শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
দৈনিক আজকের সংবাদ পত্রিকার সংবাদ পড়তে এখন থেকে আমাদের নতুন ওয়েবসাইট www.dailyajkersangbad.com ভিজিট করুন। টাংগাইল বন বিভাগের দোখলা সদর বন বীটে সুফল প্রকল্পে হরিলুট আগ্রাবাদ ফরেস্ট কলোনী বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলেন মোজাম্মেল হক শাহ চৌধুরী ফৌজদারহাট বিট কাম চেক স্টেশন এর নির্মানাধীন অফিসের চলমান কাজ পরিদর্শন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে: শেখ সেলিম সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র চলছে সীমাহীন অনিয়ম এলজিইডির কুমিল্লা জেলা প্রকল্পের পিডি শরীফ হোসেনের অনিয়ম যুবলীগে পদ পেতে উপঢৌকন দিতে হবে না: পরশ নির্বাচন যুদ্ধক্ষেত্র নয়, পেশি শক্তির মানসিকতা পরিহার করতে হবে: সিইসি

শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনবীর বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল

নিউজ ডেক্স:
  • প্রকাশিত সময় : শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০২০
  • ৭৯৩ পাঠক পড়েছে

রাসুলুল্লাহ (সা.) শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণের মূর্ত প্রতীক ছিলেন। তিনি মানুষকে সরল, সঠিক ও শান্তির পথে পরিচালিত করেছেন, যেন তারা ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি লাভ করে সফল হতে পারে। তাঁকে শান্তি ও কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত হিসেবে আখ্যায়িত করে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭) তাঁর শান্তিভাবনা ও কর্মপদ্ধতির নমুনা উপস্থাপিত হলো—

শান্তিভাবনা : ইসলামপূর্ব আরবে গোত্রতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এই শাসনব্যবস্থার বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাবে তাদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকত। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য কিশোর মুহাম্মদ (সা.) ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি শান্তিসংঘ গঠনে যোগদান করেন। সবার সঙ্গে তিনিও দায়িত্ব পালনে চুক্তিবদ্ধ হন। নবুয়ত-পরবর্তী জীবনে তিনি এই চুক্তির কথা স্মরণ করে বলতেন, ‘এই চুক্তির বিনিময়ে কেউ যদি আমাকে লাল রঙের উট দিতে সম্মত হতো, তবু আমি চুক্তি পরিহার করতাম না।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৩৭৩; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৬৫৫)

শান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল : কাবাগৃহ কয়েকবার পুনর্নির্মাণ করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়ত লাভের পাঁচ বছর আগে তৃতীয়বারের মতো কাবাগৃহ নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দেয়। কুরাইশ গোত্রের লোকজন তাদের হালাল সম্পদের মাধ্যমে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। নির্মাণ শেষে ‘হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপন নিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার উপক্রম হয়। কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া চার-পাঁচ দিন কেটে যায়। তখন কুরাইশ গোত্রের বয়োজ্যেষ্ঠ ও প্রবীণ নেতা আবু উমাইয়াহ ইবনে মুগিরা মাখজুমি প্রস্তাব দেন, আগামীকাল প্রভাতে যিনি সর্বপ্রথম মসজিদুল হারামের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন, তিনিই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। সবাই এ প্রস্তাবে সম্মত হয়। অধীর অপেক্ষা শেষে দেখা যায়, মুহাম্মদ (সা.) কাবাগৃহে সবার আগে প্রবেশ করেছেন। সবাই সমস্বরে বলে ওঠে, মুহাম্মদ! আমাদের আল-আমিন, আমরা সবাই তাঁর সিদ্ধান্ত মানতে প্রস্তুত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলে একটি চাদর আনতে বলেন। নিজ হাতে তার ওপর ‘হাজরে আসওয়াদ’ রেখে চার গোত্রের চারজনকে দিয়ে সেটি বহন করিয়ে যথাস্থানে স্থাপন করেন। এভাবে উদ্ভূত যুদ্ধাবস্থার অবসান হয়ে শান্তি স্থাপিত হয়। [মুহাম্মদ ইদরিস কান্ধালভি, সিরাতুল মুসতাফা, ১ম খণ্ড (দেওবন্দ : দারুল কিতাব, তা. বি.), পৃ. ১১৩-১১৬)]

