রাজনীতির সামনে এখন গুণগত পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ। আর এই পরিবর্তনের জন্য সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে তরুণদেরই। ভোটের সময় যদিও অনেক বাকি। তবুও বেশ আগেভাগেই গণমানুষের মাঝে দেখা যাচ্ছে তরুণ, উদীয়মান, সম্ভাবনাময়, প্রতিশ্রুতিশীল অনেককেই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও ‘দৈনিক বাংলাদেশ সময়’-এর সম্পাদক ড. মিঠুন মোস্তাফিজ। তিনি দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায়-বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি (সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া)-এর সদস্য ছিলেন তিনি।
নিজ সংসদীয় এলাকা-৬৪, সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ-সলঙ্গা) গণমানুষের সাথেই এখন সময় পার করছেন তিনি। আওয়ামী লীগের তরুণ নেতৃত্বের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন এই সাংবাদিক, শিক্ষক ও গবেষক; যার আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রয়েছে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট-আইসিএসডি-এর নির্বাচিত ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই বৈশি^ক ফোরামে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের, সম্মানের।
বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার আগে তিনি বৈশাখী টেলিভিশনের নিউজ কনসালট্যান্ট, একই প্রতিষ্ঠানের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন বিদেশি টেলিভিশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিন্দু-মুসলিম মৈত্রী বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
দেশের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিভাবান ও উচ্চশিক্ষিত তারকা ব্রডকাস্ট সাংবাদিক হিসেবে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। শিক্ষক হিসেবেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন এরই মধ্যে। বহুমুখী গুণসম্পন্ন, তরুণ এই সাংবাদিক নতুন প্রজন্মের টেলিভিশন সাংবাদিকদের কাছে একটি অনুকরণীয় নাম। স্বীয় যোগ্যতায় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গণমাধ্যম পেশাদার হিসেবে মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছেন। ইলেকট্র্রনিক মিডিয়ায় দ্যুতি ছড়িয়েছেন প্রায় দেড় যুগ।
তিনি একাধারে ছিলেন টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক, অনুষ্ঠান উপস্থাপক, টিভি অনুষ্ঠান ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক। দেশের বেসরকারি টেলিভিশনের ইতিহাসে তিনিই প্রথম বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও সরেজমিন রিপোর্টিং করেছেন এক দশককাল এবং এ উদ্যোগের অগ্রণী হিসেবে আসীন হয়েছেন। তাঁর পরে দেশে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় কেউ এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে দেখিনি আমরা। ইংরেজি অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ঈর্ষণীয় খ্যাতি তাঁর ঝুড়িতেই। নির্মাণ ও উপস্থাপনা করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রাপ্ত বিদেশি বন্ধুদের নিয়ে বৈশাখী টেলিভিশনে প্রচারিত বিশেষ অনুষ্ঠান ‘যুদ্ধ দিনের বন্ধুরা’। যা বিদেশিদের বর্ণনায় এখন পর্যন্ত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম দৃষ্টান্তমূলক ভিজ্যুয়াল দলিল ও সাক্ষী। তার এই কর্মের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের এক অনন্য ধারা খুঁজে পায় তরুণ প্রজন্ম।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিয়মিত অতিথি প্রতিবেদক ও আলোচক হিসেবে সুনাম কুড়ানো মিঠুন মোস্তাফিজ পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় উগ্রপন্থার মতো বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জিং ইস্যুতে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের সিটি অব প্যাটারসন কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের অক্টোবরে তাকে বিশেষ নাগরিক সম্মাননা জানায়।
সিটি অব প্যাটারসন কর্তৃক মিঠুন মোস্তাফিজকে প্রদত্ত মানপত্রে বলা হয়, ‘সন্ত্রাস, ধর্মীয় উগ্রপন্থা ও আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরি এবং নিজ দেশের সীমানা পেড়িয়ে বৈশ্বিক ইস্যুতে নানা চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শক্তিশালী ও দৃঢ় মতামত প্রদান, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা এবং গণমাধ্যমের সহায়তায় আক্রান্ত মানুষের অধিকারের পক্ষে তিনি নিবেদিত রয়েছেন। তাঁকে সম্মাননা জানাতে পেরে গর্বিত সিটি অব প্যাটারসন আশা করে সাধারণ মানুষের পক্ষে তাঁর এই বলিষ্ঠ ভূমিকা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য পেড্রো রড্রিগুয়েজ ফাউন্ডেশন’ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মিঠুন মোস্তাফিজকে সম্মাননা জানানো হয়। ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান মি. পেড্রো রড্রিগুয়েজ আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে সম্মাননা জানান।
ব্রডকাস্ট জার্নালিজমে বহুমুখী ভূমিকা-বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে একইসঙ্গে দায়িত্বশীল টিভি রিপোর্টিং ও সংবাদ উপস্থাপনা, ক্রিয়েটিভ ডিরেকশন, অনুষ্ঠান নির্মাণ, বাংলা ভাষার মূল স্রোতের টেলিভিশনের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় রিপোর্টিং, ইংরেজি সংবাদ ও অনুষ্ঠান উপস্থাপনা তদুপরি আন্তর্জাতিক টেলিভিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টিশীল ভূমিকার জন্য গণমাধ্যমে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘আলফা তারকা’ পুরস্কার ২০১৭ অর্জন করেন তিনি।
