলে গেল ওয়াশরুমে । দীর্ঘক্ষণ পর ফিরে এলো মাথা-মুখ ভিজিয়ে । পূর্ণ একগ্লাস পানি খেয়ে সুস্হির হবার পর আমি ধীরে ধীরে ওর কাছ থেকে বৃত্তান্ত সব শুনলাম । ছেলেটি সম্পর্কে অনেক্ষণধরে আমাকে যে জিনিসটা বোঝাবার চেষ্টা করলো শ্যামা, তা হলো, ছেলেটি ভীষণ ভীতু, বোকা – আর চ্যাদবোধ নেই, কম । আমি আমার রুমে এসে আব্বুকে টেক্সট-ম্যাসেজে ছেলেটার প্রয়োজনীয় তথ্য, ও তার মোবাইল নম্বর পাঠিয়ে দিলাম ।  বেলা তিনটের দিকে আম্মুর কক্ষ থেকে সাউটিং-ভয়েস শোনা যাচ্ছিলো । আম্মু সেলফোনে কথা বলছেন ।  আম্মু আব্বুর সাথে ফোনে কথা বলতে গেলে এরকম করে কথা বলে । বুঝলাম, আব্বু অফিস থেকে ফোন করেছেন ।

সন্ধার কিছুক্ষণ আগে আব্বু অফিস থেকে বাসায় ফিরলেন । মুখটা উজ্জল । অফিস-এটাচিটা টেবিলে রেখে টাই খুলতে খুলতে সামনে আমাকে পেয়ে জোরে-সোরে বলতে লাগলেন, তোর মা কই, রান্না-বান্না কি এখনো বন্ধ আছে, রান্না করতে বল্, রান্না করতে বল্ । ছেলে তো আ্যারষ্ট হয়ে গেছে । আপাতত: আন্ডার সেকশন ফিফটি ফোর । গাড়িতে করে ওকে নিয়ে আসা হচ্ছে । আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে বললাম, কোথায় নিয়ে আসা হচ্ছে, থানায় ? আরে নাহ্, নিয়ে আসা হচ্ছে তোর আম্মুর কাছে । আম্মু জানে ? তো ? আমি দৌড়ে গেলাম আম্মুর ঘরে । আম্মু ঘরে নেই । তাঁকে পাওযা গেল রান্নাঘরে । হাঁড়ি-পাতিল ঘটর-ঘটর করছে । আমার বলার ইচ্ছেটা মাটি হয়ে গেল । কিছু বললাম না । ফিরে এলাম । কোন আসামি বা অপরাধী সম্পর্কে বাসায় আব্বুকে কোনদিন ঔৎসুক্য তো দূরের কথা, সামান্য কৌতূহলও প্রকাশ করতে দেখিনি । সেই আব্বুর চোখে আজ কৌতূহল চকচক করছে, সামান্য অস্হিরতাও তিনি গোপন করতে পারছেন না এবং কপোলের বলিরেখায় চিন্তার ছাপ সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে, বোঝা যাচ্ছে । আমার মনে রাজ্যের ভাবনা । প্রতিশোধ স্পৃহায় আম্মু নাহয় যা কিছু বলতে পারে, করতে পারে কিন্তু আব্বু ? আব্বুর তো শুধু আইন মেনেই চলতে হয়না ; যথাযথভাবে তা এক্সিকিউটও করতে হয় । তাহলে? অপরাধীকে তিনি বাসায় নিয়ে এসে স্ত্রীর হাতে সোপর্দ করছেন কেন ?

গাড়ি-বারান্দায় জীপ’এর হর্ণ শোনা গেল পরপর দুই বার । আব্বু নিচ তলার বারান্দায় নেমে গেলেন । আমি জানালায় দঁড়ালাম । আমার বিশ্বাস, আমার জননীও নিশ্চয় যেকোন সুবিধেমতো জায়গা থেকে গভীর কৌতূহল নিয়ে অভাবনীয় এই দৃশ্য অবলোকন করছেন । জীপ থেকে ড্রাইভারসহ পাঁচজন নেমে এলো । একজন এস আই, দুইজন পুলিশ, ড্রাইভার আর ঐ ছেলেটা। পুলিশরা আব্বুকে দেখে ফটাস করে আ্যাসেম্বেল-সেল্যুট দিল । আমি জিঘাংসার চোখে তাকিয়ে ছিলাম, ছেলেটাকে দেখবো বলে ।কিন্তু দেখে তাকে দাগী আসামী বলে মনেহলো না । প্রমাণ সাইজের লম্বা । সুন্দর চেহারা । আনত মুখ, নতহয়ে আছে । অল্পবয়সী মেয়েরা সুঠামো-সুন্দর চেহারার ছেলেদের দেখে প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যায়, নিজের অস্তিত্ব পর্যন্ত ভুলে যায় । শ্যামা তার প্রকৃষ্ট উদাহণ ।

