লকডাউনে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও নানান উপায় ঢাকায় ফিরছে মানুষ। কোনোমতেই ঠেকানো যাচ্ছে না জনস্রোত। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে বুধবার ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাসের গাদাগাদি করে লোকজন ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। আবার একইভাবে ঢাকায় ফিরছেন অনেকে। আবার পুলিশের নজর এড়িয়ে সুযোগ বুঝে কিছু কিছু গণপরিবহনও ঢাকায় ঢুকেছে। চেকপোস্টে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা এসব দেখেও কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখছে না।
মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা আশফাকুর রহমান জানান, প্রথমে বাসে উঠেছিলেন। কিছুদূর আসার পর পুলিশের একটি চেকপোষ্টে বাসটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের নামিয়ে। পরে সেখান থেকে সিএনজি, মিনি ট্রাক ও মাইক্রোবাসে এসে আমিনবাজার নেমেছেন। পরে পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হয়ে ঢাকায় ঢুকেছেন।
মোশারফ হোসেন জানান, ভোর ছয়টায় ধামরাই থেকে রওনা হয়েছেন। রিকশা সিএনজি মাইক্রোবাস দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি আমিনবাজার পোছতে সক্ষম হয়েছেন। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। একদিক খোলা রেখে আরেক দিক বন্ধ রাখলে কারো কোন উপকার হবে না বরং সবার কষ্ট বাড়বে। তার মত জরুরি প্রয়োজনে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে এবং ঢাকায় ফিরছে।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সব পথেই ভোগান্তি আরও বেড়েছে। পণ্যবাহী যানবাহন এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস চলাচলের কারণে আমিন বাজার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আব্দুল্লাহপুর এলাকাতেও যানবাহনের চাপ রয়েছে। যে হারে ঢাকা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস অন্যান্য যানবাহনে করে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে আবার একই হারে একইভাবে মানুষ ঢাকায় ফিরছে। সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাইনবোর্ড রায়েরবাগ এলাকাতেও মানুষের ব্যাপক চাপ ছিল। আজ সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট অনেকটাই শিথিল ছিল। এই সুযোগে সকালের দিকে বেশকিছু দূরপাল্লার বাস যাত্রী নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে চলাচলরত বেশকিছু গণপরিবহন যাত্রীসহ ঢাকায় ঢুকছে। পুলিশ সদস্যরাও তেমন একটা বাধা দিচ্ছে না। তবে দূরপাল্লার কোন বাস যাতায়াত করেনি। সাইনবোর্ড এলাকার চেকপোস্টে পুলিশ থাকতে তারা যাত্রীবাহী পরিবহনকে বাধা দেয়নি। ঠিকানা পরিবহন, শ্রাবণ পরিবহন, ইকবাল পরিবহন, অনাবিল পরিবহন, হিমালয় পরিবহন, বোরাক পরিবহনের বাসগুলো যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় প্রবেশ করেছে।
রাজধানীর আমিনবাজার, আব্দুল্লাহপুর ও সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য শত শত মানুষ পরিবহনের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। এসব জায়গা দিয়ে যেসব স্থানীয় পরিবহন চলাচল করছে তার সব পরিবহনেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। সব সিট পূর্ণ হওয়ার পর পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী নিতে দেখা গেছে। ব্যাংক কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম জানান, তাকে প্রতিদিন ঢাকায় এসে অফিস করে আবার নারায়ণগঞ্জে ফিরে যেতে হচ্ছে। বাস চলাচল করায় এবং অফিস বন্ধ না থাকায় তাকে চরম দুর্ভোগ নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সরকার সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে লকডাউন ঘোষণা করে মানুষের ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছে।
এদিকে, ঢাকার প্রধান তিনটি বাস টার্মিনাল গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে আজও কোনো বাস ছেড়ে যায়নি এবং ঢাকার বাইরে থেকেও কোনো বাস টার্মিনালে আসেনি বলে জানা গেছে।
এর আগের লকডাউন গুলোতে লোকজন যেভাবে ভেঙে ভেঙে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছেছে এবারও তারা সেই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। পরিবহনগুলো যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে আগের অভিজ্ঞতা এবং পথ অনুসরণ করে চলাচল করছে। তারা কখনো মহাসড়ক ব্যবহার করছে আবার কখনো গ্রামের ভেতরে রাস্তা দিয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটছে।