পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতি প্রবর্তনে সরকার অনড় অবস্থান নিয়েছে- এটি একটি শুভ সংবাদ।
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনিচ্ছুক পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে ইতোমধ্যে বৈঠকও করেছেন।
প্রয়োজনে তিনি এই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে বক্তৃতা দেয়ারও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, করোনা মহামারীর কারণে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করলে ওই প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে নাকচ হয়ে যায়।
এর ফলে পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার পথ উন্মুক্ত হয়। এখন সংশ্লিষ্ট পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজি করাতে পারলেই গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনে অনিচ্ছুক চারটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে গুচ্ছবদ্ধ হতে পারে এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতৃত্ব দিতে পারে বুয়েট। বাকি ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছে।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হলেও, এমনকি খোদ রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা সত্ত্বেও এতদিন তা বাস্তবায়নে অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। মূলত বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনাগ্রহের কারণেই বিষয়টি আটকে আছে। ধারণা করা হয়, এর পেছনের কারণ হল- বিদ্যমান ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় অঙ্কের আয় হয়। ভর্তি বাণিজ্য ও কোচিং-গাইড বাণিজ্যের জন্যও অনেকে গুচ্ছ পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে এ ধরনের অনৈতিক ব্যবসা নিরুৎসাহিত হবে।
সবচেয়ে বড় কথা, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের দুর্ভোগ লাঘব হবে। উল্লেখ করা যায়, বিদ্যমান পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদাভাবে ফরম কিনতে হয় এবং আলাদাভাবে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।
এতে তাদের সময়, পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হয় বেশি। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের মনের ওপরও বাড়তি চাপ পড়ে। তারা নিরাপত্তাহীনতায়ও ভোগে। আর বহিরাগতরা সুবিধা দেয়ার নাম করে ফায়দা লোটে।
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার সবচেয়ে ভালো দিক হল, এতে কোনো শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হবে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি বন্ধেও গুচ্ছ পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। অর্থাৎ সব বিবেচনায়ই এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। আমরা মনে করি, সরকার গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে যে অবস্থান নিয়েছে, তা থেকে কোনোক্রমেই সরে
আশা উচিত হবে না। যে কোনো উপায়েই হোক, অনিচ্ছুক পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়কে এ ব্যাপারে রাজি করাতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না।