২০২৩ সালের মধ্যে ৭ হাজার ২৪০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি করেছে। খেলাপি ঋণ কমানোর মানে হলো এ টাকা খেলাপিদের কাছ থেকে আদায় করা হবে।
ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।
তবে শুধু চুক্তি করলেই হবে না, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে এ কাজে সফল হতে হবে। উল্লেখ্য, এর আগে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ আদায়ে সফল হয়নি ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক।
উল্লেখ্য, গত ছয় মাসে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সময়ের মধ্যে দুটি ব্যাংক আদায় করেছে ১ দশমিক ৯৪ এবং ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ ঋণ। অপর দুই ব্যাংকের অর্জন মাত্র শূন্য দশমিক ২৪ এবং শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি ব্যাংকগুলো।
বস্তুত এখন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ আদায়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার কোনোটিই কাজে দেয়নি; বরং খেলাপিদের নানাভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা। এ অবস্থার পরিবর্তন তাই জরুরি হয়ে পড়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে কতটা সম্ভব হবে-সেটাই প্রশ্ন।
দেশে ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো উচ্চ খেলাপি ঋণ। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করছে। বিগত সময়ে দেখা গেছে, প্রভাবশালীরা ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ অবলোপন ইত্যাদির মাধ্যমে ঋণখেলাপির দায় থেকে মুক্ত থেকেছেন।
কিন্তু এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি; বরং তা ঋণ আদায় প্রক্রিয়া আরও প্রলম্বিত হয়েছে। তাই খেলাপি ঋণ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সমাধানটি এমন হওয়া উচিত যাতে ঋণখেলাপিরা যত বড় প্রভাবশালীই হোন, তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি যুগান্তরকে বলেছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপসহ নানা ধরনের চাপ আসবে। এসব চাপ থেকে মুক্ত থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করতে পারলে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি অর্জন করা সম্ভব হবে।
তিনি এ কাজের মনিটরিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে সফল হলে পুরস্কার আর ব্যর্থ হলে তিরস্কারের বিষয়টি যোগ করতে হবে। বস্তুত খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থতার দায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়-কেউই এড়াতে পারে না। কাজেই খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে বলে মনে করি আমরা।