বাবা পুলিশদেরকে বললেন, যাও তোমরা । আর ছেলেটাকে বললেন, এসো আমার সঙ্গে । ছেলেটাকে নিয়ে তিনি ড্রইংরুমে বসালেন । সেখানে আম্মু ছিলেন । ভিতরে চলে গেলেন । ড্রইংরুমে তখন আব্বু আর ওই ছেলেটা একলা । ছেলেটাকে কিছুটা অসহায় আর বিরক্ত মনে হচ্ছিলো । আব্বু বললেন, ডোন্ট বি হেজিটেড । কিছুক্ষণ এখানে বসো, নিজেকে আবিস্কার করতে পারো কিনা, দেখো । তোমার নাম কি ?  আবুল কালাম আজাদ । বাবা বললেন, ইতোমধ্যে আমি তোমার সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে ফেলেছি । তবুও জিজ্ঞাসা, নিয়ম । তোমার বাবার নাম কি ? লেদু মিস্ত্রি । ভালোকরে বলো — এলাকার লোক বাবাকে ওই নামেই চেনে । ভালনামে চেনেনা । তারপরও বলো । ছেলেটি বললো, আমার বাবার নাম লেদোয়ার হোসেন । আব্বুর অবস্হা দেখে মনেহলো, তিনি বোধহয় আবার ভুল শুনেছেন । রিপিট করলেন, কি বললে, দেলোয়ার হোসেন ?  না । লেদোয়ার হোসেন । আব্বু চুপকরে থাকলেন । মনেমনে আমার পাঠানো টেক্সট- সেজের সঙ্গে নামটি মিলিয়ে দেখলেন বোধহয়, সেখানে ‘লেদোয়ার হোসেন’ আছেন কিনা । অবশ্যই নেই । টেক্সটে আমি লেদু মিস্ত্রির কথা লিখেছিলাম । লেদোয়ার হোসেনের কথা লিখিনি । আব্বু অন্য প্রশ্নে গেলেন, তুমি থাকো কোথায় ? নারিন্দা, কারিকর পাড়া । আবার বিভ্রান্তিতে পড়লেন বাবা । বললেন, কি পাড়া, কারিগর পাড়া ? ছেলেটি উস্মা প্রকাশ করে বললো, জ্বি না । উচ্চারণ হবে ‘কা রি ক র পাড়া । এবার আবার কিছুক্ষণ থ’মেরে বসে রইলেন আব্বু । মোবাইল অনকরে মেসেজ দেখে নিলেন । ঠিক আছে । তুমি কি করো ? কিছু করিনা। লেখাপড়া ?

আন্ডারগ্রেড পাশ করেছি । কোথাত্থেকে, সাবজেক্ট এবং প্রাপ্ত সিজিপিএ বলো । বুয়েট থেকে, সিভিল ইনজিনীয়ারিং, গ্রেড পয়েন্ট থ্রী-সেভেন্টি । আব্বু বিস্মিত হলেন না । তিনি এসব জানেন । তিনি জানেন না যা, এইবার সেইসব বিষয়ে তিনি জানতে আর আগ্রহী হলেন না । বললেন, সরি আজাদ, আমি তোমাকে কিছুক্ষণ একা থাকার জন্যে সময় দিয়েছিলাম, ফর রিগেইন ইয়োর-সেলফ । বেস্ট অফ লাক । বাবা ড্রইংরুম থেকে বেরহয়ে এলেন । গিয়ে অফিসরুমে ঢুকলেন । ফোনে কার কার সঙ্গে কথা বললেন । শেষে পেশকারের সাথে কথা বললেন । সব অফিসিয়াল কথা । এই ছেলেটা বাসায় আসা অবধি আমি সারাক্ষণ আব্বু-আম্মুর কীর্তিকলাপ গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করছি ।একটা জিনিস খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, ছেলেটি আসবার পর থেকে আম্মু অথবা আব্বু একটি বারের জন্যেও কেউ কারোর সাথে কথা বলেননি । মনেহচ্ছে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোন অলিখিত চুক্তি বাস্তবায়িত হচ্ছে । মনেহচ্ছে, এরকমটাই হবার কথা ।আম্মু দিব্যি রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ।

অনক্ষণপর আব্বুর অফিস ঘরে আমার ডাক পড়লো । আমি দরজার কাছে দাঁড়াতেই তিনি বললেন, ওদের দুজনকে এখানে আসতে বলো । আমি প্রথমে বুঝিনি । দাঁড়িয়েছিলাম । তারপর বুঝতে পেরে দ্রুত পায়ে আম্মুর কাছে গিয়ে কাথাটা বললাম । আম্মু নির্বিকার চিত্তে বললেন, তো আমার কাছে এসেছিস ক্যান, ওদেরকে অফিস-রুমে যেতে বল্ । আবার আমি তাড়াহুড়া করে শ্যমার ঘরে গেলাম ।শ্যমাকে দেখে মেন্টালের একটা পাগল বলে মনেহলো । আব্বুর কথাটা ওকে বলতেই ও বাছ-বিচারহীনভাবে বললো, চল্ । আরে, এভাবে যাবি নাকি ? শ্যমা উল্টে উঠে আমার উপরেই গরম, তাহলে কি ভাবে যেতে হবে ? আশ্চর্য্য তো ! আশ্চর্য্যের কি আছে, সেজেগুজে পুতুল সেজে তুই যা — আমি হেসে ফেললাম ।

অবশেষে অনেক অনুরোধ-উপরোধ করে, হাতে-পায়ে ধরে চুলটা আঁচড়ে দিয়ে ড্রইংরুমে শ্যামাকে পাঠালেম । সেখানে হলো আরেক কাহিনী । আজাদের সাথে একতরফা ঝগড়া বাধায়ে নিল শ্যামা । বাঘীনির মতো ক্ষিপ্ত হয়ে সে ছেলেটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, এ্যাই লোফার, তুমি আজ এসেছ কেন, একমাস ধরে তোমাকে হন্যে খুঁজেছি আমি, তুমি আমার ফোন ধরোনা — পাত্তাই নেই তোমার, আজ কেমন করে এলে ?  মাথা নিচু করে বসে আছে আজাদ । সামান্য নড়াচড়াও করছেনা সে । শ্লেষের সাথে দ্রুত কথাগুলো বলে শ্যামা হাঁফিয়ে উঠেছিল ।  আবার যখন সে কথা বলে উঠলো তখন কান্নায় তার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে এসেছে । শ্যামা আবেগে ভেঙে পড়ে বললো, আমার যা হয় হবে, আমি চাই তোমার ফাঁসি হোক, তোমার ফাঁসি হোক, তোমার ফাঁসি হোক । শ্যামা দেয়ালে হেলান দিয়ে দুইহাতে মুখ ঢেকে কেঁদেকেটে নাকের জল, চোখের জল একাকার করে ফেললো ।

আমি ইচ্ছেকরেই ওঘরে গেলাম না । মহা-মারামারি যা কিছু হয় হোক ; চোখের জলে সব জঞ্জাল ধুয়েমুছে যাক । মরা ভালোবাসা তাজা হোক । পৃথিবীতে সব দেশে, সব কালে মরা ভালোবাসা উজ্জীবিত করতে নারীর চোখের জলের প্রয়োজন হয়েছে । হয় । এখানেও তার ব্যতিক্রম হলোনা । বেশ কিছুক্ষণপর দেখা গেল, দুজন দুজনার হাত ধরাধরি করে ড্রইংরুম থেকে বেরহয়ে আসছে । আমি রেডীই ছিলাম, অভ্যর্থনা জানিয়ে ওদেরকে আব্বুর অফিসকক্ষ দেখিয়ে দিলাম । শ্যামা মুচকি হাসলো ।

আব্বুর বিরাট সেক্রেটারিয়েট টেবিলের সামনে ওরা বসা । আব্বু জিজ্ঞাসা করলেন, আজাদ, ডু ইউ থিঙ্ক পজিটিভ ? আবুল কালাম আজাদ কথা বললো না । মাথা নিচু করে রইল । শ্যমা বললো, ওর কি বলার আছে,ও কি বলবে আব্বু, তুমি যা বলবে ও তাই করবে ।
সাট-আপ । ওকে বলতে দাও । আব্বু সাউট করলেন । আজাদ এবার কাঁচুমাচু হয়ে বললো, আই আ্যম সরি, আই আ্যাম পজিটিভ ।
আব্বু খুশি হয়ে বললেন, থ্যাঙ্ক ইউ ।