শান্তির সনদ : রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর সেখানে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মের অনেকে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করলেও অনেকে বিদ্বেষের পথ অবলম্বন করে। হিজরতের পাঁচ মাস পর মদিনা রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এবং পারস্পরিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় বসবাসকারী অমুসলিমদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত। এই চুক্তির মাধ্যমে সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা লাভ করে, পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সুনিশ্চিত হয়, অন্যের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক অরাজকতা দূর হয় এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। যত দিন তারা এই চুক্তি রক্ষা করেছে, তত দিন তাদের সঙ্গে মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ বহাল থেকেছে। আল্লাহ বলেন, ‘দ্বিনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : মুমতাহিনাহ, আয়াত : ৮)

সন্ধির মাধ্যমে শান্তি প্রত্যাশা : শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনবদ্য ভূমিকার অনন্য স্মারক হুদাইবিয়ার সন্ধি। বাহ্যিকভাবে পরাজয়মূলক হওয়া সত্ত্বেও শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে তিনি এই সন্ধিতে স্বাক্ষর করেন। হিজরতের ছয় বছরের মাথায় রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বপ্নযোগে নিজেকে ওমরাহ পালন করতে দেখেন। প্রস্তুতির পর তিনি প্রায় চার হাজার ৪০০ সাহাবি নিয়ে ওমরাহ পালনের জন্য রওনা হন। মক্কার অদূরে হুদাইবিয়া নামক স্থানে পৌঁছলে কুরাইশরা তাঁদের আটকে দেয়। এদিকে সাহাবিরা কুরাইশদের অন্যায় আস্ফাালনের জবাব দিতে রাসুল (সা.)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন। অবশেষে কুরাইশদের পক্ষ থেকে সন্ধি প্রস্তাব এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) কুরাইশদের সঙ্গে এক অসম চুক্তিতে উপনীত হলেন। তিনি তা করেছিলেন শুধুই শান্তির প্রত্যাশায়, যা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রমাণিত হয়েছিল। পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতহে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী ইসলামের শান্তিবার্তা : হুদাইবিয়ার সন্ধির পর রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলামের দাওয়াত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন রাজা-বাদশাহর কাছে ইসলামের দাওয়াতসংবলিত চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এসব চিঠি পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপী এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যে ইসলাম শুধু আরবদের ধর্ম নয়, বরং ইসলাম সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য এবং বিশ্বমানবতার মুক্তি ও শান্তির জন্য। তাঁর চিঠির মূল কথা ছিল, ‘ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকুন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৭৮২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।

মক্কা বিজয়ের পর শান্তি ঘোষণা : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শান্তিপূর্ণ ‘মক্কা বিজয়’ ইতিহাসের এক চমকপ্রদ অধ্যায়। তিনি বিনা যুদ্ধে ও বিনা রক্তপাতে মক্কা জয় করেন। যেসব জাতি অত্যাচার-নির্যাতন ও যুদ্ধ করে আজীবন রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে, সেসব জাতি ও গোত্রকে মক্কা বিজয়ের দিন সাধারণ ক্ষমা করে এবং তাদের প্রতি উদার মনোভাব দেখিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তা-ই বলব, যা আমার ভাই ইউসুফ (আ.) বলেছেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (নাসাঈ আল-কুবরা, হাদিস : ১১২৯৮)

শান্তির বার্তাসংবলিত ভাষণ : বিদায় হজের ভাষণ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পুরো জীবনের সারকথা। সেখানে তিনি উপস্থিত সবাইকে শান্তির চূড়ান্ত বার্তা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁর ভাষণের প্রতিটি শব্দই ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠার কৌশল। যেমন তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ এবং তোমাদের সম্ভ্রম পরস্পরের জন্য আজকের এই দিন, এই মাস এবং এই শহরের মতো পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৭)

পরিশেষে বলা যায়, মানবজীবনে মূলত অশান্তি সৃষ্টি হয় হতাশা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক সহিংসতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, ধর্মীয় বিদ্বেষ, উগ্র জাতীয়তাবাদ, সন্ত্রাস, অবিচার, জুলুম, দুঃশাসন, প্রতিশোধ স্পৃহা, আদর্শ নেতৃত্ব সংকট ইত্যাদির কারণে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সব কিছুর মূলোৎপাটন করে ভারসাম্য, ইনসাফপূর্ণ, সহনশীল, সংযত এবং আখিরাতমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীকে শান্তির আবাসনে রূপান্তর করেছেন। তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নেই রয়েছে পৃথিবীবাসীর শান্তি, নিরাপত্তা ও সফলতা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2020 । দৈনিক আজকের সংবাদ
Design and Developed by ThemesBazar.Com
SheraWeb.Com_2580