রাজনৈতিক প্রতিবেদনের পাশাপাশি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন, পররাষ্ট্র ও কূটনীতি, সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশু অধিকার, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার, অর্থনীতি, শিক্ষা, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ উন্নয়ন সাংবাদিকতায় মিঠুন মোস্তাফিজ নিরন্তর দায়িত্বশীল বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর প্রমাণিত। ‘আইলা’, ‘সিডর’, ‘মহাসেন’, ‘নার্গিস’-এর মতো জাতীয় বিভিন্ন দুর্যোগে তার সাংবাদিকতা মানবিকতাকে স্পর্শ করেছে এক সময়। সুন্দরবনের শ্যালা দুর্ঘটনায় তার রিপোর্টিংয়ে পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি সাংবাদিকতার দায়িত্ববোধের প্রকাশ ঘটেছে।
এক সময়ের মঙ্গাকবলিত উত্তরের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটের বেকারত্ব, খাদ্যাভাব ও কর্মস্থানের অভাবের ওপর তার নির্মিত টেলিভিশন প্রতিবেদন এসব এলাকায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণে পথ দেখিয়েছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, গণকবর ও রাজাকারদের ওপর তার গবেষণা ও অনুসন্ধানধর্মী প্রতিবেদন এখনো মানবতাবিরোধীদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে। বিশ্বের সংসদীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম-১৭৩টি দেশের সংগঠন ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়ন-আইপিইউ-এর ১৩৬তম ঢাকা সম্মেলন ২০১৭-এর বহুমাত্রিক কাভারেজের জন্য তিনি বহুল প্রশংসিত। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দেশের সবগুলো সিটি করপোরেশনের নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন কাভার করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের নির্বাচন কাভারেজ এবং ইউরোপজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা, পর্যটন ও সংস্কৃতি, ইউরোপে বাংলাদেশি কমিউনিটির অর্থনৈতিক অবদান, শিক্ষা, পর্যটন ও সংস্কৃতি নিয়ে সংবাদ কাভারেজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই সাংবাদিকের। ব্রিটেনের রাজনীতি ও কমিউনিটি পলিটিক্সের উপরও বিশ্লেষণধর্মী সংবাদ কাভারেজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন, ব্রিকস-বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন, আইপিইউ সম্মেলন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন ইস্যুতে দক্ষতার সাথে রিপোর্টিং করেছেন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এবং সে দেশে অর্থপাচার ও বাংলাদেশিদের সেকেন্ড হোম নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন তিনি। তিনিই প্রথম ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির সম্ভাব্যতা নিয়ে টেলিভিশন প্রতিবেদন করেন। পেশাগত কাজে ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর বহু ডজন দেশ। তিনি ২০০৬-এর শেষ দিক থেকে একুশে টেলিভিশনে যুক্ত হবার পর রাজনৈতিক সংবাদ কাভার করতেন। পাশপাশি টেলিভিশনে প্রাইমটাইম সংবাদ উপস্থাপনা করতেন। ২০০২ সাল থেকে সংবাদ পাঠ শুরু তাঁর।
রাজনৈতিক বিষয়ের খবর সংগ্রহে পরিপক্ব হয়ে ওঠার সাথে সাথে পর্যায়ক্রমে একুশে টেলিভিশনের জনপ্রিয় টকশো ‘একুশে সময়ে’ প্রতিবেদক হিসেবে অংশ নেন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনায়। এরপর টেলিভিশনটিতে ‘এই সপ্তাহের বিশ্ব’, ‘সপ্তাহজুড়ে’, ‘আজকের পত্রিকা’ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন তিনি।
তাঁর পরিচালনা, প্রযোজনা ও উপস্থাপনায় শুরু হয় বেসরকারি টেলিভিশনের ইতিহাসে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে ইস্যুভিত্তিক মতামতধর্মী অনুষ্ঠান ‘জনতার কথা’। এরপর যখন বৈশাখী টেলিভিশনের সাথে যুক্ত হন ২০১০ সালে, তখন থেকে সাংবাদিকদের নিয়ে নির্মিত ও প্রচারিত জনপ্রিয় সরাসরি অনুষ্ঠান ‘রিপোর্টার্স ডায়েরি’ উপস্থাপনা করেন তিনি। উপস্থাপনা করেন ‘বিজনেস বাংলাদেশ’সহ বিভিন্ন সময়ের বিষয়ভিত্তিক টেলিভিশন অনুষ্ঠান। এর ফাঁকে বাংলাদেশ টেলিভিশনেও বেশকিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা হয়েছে তাঁর। তাছাড়া ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন বাংলা ও ইংরেজিতে। তিনি পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের বিশেষ দূত ভ্যাটিক্যানের জ্যাঁ লুই তুরনের সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেন। পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন আমেরিকার জনপ্রিয় সুপার মডেল ক্রিস্টি টার্লিংটনের সাক্ষাৎকার -ভিত্তিক অনুষ্ঠান- ‘ক্রিস্টি টার্লিংটন স্পেশাল’।
পত্রিকায় কলাম লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন একাডেমিক জার্নালেও মিঠুন মোস্তাফিজের একাধিক গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া গবেষণা, গণমাধ্যমও সাংবাদিকতা, গণতন্ত্র ও সুশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে তার অধ্যবসায় চলমান রয়েছে। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় হতে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শেষ করার পরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় হয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পিজিডিডিএম সম্পন্ন করেন তিনি। পরে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় হতে এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন ২০১৮ সালে।
রাজনৈতিক নেতৃত্বে মিঠুন মোস্তাফিজের মতো এমন তরুণদের সম্পৃক্ততা জরুরি এবং আশা জাগানিয়া। তার মতো তরুণরাই পারে ডিজিটাল বাংলাদেশে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে নেতৃত্ব দিতে। উচ্চশিক্ষিত, তরুণ নেতৃত্বকে খুঁজে নেয়া হলে রাজনীতির ধারা বদলাতে বাধ্য। তবে, আমি মনে করি তরুণদের প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিশেষ করে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে অঙ্গীকার তার বাস্তবায়ন ঘটাতেই আমাদের মতো গ্রামীণ জনপদে এমন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ নেতৃত্বের ভীষণ প্রয়োজন।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট