বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দৈনিক আজকের সংবাদ পত্রিকার সংবাদ পড়তে এখন থেকে আমাদের নতুন ওয়েবসাইট www.dailyajkersangbad.com ভিজিট করুন। টাংগাইল বন বিভাগের দোখলা সদর বন বীটে সুফল প্রকল্পে হরিলুট আগ্রাবাদ ফরেস্ট কলোনী বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলেন মোজাম্মেল হক শাহ চৌধুরী ফৌজদারহাট বিট কাম চেক স্টেশন এর নির্মানাধীন অফিসের চলমান কাজ পরিদর্শন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে: শেখ সেলিম সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র চলছে সীমাহীন অনিয়ম এলজিইডির কুমিল্লা জেলা প্রকল্পের পিডি শরীফ হোসেনের অনিয়ম যুবলীগে পদ পেতে উপঢৌকন দিতে হবে না: পরশ নির্বাচন যুদ্ধক্ষেত্র নয়, পেশি শক্তির মানসিকতা পরিহার করতে হবে: সিইসি

‘খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে না দিলে আপনারা পালাবার পথও পাবেন না’

নিউজ ডেক্স:
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৪২২ পাঠক পড়েছে

।। নীলরং  প্রজাপতি ।।

                                    আমজাদ হোসেইন

শ্যামার দুর্ঘটনার পর আব্বু ঢাকা থেকে বদলী হয়ে গেলেন । বদলী হয়ে যশোর এলেন । ভিখারুন্নেছা থেকে ইন্টার দিয়ে আমিও পরিবারের সাথে যশোর এলাম । কোচিং করার জন্যে আমাকে আর ঢাকায় যেতে দেওয়া হলোনা । বলা হলো, আমার মতো ছাত্রীর জন্যে কোচিং’এর প্রয়োজন হবেনা । আসল কারণটা আম্মু নিজের কাছে গোপন করে রাখলেন । আমার কাছে আগে থেকেই এই বদ্ধ আবাসন ভালো লাগতো না । শ্যামা চলে যাওয়ার পর আমার অবস্হা আরো খারাপ হলো । আমাকে নিয়ে আম্মুর দুশ্চিন্তার শেষ নেই । আমার প্রতি অবিশ্বাস তার হান্ড্রেড পার্সেন্ট । আম্মুর ধারণা, শশী এবং শ্যামা একটু বোকা বোকা ছিল — এইটা হাড়ে চালাক, বুদ্ধি বেশি, চেহারাও বেশি ভাল ; এবং ওর বিপদও বেশি । দেখি একদিন রাতে খাবার টেবিলে আম্মু আব্বুকে বলছে, সিমিকে  বিয়ে দিয়ে দাও । আব্বু কোন প্রতিউত্তর করলেন না ।
আম্মু বলল, পড়ালেখা ওই বাড়িতে গিয়ে করবে ।
এবারো আব্বুর কোন শব্দ নেই । তিনি উঠে গিয়ে বেসিনে হাত ধুলেন ।
আম্মু চেতে গিয়ে বললেন, কি, আমার কথা তুমি শুনতে পাওনি ?
আব্বু খুব শান্ত এবং নিরুত্তাপ কন্ঠে বললেন, দাওগে । আমাকে এর মধ্যে টেনোনা । মানে ?
আব্বু এই মানে-টানের  কোন জবাব না দিয়ে সোজা অফিস-রুমে ঢুকে গেলেন ।
শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ । একতরফা যুদ্ধ । জন্ম অবধি আমরা এই সংসারে একতরফা যুদ্ধই দেখে এসেছি ।
সামনে আমার আন্ডার গ্রেড ভর্তি পরীক্ষা । লেখাপড়ায় মন দিতে পারছিনা । তবু আমার বিশ্বাস, ভাল কোন প্রতিষ্ঠানে আমি চান্স পাবো । আমার টার্গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় । রিসার্চ ওরিয়েন্টেড কোন সাবজেক্ট চয়েস করবো । বিদেশে নয় ; দেশেই কোন ইনভেনশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবো আমি । সীমিত অর্থের অর্থময় জীবন চাই আমার ।
কী ভাগ্য আমার ! কোত্থাও চান্স পেলাম না আমি ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দু:স্বপ্ন হয়ে থাকল আমার । আর দু’একটা প্রতিষ্ঠানে যাওবা পরীক্ষা দেবার সুযোগ ছিল কিন্তু মনটা এমনভাবে হতাশায় ডুবে থাকলো যে, পরীক্ষার কথা ভাবনাতে এলেই ভয় করতে লাগলো আমার ।
বাসার সবাইকে ভয় পেতে থাকলাম, এমন কি চাকর-বাকর ড্রাইভারকে পর্যন্ত ; কে কখন কি জিজ্ঞাসা করে বসে ।
আব্বু অফিস নিয়ে ব্যস্ত । ইদানীং কিছুটা ভুলোমনা হয়ে গেছেন ।
আম্মুর কোন প্রতিক্রিয় নেই । ঘোলাজলে তিনি বোধকরি মৎস্য শিকারে ব্যস্ত ; সুযোগ বুঝে যদি কোন অজুহাতে মেয়ের বিয়ের কথা আবার পারা যায় !
সেদিন ছিল শনিবার । ছুটির দিন । বাসায় মানুষ তিন জন । রেওয়াজ অনুযায়ী দুপুরে একসঙ্গে  লাঞ্চ করার কথা । কিন্তু আম্মু রান্না তদারকি করে সকাল-সকাল ঝিকরগাছা বড় খালার বাসায় গেছে জান জুড়াতে ।
আসলে তো তা-ই । জান জুড়ানোর দরকার আছে ।
বর্তমানে আমরা তিনজন মানুষ, একই বাসায় তিন মেরুতে বসবাস করছি । আর এসব এখন আমার কারণেই যে হচ্ছে, বলাই বাহুল্য । আমিই অশান্তির ডিপু, অশান্তির কেন্দ্রবিন্দুতে আমার অবস্হান । নিগেটিভ পারসন । পারতপক্ষে কেউ আমার সঙ্গে কথা বলেনা । আর আমিও লুকিয়ে থাকতে পারলে বাঁচি ।
আব্বু দপুরে খেতে এসেছেন টেবিলে । আমি ঘরে শুয়ে আছি । শুয়ে শুয়েই শুনতে পাচ্ছি, বুয়াকে
আব্বু বলছেন, বক্কারের মা, সিমিকে ডাকো, আমার সঙ্গে খাবে ।
বুয়া বলল, খানিক বাদে সিমি আপা খাইচেন ছার ।
আব্বু বললেন, আবার খাবে, তুমি ডাকো ।
বক্কারের মা স্যান্ডেলের ফটাস-ফটাস শব্দ তুলে  এদিকেই আসছে, বুঝতে পারলাম । আমিও মুহূর্তে জম্মের ঘুমে অচেতন হয়ে গেলাম ।
দরজার কাছ থেকেই বুয়া ফিরে গেল ।
ছার, সিমি আপা গুমায়ে আছে ।
এরপর আর কোন কথা শুনলাম না । সবাই চুপচাপ ।
আব্বু হয়তো খাওয়া শুরু করেছেন ।
খুব বেশি হলে তিন মিনিট । চেয়ার ঘটর-মটর করে আব্বু উঠে পড়লেন ।
খাবার খেতে এসে তিনি মহরা দিয়ে চলে গেলেন ।
আমার খারাপ লাগলো ।
তৃপ্তিকরে খাওয়ার সাথে সুস্হ মানসিকতার একটা সম্পর্ক আছে । মন যত খারাপ হয় খাবারও তত বিস্বাদ হয় । শশী শ্যামা বাসা থেকে চলে যাবার পর আমাদের খাবার টেবিলের স্বস্তি নষ্ট হয়ে গেছে । উপর্যুপরি দুর্ঘটনা পিছু ছাড়ছে না ।
এখন যত বকবক খাবার টেবিলেই আম্মু করেন । এবং আব্বু সংক্ষিপ্ত খাবার খেয়ে টেবিল থেকে উঠে যান । এটাই যেন এখন নিয়ম ।
আজ আব্বুর ফেবারিট তরকারি রান্না হয়েছিল বাসায় । রান্নাঘরের ঘ্রাণ বলে দিচ্ছিল, পটল দিয়ে ইলিশ মাছের ঝোল , টাকি ভর্তা, ভাজা শুকনো মরিচের বেগুন পোড়া, সুগন্ধি মাশকালাইয়ের ঘন ডাল আর কাঁচা আমের মিষ্টি চাটনি ।
কিন্তু আব্বু প্রায় না খেয়েই উঠে গেলেন ।
খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল নিজেকে ।
আম্মু নেই, আমি পাশে থাকলে নিরিবিলি পরিবশে আরাম করে খেতে খেতে মন খোলাসা করে হয়তো মনে জমা হয়ে থাকা তাঁর কথাগুলো আমায় বলতে পারতেন । ইচ্ছে হচ্ছিলো, উঠে গিয়ে আব্বুর হাত ধরে টেনে এনে খাবার টেবিলে আবার বসিয়ে দেই ।
অকস্মাৎ বালিশের পাশে রাখা সেলফোনটা চিৎকার করে উঠলো । আবার থেমেও গেল ।
টেক্সট মেসেজের আওয়াজ ।
খুলে দেখলাম । বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো । পাবনা প্রযুক্তি থেকে শুভ কামনা জানিয়ে একটি ছাত্র সংগঠন অপসন লিঙ্কসহ মেসেজটি পাঠিয়েছে ।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আমার রোল নম্বর কত ছিল মনে করতে পারলাম না । ভ্যানিটি ব্যাগ হাতিয়ে এডমিট কার্ডটি পেলাম ।
অপসনে গিয়ে সার্চ দিয়ে দেখে অবাক হয়ে গেলাম । পিঁপড়ার মতো লেখাগুলা বুকের ধুকপুকানি
বাড়িয়ে দিয়েছে ।
আমার রোল নম্বর ও নামের পাশে স্টার দিয়ে সেভেন্থ স্ট্যান্ড পজিশন মার্ক করা ।
আমানিশার অন্ধকারে একবিন্দু আলোর দিশা ! হোক না তা বিন্দুবৎ ।
রুমের মধ্যে কিছুক্ষণ পায়চারী করলাম। স্হির হয়ে অনেককিছু ভাবলাম ।
মনটা শান্ত হলো । বহু কথিত কথাটি মনেহলো, মানুষের দু:খবোধ আর কান্না একান্তই নিজের । খুশি আর  আনন্দের বিষয় সমস্তটাই প্রিয়জনের ।
আমি আব্বুর কাছে গেলাম ।
দরজায় দাঁড়াতেই ভেতর থেকে আব্বু বললেন, আয় মা আয় । কনগ্রাচুলেশনস !
আমি অবাক !
তোতলাতে-তোতলাতে  বললাম, তুমি কি,তুমি কি — সব খবর জানো আব্বু ?
আব্বু মাথা দুলিয়ে বললেন, না । তবে আমি জানতাম, কোন খবর হলেই তোর অচল দুনিয়া আবার সচল হয়ে যাবে । এখন খবর হয়েছে, এখন সব সচল হয়েছে ।
আমি কোন কথা বললাম না ।
একটুখানি হাসলাম ।
আব্বু খুশি হয়ে  বললেন, তা খবরটা কোথায় হলো মা ?