জানালা গলিয়ে আমি কৌতূহলে দাঁড়িয়ে আছি, ঘটনার শেষপর্যন্ত কি পরিণতি হয় । বাংলা সিনেমার মত একটা দৃশ্য দেখলাম । আব্বু ড্রয়ার থেকে এক হাজার- টাকা-টের একটা বান্ডিল বেরকরে আজাদ সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিলেন । শ্যামাকে দেখিয়ে বললেন, সি’জ আনডিউ ইল । আ্যাট ওয়ান্স ওর প্রপার ট্রিটমেন্ট দরকার ।কোথায় কিভাবে করাবে, সেটি তোমার বিষয় । আর একটি কথা — বলে থামলেন আব্বু । বাম ড্রয়ার টেনে আর একটি ছোট কাগজ হাতকরে বললেন, এটি সিটি ব্যাংকের একটা চেক ।এখানে দশ লক্ষ টাকা আছে । ধরো । চেকখানাও আজাদ সাহেবের হাতে দিলেন তিনি । বললেন, তোমরা লেখাপড়ার বিষয়টা কন্টিনিউ রাখবে । আমি সময়মতো চাকরির চেষ্টা করবো । আবার থামলেন তিনি। এই সময় সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো অফিস কক্ষে প্রবেশ করলেন আম্মু । আব্বু বললেন, বসো । আম্মু টেবিলের বাম পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, এই ছেলে, অভিজাত এলাকায় তোমাদের কারো ডুপ্লেক্স-বাড়ি আছে ? নেই । বারিধারাতে শ্যমার নামে হাই চয়স একটা ওয়েল ফার্নিসড দোতালা বাড়ি আছে । আমরা খুব একটা থাকিওনা সেখানে । অনুষ্ঠান, পার্টি-ফার্টি মাঝেমধ্যে করা হয় । শুধুমাত্র বাড়িটা কেনা হয়েছিল এরশাদ সাহেবের প্রসিডেন্টস হাউজের প্রতিববেশি হওয়ার জন্যে। বাড়িটা আজ তোমাদেরকে হ্যান্ড-ওভার করছি । আজ থেকে সেখানেই তোমরা থাকবে । এই নাও চাবি । তিনি কী-ব্যাগটা আজাদ সাহেবের দিকে এগিয়ে দিলেন ।

আম্মু আরো বললেন , দারোয়ান লোকটা বিশ্বস্ত । দু’চারটে পয়সা দিলে ওকে দিয়ে পিওনের কাজটাও করিয়ে নিতে পারবে । কাজের বুয়ার অভাব নেই । মা-বোন কাউকে এনে দেবে দারোয়ান। আমার ডাক পড়লো আবার । এবার ঝাঁজালো কন্ঠে আম্মু ডাকলেন, থাকিস কোথায় — রান্নাঘরে একটি ফুড-ট আছে আর হল থেকে যে লাগেজটা নিয়ে এসেছিল শ্যামা, সেইটা নিয়ে আয় । আমি দ্রুত হুকুম তামিল করলাম । আব্বু বললেন, একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, গ্যারেজে একটা গাড়ি আছে । পুরনো ; নাইন্টি সিক্স মডেলের ডাটসান । হলে কি হবে, রং এবং রেস ভাল আছে । শ্যামার ড্রাভিং’এর হাত খারাপ না । আপাতত: কাজ চলবে। কিন্তু আমার ইচ্ছে নয়, শ্যামা ড্রাইভ করুক । তুমি শিখে নিও । গাড়ির আপডেট কাগজপত্র আমি পাঠিয়ে দেব । আম্মু বললেন, রাত হয়ে যাচ্ছে, ওদেরকে ছেড়ে দাও । আব্বু মনেহয় তার ড্রাইভার হেলালকে ফোন করতে যাচ্ছিলেন, দেখি হেলাল কোথায় –, সঙ্গে সঙ্গে আম্মু চোখ পাকিয়ে বললেন, এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি এজলাস করো কী করে – আমি ভেবে পাইনে । ওরা উবারে যাবে । এ্যাই ছেলে, তুমি উবার ডাকো । গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়াও । ফোন হাতে করে আজাদ সাহেব উঠে গেল । আম্মুও উঠলো । ঘরে গেলেন । আব্বু ওয়াসরুমে ঢুকে গেলেন ।

রুমে শ্যামা আর আমি একা । কেন জানি শ্যামার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার মন খুশিতে ভরে উঠলো । আবার মন খারাপও হলো । আমি ওর কাছে গিয়ে বসলাম । মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল, মন খারাপ ? নাহ্ । আমি চুপকরে থেকে আবার বললাম, আম্মু আর তোর কথা কোনদিন বলবেনা মনেহয় । জানি । দেখেছিস, শশীর কথাও আম্মু আর কখনো বলে না । ভুলে গেছে । হুম। শ্যামা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, এবার তোর পালা । ত্রী-গুন গরম । টিকততে  পারবি তো ? মি বললাম, তুই তো জানিস, আমি অন্য রকম । জানি । আমি বর্জন করবো, কখনো গ্রহণ করবো না । আমি কখনো কোন ম্যানকে ভালোবাসবো না । আমি তার টিকে থাকার শক্তিকে ভালোবাসবো । শ্যামা চুপচাপ মাথা নিচুকরে রইল ।

গাড়িবারান্দায় উবার এসে দাঁড়িয়েছে । হর্ণ দিচ্ছে । ম্যাজিকের মত আম্মু এসে ঘরে ঢুকলো । আব্বুও ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলেন। সবার পেছনে আগন্তকের মত মুখকরে এসে দাঁড়িয়ে রইল আজাদ সাহেব । আম্মু বললেন, সময় নষ্ট করে লাভ কি, তোমরা গাড়িতে উঠে যাও। হঠাৎ পিছন-ফিরে শ্যামা চড়া গলায় বলল, হা-করে দাঁড়িয়ে দেখছো কি, আব্বু-আম্মুকে সালাম করো । আম্মু হা হা করে উঠে আজাদকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, থাক থাক, সালাম করতে হবেনা । যে সালামি দিয়ে গেলে তোমরা, সারা জীবন মনে থাকবে । আব্বু ফিরে গিয়ে চেয়ারে বসলেন । আমি পরিবেশ হালকা করার চেষ্টা করলাম । আজাদ সাহেবকে লক্ষ্য করে বললাম, এইযে মানুষ, লাগেজ টেনে নিয়ে গাড়িতে ওঠান । আমি ফুড সাপ্লায়ার হচ্ছি । আজাদ সাহেব তাই করছিল । আম্মু থামিয়ে দিলেন । রাখো, আমার কথা শেষ হয়নি। মনদিয়ে শোন, টাকা ছাড়া মানুষের কোন দাম নেই, নিজের জীবন দিয়ে এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছ হয়তো ; তাই টাকা কামাই করবে, মানুষ দাম দেবে ।আর একটি কথা । আজ যাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছো, তার কথা মেনে চলবে । জীবনে উন্নতি করতে পারবে । যাও এখন । কথা কয়টি বলে আম্মু গট গট করে ভিতরে চলে গেলেন । আব্বু ম্যানা মুখকরে চেয়ার-হেলিয়ে আরাম করে বসলেন । আবুল কালাম আজাদের চোখে তখন বিস্ময় । সে আম্মুর চলে যাওয়া পথের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে রইল, যেন এরকম দৃশ্য সে এই জীবনে প্রথম দেখলো । আব্বুকে দেখলাম, তিনি নিশ্চিন্ত মনে চোখ বুঁজে আছেন । তার মনেহয় ঘুম পাচ্ছে। শ্যামা বিধ্বস্ত ছবির মতন দাঁড়িয়ে ছিল। চোখদুটো তার ছলছল করছিল ।

এরই মধ্যে আজাদ সাহেব চাবি দেওয়া পুতুলের মতো হঠাৎ নড়েচড়ে উঠে শ্যামার লাগেজ নিয়ে গাড়িবারান্দায় চলে গেল । ওড়নায় চোখ মুছে পিছনে পিছনে শ্যামাও গেল । এদিক-দিক তাকিয়ে উপায়ান্তর না দেখে আমিও তাদেরকে অনুসরণ করলাম । কাঠের পুতুলের মত শক্তহয়ে ওরা গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো । মনে মনে বললাম, কথা তো ছিল, আর যা-  হোক, বিদায় মুহূর্তে সহদোরা বোনকে বুকে জড়িয়ে ধরে একে অপরের জন্যে দু’ফোটা চোখের জল ফেলবো । শ্যামা ভুলে গেল ; সেসব কিছু মনেই হলোনা তার । ড্রইভার গাড়ি স্টার্ট দিল । গাড়ি নড়ছে । হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পেয়ে শ্যামা আঁকুবাঁকু করে গাড়ির ভেতর থেকে দু’হাত তুলে বিদায় জানাতে গিয়ে চোখের পলকে ওদেরকে নিয়ে গাড়ি অদৃশ্য হয়ে গেল । আমি অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম সে পথের দিকে ।

একটি সম্পূর্ণ উপন্যাস ( প্রথম অংশ )

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580