বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দৈনিক আজকের সংবাদ পত্রিকার সংবাদ পড়তে এখন থেকে আমাদের নতুন ওয়েবসাইট www.dailyajkersangbad.com ভিজিট করুন। টাংগাইল বন বিভাগের দোখলা সদর বন বীটে সুফল প্রকল্পে হরিলুট আগ্রাবাদ ফরেস্ট কলোনী বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলেন মোজাম্মেল হক শাহ চৌধুরী ফৌজদারহাট বিট কাম চেক স্টেশন এর নির্মানাধীন অফিসের চলমান কাজ পরিদর্শন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে: শেখ সেলিম সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র চলছে সীমাহীন অনিয়ম এলজিইডির কুমিল্লা জেলা প্রকল্পের পিডি শরীফ হোসেনের অনিয়ম যুবলীগে পদ পেতে উপঢৌকন দিতে হবে না: পরশ নির্বাচন যুদ্ধক্ষেত্র নয়, পেশি শক্তির মানসিকতা পরিহার করতে হবে: সিইসি

নীলরঙ  প্রজাপতি

নিউজ ডেক্স:
  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৩১৬ পাঠক পড়েছে

নীলরঙ  প্রজাপতি
                                       আমজাদ হোসেইন

আজ সকালে ঘুম ভেঙে মনেহলো মনটা প্রশান্তিতে ভরে আছে । জানালার শার্সি গলে শীতের সূর্য্য সারা ঘরময় মিষ্টি আলো ছড়িয়ে দিয়েছে । হলে ফিরতে কাল একটু রাত হয়ে গেছিলো । রাজাপুর যে আপার বাসায় তার ফুটফুটে জমজ দু’টো মেয়েকে আমি প্রাইভেট পড়াই, গতকাল একুশে ডিসেম্বর ছিল ওদের জন্মদিন ।ওরা গভ: গার্লস স্কুলে এবার ক্লাস টেন’এ প্রমোট করেছে । আপা সোনালী ব্যাংকের এ জি এম । উনি একজন শিল্পপতির স্ত্রী । অতি চমৎকার মানুষ। আপার হাত এড়াতে না পেরে ঘরোয়া এই অনুষ্ঠানে শেষপর্যন্ত আমাকে উপস্হিত থাকতে হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে আমার জন্যে একটা চমক ছিল । উপস্হিত সবার আ্যাটেনশন কমনা করে ঘোষনা দিয়ে বলা হলো, ‘গতবারে জেএসসি’র মতো এবারও আমাদের কন্যাদ্বয় নীতু-মিতু ক্লাসে অভূতপূর্ব রেজাল্ট করেছে ।  তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ওদের প্রিয় ম্যাডাম-আপু, সিমির । সিমিকে আমরা আজ আমাদের পরিবারের জ্যেষ্ঠকন্যা রূপে গ্রহণ করছি । আজ থেকে সিমির স্যালারীর বেরিয়ার তুলে নেওয়া হলো ।

ফ্রম দি ডেট অফ টুডে, সিমি উইল সেটেল্ড হার লিভিং-কষ্ট ইউজুয়ালী ।’ অন্যরকম এক অনুভূতিতে আমি আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম, দেখলাম, করতালিতে অনুষ্ঠান মুখরিত হয়ে উঠেছে । নীতু-মিতু ছুটে এসে আমাকে দু’পাশ থেকে জাপটে ধরেছে । এই হৃদয়-ছোঁয়া ভালোবাসা আর সন্মান আমার জন্যে পরম পাওয়া হয়ে থাকলো আজীবন । কাল রাতে ঘুমিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত এসব ভেবে কী যে ভালো লাগছিল আমার, বলে কাউকে বুঝাতে পারবো না । ভালোলাগার আরো দু’টি অনুষঙ্গ ছিল । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকে বিগত প্রায় দেড় বৎসরে যশোর গেছি আমি মাত্র দুইবার ।  সামনে ঊনত্রিশে ডিসেম্বর ।

ঊনত্রিশে ডিসেম্বরের কথা আমার মনে আছে । আব্বুকে আমার প্রতিশ্রুতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে হবে আরো একবার। বিষয়টি আমাদের পারিবারিক কালচারে যার কাছে যত নির্মমই ঠেকুক না কেন, আমার কাছে তা গৌরবের । পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াবার চেষ্টায় স্বহস্তে তৈরী করা এ যে আমার প্রথম সোপান ! ঘুম ভেঙে প্রসন্নতা অনুভব করার আরো যে একটি কারণ, সেটাকে বলা
যায় সম্পূর্ণ অযথা অথবা অকারণ । অনেক সময় এরকম হয়না যে, হঠাৎকরে কিছু বা কাউকে মনেপড়ে গেল এবং সেইটা নিয়ে মন তখন ব্যস্ত পড়লো ? ঘুমভেঙে বেশুমার ভাবনার মাঝে সিগারেটখোর আবীরকে সে ভাবেই আমার মনে পড়লো । ঠিক ওকে নয় ; ওর বিষন্ন আর উদাস মুখখানার ছবি মনে ভেসে উঠলো । অনেকদিন থেকেই মনেহচ্ছিলো ব্যতিক্রম-মার্কা এই ছেলেটা সম্পর্কে আরো জানতে হবে।একদিন কথা বলতে হবে ; কিন্তু এই কথা আর বলা হয়ে ওঠেনা কিছুতেই ।