আমি বললাম, পাগলদের দেশে ।
আব্বু ক্ষণকাল চিন্তা করে হেসে ফেললেন । বললেন, পাবনায় ? পাগলরা কিন্তু ভাল মানুষ হয় মা । ভাল মানুষ পাগল হলে আর রক্ষা নেই – ম্যাড হয়ে যায় ।
অনেকদিন পর আব্বুর সঙ্গে আমিও প্রানখুলে হাসলাম ।
আব্বুকে রেজাল্টের কথা বললাম । সাব্জেক্ট চয়েসের কথা বললাম । আর মেসেজটি পাওয়ার পর রুমে হাঁটতে-হাঁটতে মনে মনে যে কথা যেভাবে ভেবে রেখেছিলাম, আব্বুকে সেকথা সেই ভাবে বলার জন্যে প্রথমেই ভূমিকা করে বললাম, আমার বয়স কত হলো আব্বু?
আমি বলতে পারবো না, তোর আম্মু বলতে পারবে ।
আমি বললাম, আমি বলতে পারবো । আজ আমার বয়স হলো, সতের বৎসর সাত মাস ষোলদিন ।
বয়স মেপে কি করবি তুই ?
সন্তানের বয়স আঠারো বৎসর হলে স্বাবলম্বীতার একটা প্রথা আছে জানো ?
এদেশে নয় ; সেটা পশ্চিম দেশে ।
আমি বললাম, প্রথাটি অনুসরন করতে চাই ।
আব্বু অবাক হয়ে বললেন, পাবনায় ভর্তি হতে না হতেই তোর পাগলামো শুরু হয়ে গেল ?
আমি আব্বুর পিঠের কাছে দাঁড়িয়ে চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললাম, না আব্বু, এইটা আমার পাগলামো নয় ; এইটা আমার ভিশন ।
তোর বয়স তো আঠারো হয়নি !
আমার বয়স যেদিন আঠারো বৎসর এগার মাস ঊনত্রিশ দিন হবে, তোমাদের কাছ থেকে আমি সেদিন আলাদা হয়ে যাবো । তখন থেকে আমার জন্যে আমি আর তোমাদের কাছ থেকে একটি পয়সাও নেবনা ।
আব্বু আমার দিকে ঘুরে বসলেন । আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে বললেন, এসব কি কথা, এইসব কথা বলছিস কেন তুই ? বললেই হলো ? আমাদের এত সম্পদ, টাকা-পয়সা কার জন্যে, কি হবে এসব দিয়ে ?
সিরিয়াসলী আব্বু, সিরিয়াসলী — তুমি ধরেই নিতে পারো যে, শশী তোমাদের কাছে আর ফিরে আসবেনা । শ্যামা এরপর না খেয়ে মরে গেলেও তোমাদের কাছে হাত পাতবে না ।  আর আমার কথা আমি অনেষ্টলি বলে দিয়েছি আব্বু ।
আব্বু কোন কথা বললেন না ।
চোখ থেকে চশমা খুলে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলেন ।
গভীরকরে কি কিছু ভাবছেন আব্বু ? ভাবুন । আমি তো তা-ই চাইছি ।
ভালোবাসার চেয়ে সম্পদ প্রাপ্তির স্পৃহা বেশি হয়ে গেলে জীবন থেকে এক সময় ভালোবাসা মাইনাস হতে থাকে । এই বোধটি এখন উদয় হওয়াই ভাল ।
আমি তাড়া দিয়ে বললাম, আব্বু, কী এত ভাবছো, এসব নিয়ে পরে ভেবো । এখন ওঠোতো, খাবে এসো । ওঠো ।
আব্বু  ছোট্টকরে একটা শ্বাস ছাড়লেন । বললেন, আমি খেয়েছি রে মা ।
আমি বললাম, আমিও তো তোমার মতো টেবিলে খাবার দেখে এসেছি । খাওয়া হয়নি । এখন খাবো । ওঠো ।
আমি আব্বুর হাত ধরে টানলাম ।
তিনি বাচ্চা ছেলের মতো আমার হাত ধরে হেঁটে হেঁটে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলেন ।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580