টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেই নতুন পরিচালনা পর্ষদ পাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন।
গত মাসে শেষ হয়েছে বিসিবি সভাপতি হিসেবে নাজমুল হাসান পাপনের দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্বকাল। বিসিবির নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হয়। তবে, ততদিন পর্যন্ত যাচ্ছে না। সামনেই বিশ্বকাপ থাকায় দ্রুতই নতুন বোর্ড পেতে চায় বিসিবি। সে লক্ষ্যে আগামীকালই হতে যাচ্ছে বিসিবির নির্বাচন।
বিসিবির নির্বাচনে মোট ২৩ পদে লড়বেন ৩১ জন প্রতিনিধি। ১৬ পরিচালক পদে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন ২৫ জন পরিচালক। এঁদের মধ্যে ২৩ জন আসবেন তিন ক্যাটাগরিতে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়নে এরই মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুস। এই দুজন আবারও বোর্ড পরিচালক হিসেবে থাকছেন।
বাকি ২৩ পরিচালকের সাত জন— আ জ ম নাছির উদ্দীন ও আকরাম খান (চট্টগ্রাম বিভাগ), কাজী ইনাম আহমেদ ও শেখ সোহেল (খুলনা বিভাগ), শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল (সিলেট বিভাগ), এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম (রংপুর বিভাগ) ও আলমগীর খান আলোর (বরিশাল বিভাগ) কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
বাকিদের নির্বাচন করেই আসতে হবে। ক্যাটাগরি দুইয়ে ভোট যুদ্ধে লড়বেন—নাজমুল হাসান পাপন (আবাহনী লিমিটেড), গাজী গোলাম মর্তুজা (গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স), নজিব আহমেদ (শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব), মাহবুব উল আনাম ও মাসুদুজ্জামান (মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব), ওবায়েদ রশিদ নিজাম (শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব), সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া (ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব), সালাহ উদ্দিন চৌধুরী (কাকরাইল বয়েজ ক্লাব), ইসমাইল হায়দার মল্লিক (শেখ জামাল ক্রিকেটার্স), এনায়েত হোসেন (আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব), ফাহিম সিনহা (সূর্য তরুণ ক্লাব), ইফতেখার রহমান (ফেয়ার ফাইটার্স স্পোর্টিং ক্লাব), মনজুর কাদের (ঢাকা এসেটস), মোহাম্মদ আব্দুর রহমান (মিরপুর বয়েজ ক্রিকেট ক্লাব), রফিকুল ইসলাম (গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি) ও মনজুর আলম (আসিফ শিফা ক্রিকেট একাডেমি)।
আঞ্চলিক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি— ক্যাটাগরি এক-এ পরিচালক পদ ১০টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগ, খুলনা বিভাগ, রংপুর বিভাগ, সিলেট বিভাগ ও বরিশাল বিভাগের সাত পদে নেই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী। নির্বাচন হবে ঢাকা বিভাগের দুটি ও রাজশাহী বিভাগের একটি পদে। বিসিবির গঠনতন্ত্রে ময়মনসিংহ এখনও বিভাগ নয়।
ঢাকা বিভাগের দুটি পদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তানভীর আহমেদ টিটু (নারায়ণগঞ্জ), নাঈমুর রহমান দুর্জয় (মানিকগঞ্জ), সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু (কিশোরগঞ্জ), খালিদ হোসেন (মাদারীপুর)। তবে শেষ মুহূর্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন খালিদ হোসেন। ব্যক্তিগত কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে আমি আসন্ন এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’
ঢাকা বিভাগের ১৮ জন কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমে এখন বাকি তিনজন থেকে দুজনকে বেছে নেবেন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে একটি পদের জন্য লড়বেন খালেদ মাসুদ (রাজশাহী বিভাগ) ও সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী (পাবনা)। এবারই প্রথম নির্বাচন করছেন পাইলট। নয় জন কাউন্সিলর বিভাগের পরিচালক নির্বাচন করবেন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সাবেক ক্রিকেটার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি- ক্যাটাগরি তিনে বিসিবি পরিচালক পদ একটি। এই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। ৪৩ জন ভোটার বেছে নেবেন তাঁদের মধ্যে একজনকে।
সরকারের মনোনয়নে ২০১২ সালের অক্টোবরে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন নাজমুল হাসান পাপন। এক বছর পর আরেক অক্টোবরে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৭ সালের নির্বাচনে আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বোর্ড সভাপতি হন তিনি। এই নির্বাচনেও বিসিবিপ্রধান হিসেবে তাঁর নামই আসছে ঘুরে ফিরে। তবে নাজমুল হাসান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কাউন্সিলররা যেন তাঁদের পছন্দমতোই প্রার্থী বাছাই করে নেন।
এই নির্বাচনে যোগ্য ব্যাক্তিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালেন নাজমুল হাসান পাপন। নির্বাচনের আগে সবকিছু ভুলে যাঁদের দিয়ে ক্রিকেটের উন্নয়ন হয়, তাঁদেরই যেন ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিলর বেছে নেন— সে আহ্বান জানিয়েছেন নাজমুল হাসান।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গতকাল সোমবার রাতে নাজমুল হাসান বলেন, ‘একটা বিষয় আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি—বোর্ডে নতুন মানুষ আসা দরকার। আমি স্বীকার করছি—বোর্ডে শুধু আমাদের নয়, দেশের সব ক্রীড়া বোর্ডে কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা সবসময় কাজ করেন। কিছু মানুষ মাঝে মধ্যে আসেন। আবার, কিছু মানুষকে কাজই করতে দেখা যায় না। এবার বেশি কাজের মানুষ যেন আসার সুযোগ পান, সেজন্য একটা ব্যবস্থা চালু করেছি আমরা। ভালো মানুষ আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। (অথচ) যে পরিমাণ আসার কথা ছিল, সে পরিমাণ কিন্তু আসেননি। এটা আমি আপনাদের বলছি। আমি এখনও কয়েক জনের নাম বলে দিতে পারি, যাঁদের আমি আশা করেছিলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসবেন। তবে ভালো দিকও আছে… নতুন মুখ এসেছে। ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাঁরা, তাঁদের সংগঠন আছে। কাউন্সিলররা যাঁকে ভালো মনে করবেন, তাঁকে ভোট দেবেন। আমি আপনাদের একটা কথাই বলব— আমি খুব খুশি। আমার কোনো সমস্যা নেই।’
এরপর নাজমুল হাসান বলেন, ‘নতুন বেশ কিছু মুখ আছে আমার মনে হয়। তাঁরাও অনেক অবদান রাখতে পারবে বোর্ডে। আপনাদের কাছে একটা অনুরোধই করব— কে কোন দল, কোন গ্রুপ, কে কার মানুষ— সব ভুলে গিয়ে আপনারা যাঁকে মনে করবেন সঠিক ব্যক্তি, যাঁদের দ্বারা ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে, তাঁকেই ভোট দেবেন। এই হলো আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ। কে হারলাম, কে জিতলাম— তাতে কিছু যায় আসে না, কারণ আমরা সব এক।’