সম্প্রতি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর মৌখিক পরীক্ষার সময় দেখা যায়, নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিবের বেশ কয়েকজন নিকটাত্মীয় যারা অস্থায়ীভাবে কর্মরত রয়েছে তারা সবাই লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছেন। নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব হলেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান।
এই আসাদুজ্জামানের কম্পিউটার অপারেটর হাসিব প্রশ্নপত্র প্রস্তুত কমিটির সহায়ক, যে কিনা নিজেই পরীক্ষার্থী। আর হাসিব নিজেই প্রশ্নপত্র প্রস্তুত কমিটির সহায়ক হিসেবে কাজ করার কারণে তার বউ, বোন ও পরিবারের আরো সদস্যরা নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। একজন দয়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কতটা উদাসীন থাকলে পরীক্ষার্থীকে দিয়ে প্রশ্নপত্র প্রস্তুত কমিটির সহায়ক করেন। উদাসীনতা নাকি অনৈতিক কোন বিষয় জড়িয়ে আছে এজন্য একটি তদন্ত কমিটি করে সুষ্ঠ সমাধান দাবি করেন শিক্ষা প্রকৌশলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের নিকট একটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে ১২৫০ জন জনবল নিয়োগের বিষয়টি শেষ পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সদস্য সচিব আসাদুজ্জামানের সংশ্লিষ্ট সকল অস্থায়ী কর্মচারীর মধ্যে যারা পরীক্ষা দিয়েছেন তারা প্রায় সকলেই উত্তীর্ণ হয়েছেন। যারা অধিকতর মেধাবী তারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি ফলে মাস্টাররোলে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ডিডি সহযোগী হাসিব সকল অপকর্মের মূল হোতা, হাসিব একজন পরীক্ষার্থী হলেও তাকে সার্ভার এডমিন করে দেওয়া হয়। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাসিব গং ভুয়া পরীক্ষার্থীর ছবি সংযোজন করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে পরীক্ষার্থীর হাতে তুলে দেন এবং হাজিরা শীটেও ভুয়া পরীক্ষার্থী ছবি সংযোজন করেন ফলে পরীক্ষার হলে ভুয়া পরীক্ষার্থী চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া প্রশ্নপত্র হাসিবকে দিয়ে টাইপ পরিকল্পিতভাবে করানো হয়েছে বলে ধারণা করছে বঞ্চিত মেধাবীরা। এই চক্রের সাথে জড়িত ডিডি আসাদুজ্জামান এর অফিস সহায়ক রায়হান ও হাসিব এবং প্রধান প্রকৌশলীর অফিস সহায়ক জসীমউদ্দীন।
বঞ্চিতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই জসিম দীর্ঘদিন প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে চাকুরি করার সুবাদে সারাদেশে তার একটি নিজস্ব সিন্ডিকেট আছে। জসিম বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন হাসিব। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই হাসিব ও জসিম সর্ম্পকে শ্যালক-দুলাভাই। ডিডি প্রশাসন এর অফিস সহায়কের সহযোগিতায় ভুয়া পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিয়ে অনেক পরীক্ষার্থীকে কৃতকার্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেকেই ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছে বলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুত্রে জানা যায়।
অস্থায়ী কর্মচারী অনেকেই এই চক্রের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছে যারা বাস্তবে লেখাপড়া জানেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে আছে প্রধান প্রকৌশলীর অফিস সহায়ক হিমেল ও অফিস সহায়ক ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, অফিস সহকারি ইমরান সহ আরো অনেকেই। নিরাপত্তা প্রহরী ভাইভা পরীক্ষা নেওয়ার সময় চারজন ভুয়া পরীক্ষার্থী সনাক্ত করা হয়। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাস্টার রোলের কর্মচারীরা বলেন ইইডি’র পরিচালক প্রশাসন জনাব আসাদুজ্জামান এর নেতৃত্বে অফিস সহায়ক জসিম, ডিডির পিয়ন রায়হান ও অস্থায়ী কর্মচারী হাসিবের মাধ্যমে শত শত পরীক্ষার্থীর নিকট প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
তাদের দাবি হাজিরা শিট এর ছবি, স্বাক্ষরের সাথে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষর এবং ছবি মিলালে ভুয়া পরীক্ষার্থী চিহ্নিত করা যাবে।
এসব বিষয়ে নিজের পক্ষে সাফাই দিতে ডিডি প্রশাসন আসাদুজ্জামান ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি রাহেদ হোসেনের (পরিচালক, প্রশাসন ও অর্থ) নিকট একটি পদত্যাগ পত্র জমা দেন।
এবষিয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম আজকের সংবাদ’কে জানান, নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব নিজের দোষ চাপা দিতে অযাচিতভাবে আমাদের উপড় দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে সচিব মহোদয়ের নিকট জমা দিয়েছি। যেসব অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে তার কোন প্রমাণ নেই, আমি বা আমাদের সংগঠনের কেউ এ ধরণের কোন কাজের সাথে সম্পৃক্ত নই।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত হাসিব ও জসিমের সাথে যোগাযোগ করে তাদের অফিসে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেননি। অভিযোগের বিষয়ে অফিস সহকারী রায়হান নিজেকে নিদোর্ষ বলে দাবি করেন। নিয়োগ কমিটির সভাপতি রাহেদ হোসেন ও সদস্য সচিব ডিডি প্রশাসন আসাদুজ্জামানের সাথে বার বার চেষ্টা করেও কোনভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।