প্রত্যেকদিনই ব্যস্ততা থাকে । ক্লাস, ল্যাব, কুইজ, টিউটিরিয়াল – গ্রুপ ডিসকাশন আর আমার টু-ইন-ওয়ান টিউশনি । সময় হয়ে ওঠেনা আবীরের সঙ্গে কথা বলার। আজ দেখা করা যায় । সম্ভব । আজ ক্লাস নেই । আনুসাঙ্গিক ঝামেলা নেই, শুধু রিকভারি ল্যাব ছাড়া । আর ল্যাবের সামনেই তো — রাস্তার ওপাশে পুকুর পাড়ের আঘাটা ছায়ায় বসে ভর দুপুরবেলা দুনিয়া ভুলে সে রোজই সিগাররেট খায় ! কেমনকরে যেন সিদ্ধান্তটি নিয়েই ফেললাম, আজ দুপুরে আবীরের সাথে দেখা করবো। বের হবার আগে একটু সাজুগুজু করার জন্যে আয়নার সামনে বসেছিলাম । হালকা একটু মেকাপ নিলে ভালো লাগবে । কিন্তু সহসা মনে একটা প্রশ্নের উদয় হলো, কেন — সাজুগুজু করতে হবে কেন ? এ প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত উত্তর খুঁজে পেলাম না । অতএব সাজুগুজু বাদ। নিত্যদিন ক্লাসে যেভাবে যাই সেভাবেই সই । নিরাভরণ ; গায়ের ঘামে ভাঁজপড়া হালকা ঘিয়ে রঙের কামিজে দু’দিন আগে নেওয়া পারফিউমের গন্ধ, ঝাঁজালো  এক রকমের মাদকতা তৈরী করেছে, আমি পাতলা সেমিজের উপর ওই কামিজটাই গায়ে ঢুকালাম, সাথে দু’দিনের পরা কালো
সালোওয়ার পরে নিলাম । একদম আটপৌরে — নরম ত্যানা ত্যানা ভূষণ । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিলাম । হরহামেশাই তো দেখি ।

আজ অন্যের চোখে দেখার চেষ্টা করছিলাম। দেখে হেসে ফেললাম। কন্ডিশনিং শ্যাম্পুকরা সিল্কি মাথার চুল আমার, কোমর পর্যন্ত ঝুলে আছে, শরীর দোলায় দোল খাচ্ছে । ছোট্ট ফর্সা কপোল । নিচে জোড়া-ভ্রু, তার নিচে টলটলে গভীর কালো চোখদুটি দেখে একটা কথা বিশ্বাস করতে মন চাইছে আমার, আমি সত্যিই সুন্দরী ।যদিও শীতকাল, দুপুরবেলা হোষ্টেল থেকে ল্যাব-পুকুরপাড় পর্যন্ত ক্যাম্পাসের অনেকখানি পথ রোদের মধ্যে হেঁটে যেতে হবে, গা ঘেমে যাবে । ঘামে কামিজ শরীরের ভাঁজে ভাঁজে বসে যাবে ।নাকের উপরে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জল হয়তো মুখশ্রীর আবেদন আরো বাড়িয়ে দেবে, হয়তো এর সবকিছুই আবীর চোরা চোখে দেখতে থাকবে ….কী বিশ্রী অবস্হা ! লজ্জা লজ্জা লাগছিল আমার । এমনিসব আজে-বাজে চিন্তা করতে করতে আমি এক সময় পুকুরপাড়ে এক্কেবারে আবীরের পিঠের কাছে পৌঁছে গেলাম । সে বুঝতে পারলো না । ধ্যানে মজে আছে।তার হাতে এখন সিগারেট নেই । আমি টের পেলাম আমার বুকের মধ্যে ঘড়ির কাঁটার মতো শব্দ হচ্ছে ।বলে ফেললাম, এখানে একটু বসতে পারি ? ঠান্ডা কন্ঠে কড়া উত্তর এলো, না । হকচকিয়ে গেলাম ।  বেঞ্চের এই পাশটা পুরোটাই খালি । তবুও এরকম কাষ্ঠ ব্যবহার, আশা করিনি। বললাম, এটা কেমন কথা । এইটা কোন ভদ্রতা হলো ? সে আবার বললো, এবার ভদ্রতাকরে বলছি, ডিসটার্ব করবেন না । আপনি অন্যকোথাও অন্যকাউকে খুঁজে নিলে খুশি হবো । খারাপ কথা । খানিকটা অপমানও।চরম রাগ হলো আমার । ধৈর্য্য ধরলাম । ঠাসকরে তবু বেঞ্চের এক কর্ণারে গুছিয়ে বসলাম।

ঝগড়া করার মানসে বললাম, প্লিজ শব্দটি ভদ্রতার মধ্যে পড়ে । আপনি সেটাও অনুসরন করলেন না । আপনার ব্যবহার এমন কেন ? ছেলেটি উত্তর দিলনা । ফিরেও তাকালো না আমার দিকে । কিছুক্ষণ পর আমিই আবার হেসে বললাম, এনিওয়ে, আপনি বোধহয় আজো ভালো নেই । আজ সিগারেট খেলেন না যে ? চুপচাপ, বীতশ্রদ্ধ ভাব তার মুখে । অন্যদিকে তাকিয়ে আছে । এতক্ষণ সে কিন্তু আমার দিকে একবারও তাকায়নি । অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছে । ইচ্ছে করে সে এমন করছে । বললাম, আপনাকে আমি সঙ্গ দিতে আসিনি । এবার ছ্যাঁৎকরে সে জ্বলে উঠলো, তাহলে কি জন্যে এসেছেন ? আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলবো বলে এসেছি । আমার কথা শুনে রেগে গেল আবীর । বিরক্ত হয়ে বলল, কেন — কারনটা কি, আমি কি চিড়িয়া ?

আমিও রেগে গেলাম, আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন, আর আমার দিকে না তাকিয়ে কথা বলছেন কেন, আপনার সমস্যা কি ? সে নিরুত্তর । মাথা নিচু করে রইল । মনেহলো,ধমকে কাজ হয়েছে । শুনেছি, বেয়াড়া ছেলেরা সুন্দরী মেয়েদের ধমকে কেঁচো হয়ে যায় । হয়তো কথাটা সত্যি । সে চকিতে আমার দিকে তাকালো । কিন্তু সে ঐ এক পলক । আমি তখন মিটিমিটি হাসছিলাম । তার চোখে লেগে থাকা ওই এক পলক দৃষ্টি মুগ্ধতায় পরিনত হওয়ার আগেই তার দৃষ্টি অন্যত্র সরে গেল ।

আবীরকে বোকা বোকা ও গম্ভীর মনেহচ্ছিলো ।এইবার আমি বললাম, সরি আবীর ভাই, আপনাকে ডিসটার্ব করার জন্যে । আমি দু:খিত । আবীর আমার মুখের দিকে তাকালো । হয়তো আমার মুখে তার নিজের নাম শুনে আশ্চর্য্য হয়েছে । হয়তো আরো কিছু ভাবলো । তারপর বললো, ইট’স ও কে । আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, ওয়েল কাম । বিকামস ইউ পারফেক্ট । এখন খুব ভাল্লাগছে ভাই । আবীর পুকুরের শান্ত পানির দিকে তাকিয়ে রইল । আমি বললাম, প্রতিদিন ল্যাবের ওই বারন্দা থেকে আমি আপনার সিগারেট খাওয়ার দৃশ্যটি দেখি ।

আপনার হাতের সিগারেট শেষ হয়, আপনি বসে তবু কিছুক্ষণ ঝিমুতে থাকেন, তারপর মাথা ঝুলিয়ে আরো কিছুক্ষণ বসে থাকেন । তারপর রাস্তায় নেমে আসেন; রোজ একই দৃশ্য । মনেহয়, নেভার ইউ ওযান্ট টু বি ডিফিটেড । আপনার সঙ্গে পরিচিত হবার খুব ইচ্ছে ছিল আমার । আমি আশ্চর্য্য হয়ে লক্ষ করলাম,আমার এতগুলো কথা আবীর কানেই তুললো না । কোন প্রতিক্রিয়াই সে ব্যক্ত করলো না । হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাতি-ব্যস্ত হয়ে বললো, আমার একটু তাড়া আছে । আপনার সাথে আমি আর একদিন কথা বলবো । সরি, আজ আমাকে যেতে হচ্ছে । চলি । বলে সে চলে গেল । এমন ভাবে গেল যেন পালালো । ওহ্ গড ! এমন অদ্ভুত লোক আমি আমার জীবনে দেখিনি । কিন্তু আমার আকর্ষণটা বেড়ে গেল । এক রকমের জ্বিদও বলা যায় তাকে । আমি বোকা বনে সেই বেঞ্চেই বসে রইলাম । অনেক্ষণ । এক সময় মনে মনে বললাম, বাছাধন, তুমি তো দেখি আগুনে পোড়া কাঠ। কয়লা । তোমাকে ধরতে হবে চিমটি দিয়ে ।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580